চেন্নাইয়ান এফ সি–২ ইস্ট বেঙ্গল–০
(কারিকারি, রহিম আলি)
গত শতাব্দীর আশির দশকে পুর্নেন্দু পত্রীর কবিতার একটি লাইন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। লাইনটি ছিল আজ আবার গাভাসকরের সেঞ্চুরি। সেই কবিতার লাইনটি অনুসরণ করে এবারের আই এস এল-এ ইস্ট বেঙ্গলের ম্যাচগুলোর শুরুতে অনায়াসেই লিখে ফেলা যায়, আজ আবার ইস্ট বেঙ্গলের হার। এই নিয়ে আঠেরোটা ম্যাচ খেলা হয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গলের। এই নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল হারল এক ডজন ম্যাচে। ইস্ট বেঙ্গলের কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের সঙ্গে আরও দু বছরের চুক্তি বাড়ানো হয়েছে। এবং তিনি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সামনের বছর ইস্ট বেঙ্গল প্রথম ছয়ে থাকবে। আর তার পরের বছর প্রথম চারে। সুদূরবিদারী কল্পনা। তার মধ্যে যে এ বছরের পাফরফরম্যান্সের দফারফা হয়ে যাচ্ছে তার খেসারত কে দেবে? অতএব রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের নেহরু স্টেডিয়ামে চেন্নাইয়ান এফ সি-র কাছে জোড়া গোলে হারল ইস্ট বেঙ্গল। বিরতির পর গোল দুটি করলেন ঘানার স্ট্রাইকার খোয়াম কারিকারি এবং ইছাপুরের বঙ্গসন্তান রহিম আলি। ম্যাচের সেরা চেন্নাইয়ের অধিনায়ক অনিরুধ থাপা। এই ম্যাচের পর নয় নম্বরেই থাকল ইস্ট বেঙ্গল। আঠেরো ম্যাচে তাদের পয়েন্ট হল ১৬। একেবারেই ইস্ট বেঙ্গলের মতো নয়।
ম্যাচের সিংহভাগ দখল ছিল চেন্নাইয়ের। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলও গোল করার সুযোগ পেয়েছিল। সেই সুযোগ দুটো নষ্ট করেন ভি পি সুহের এবং জাক জার্ভিস। দুটো সুযোগই প্রথমার্দ্ধের মাঝামাঝি। তখনও চেন্নাই গোল করতে পারেনি। দুটো সুযোগের একটা অন্তত গোল হলে ম্যাচের চেহারা বদলে গেলেও যেতে পারত। কিন্তু যা হয়নি, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যা হয়েছে তাই বলা যাক। এই টিমটার সবচেয়ে বড় দোষ টিমে কোনও নেতা নেই। ক্লেটন সিলভা যতই এক ডজন গোল করুন কিংবা জাক জার্ভিস যতই ব্যাক ভলিতে একটা চমৎকার গোল করুন, এরা কেউ নেতা নন। মাঝ মাঠেও টিমকে যে ক্যারি করবেন সে রকম ফুটবলার নেই। ডিফেন্সও তথৈবচ। টিম জিতবে কী করে? গোলকিপার কমলজিৎ সিং যে এত গোল খেয়েছেন তাতে তাঁর গোলকিপিংয়ে অরুচি ধরে যাওয়ার কথা। উল্টো দিকে আট নম্বরে থাকা চেন্নাই ঘরের মাঠে প্রথম থেকেই টুঁতি চেপে ধরেছিল ইস্ট বেঙ্গলের। ডান দিক থেকে কারিকারি এবং বাঁ দিক থেকে ভিন্সি ব্যারেটো একটার পর একটা আক্রমণে ফালাফালা করে দিচ্ছিলেন লাল হলুদ ডিফেন্সকে। কিন্তু গোলের সুযোগগুলো তারা কাজে লাগাতে পারছিলেন না। মাঝ মাঠে আনিরুধ থাপা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বল বাড়াচ্ছিলেন। সেই পুরস্কারটা তাঁর দল পেল বিরতির পর।
৪৮ মিনিটে একটা ফ্রি কিক থেকে বল গেল অনিরুধের কাছে। চমৎকার সেন্টারটা তিনি রাখলেন কারিকারির মাথায়। তাঁর সঙ্গে লেগে ছিলেন চুংগুন লাল। কিন্তু কারিকারিকে গোল করা থেকে তিনি আটকাতে পারেননি। হেড করে গোল করলেন ঘানার স্ট্রাইকার। একটু পরেই নামলেন রহিম আলি। চেন্নাইয়ে বাঙালি প্লেয়ার অনেক। গোলকিপার শমীক সেন, ডিফেন্ডার নারায়ণ দাস তো আছেনই। শমীক এদিন খুবই ভাল খেললেন। নারায়ণ নামলেন ৭৭ মিনিটে। কিন্তু গোল করলেন রহিম। একটা থ্রূ পাস ধরে গোলকিপারকে কাটিয়ে চমৎকার একটা প্লেসিংয়ে গোল করে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলেন তিনি। তখন ম্যাচের বয়স ৮৮ মিনিট। ওখান থেকে আর খেলা ঘোরানো যায় না। বিশেষ করে এই ইস্ট বেঙ্গল টিমের পক্ষে। তাদের বিদেশিরা এদিন সুপার ফ্লপ। সেন্টার ব্যাক কিরিয়াকু এবং মিডফিল্ডার জর্ডন ডোহার্টি ডাহা ফেল। প্রথম দিকে বেশ ভাল খেলছিলেন মহেশ সিং। এখন তিনিও খরচের খাতায়। আর ভি পি সুহের তো না হোমে না যজ্ঞে। টিম জিতবে কী করে?