ইস্ট বেঙ্গল–২ বেঙ্গালুরু এফ সি–১
(ক্লেটন সিলভা-২) (জাভি হার্নান্ডেজ)
মাঠে ঢোকার মুখে ফুটবল সম্রাট পেলের ছবিতে ফুল এবং মালা দিয়ে হৃদয়ের শ্রদ্ধা জানিয়ে বেঙ্গালুরু এফ সি-র বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ইস্ট বেঙ্গল। বিরতির আগে যখন তারা ক্লেটন সিলভার পেনাল্টি গোলে এগিয়ে গেল তখন মনে হচ্ছিল বিরতির পর গোলের ব্যবধান বাড়াবে লাল হলুদ। কিন্তু দেখা গেল বিপরীত চিত্র। রয় কৃষ্ণদের দাপটে তখন লাল হলুদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ৫৫ মিনিটে গোল শোধের পর মাঠে শুধুই সবুজ রং, যা শুক্র সন্ধ্যায় ছিল বেঙ্গালুরুর জার্সির রং। এই সময় ইস্ট বেঙ্গলের নতুন গোলকিপার শুভম সেনের অনবদ্য গোলকিপিংয়ের জন্য গোল খেল না স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের দল। কিন্তু কপালে জয় থাকলে আটকাবে কে ? যে ক্লেটনকে বিরতির পর খুঁজেই পাওয়া গেল না, সেই ক্লেটনই সংযুক্ত সময়ে দুর্দান্ত একটি ফ্রি কিকে গোল করে দলের তিন পয়েন্ট এনে দিলেন। এবং এভাবেই ঘরের মাঠে একটার পর একটা ম্যাচ হারতে হারতে বছরের শেষ ম্যাচে জিতে গেল ইস্ট বেঙ্গল। জোড়া গোল করার পর ক্লেটনকে ম্যাচের সেরা বাছা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। গত বছর তিনি ছিলেন বেঙ্গালুরুতে। এ বছর তাদের বিরুদ্ধে দুটো ম্যাচেই গোল করলেন। এবং জেতালেন টিমকে। সব মিলিয়ে এগারো ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল পয়েন্ট টেবলে উঠৈ এল আট নম্বরে। বারো ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে বেঙ্গালুরু নেমে গেল নয়ে।
ইস্ট বেঙ্গল কোচ এদিন প্রথম একাদশে তিনটি পরিবর্তন করেন। গোলে দিনের পর দিন বাজে খেলছিলেন কমলজিৎ সিং। তাঁর বদলে নামানো হয় শুভম সেনকে। দীর্ঘকায় গোলকিপার বেশ ভাল খেললেন। ধরে নেওয়া যেতেই পারে এখন বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলবেন শুভম। মাঝ মাঠে চার্লস কিরিয়াকুর বদলে অজি মিডফিল্ডার জডর্ন ডোহার্টি এবং আপ ফ্রন্টে সেমবই হাওকিপের বদলে মোবাশির। সব মিলিয়ে তিনটি পরিবর্তনই বেশ কাজে দিয়েছে। কিন্তু হতাশ করেছেন ইস্ট বেঙ্গলের আরেক বিদেশি আ্যালেক্স লিমা। জানুয়ারি উইন্ডোতে নতুন বিদেশি দলে নিতে পারবে ইস্ট বেঙ্গল। আরেক ব্রাজিলিয়ান এলিয়ান্দ্রোর বিদায় তো নিশ্চিতই হয়ে গেছে। লিমাকে রাখারও কোনও কারণ নেই। তাঁর বদলিরও প্রয়োজন। সেন্টার ব্যাক ইভান গঞ্জালেস যদিও ইস্ট বেঙ্গলের গোল খাওয়ার পিছনে দায়ী। কারণ রয় কৃষ্ণের গতির কাছে হার মানতে হয়েছে তাঁকে। রয়ের চমৎকার ব্যাক সেন্টার থেকে গোল করে সমতা ফেরান জাভি হার্নান্ডেজ। তবে এই ভুলটা ছাড়া বাকি সময় বেশ বিশ্বস্ত ছিলেন গঞ্জালেস। তাঁর পাশে লালচুঙ্গাকে আগামি তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে ইস্ট বেঙ্গল। সঠিক কাজ। প্রতি ম্যাচেই লাল উন্নতি করছেন। শোনা যাচ্ছে লেফট ব্যাক জেরি এবং লেফট হাফ মহেশ নাওরম সিংয়ের চুক্তি বাড়ানোর কথা ভাবছে ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু বিদেশিদের দৈন্যদশা না কাটলে প্রথম ছয়ের মধ্যে কি থাকা যাবে? মন হয় না।
বেঙ্গালুরুর আর সেদিন নেই। আসলে সুনীল ছেত্রী এখন অতীতের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। প্রথম একাদশে তাঁর জায়গা হওয়া উচিত নয়। রয় কৃষ্ণ এদিন গোল না পেলেও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। গোলটা তো তাঁর জন্যই হয়েছে। আপ ফ্রন্টে জাভি মন্দ নন। কিন্তু বাকি দুই বিদেশি অচল। সন্দেশ ঝিঙ্গন এবং গুরপ্রীত সিং বহু দিন খেলছেন আই এস এল-এ। কিন্তু তাঁরাও তো তাদের সেরা সময় পেরিয়ে এসেছেন অনেক দিন। গুরপ্রীত ভারতের জাতীয় দলের এক নম্বর গোলকিপার। কিন্তু এখন তাঁর ফর্ম পড়তির দিকে। ক্লেটন সিলভার ফ্রি কিকের প্রশংসা করেও বলব, আগের গুরপ্রীত হলে ওই গোল বাঁচিয়ে দিতেন। এই তো বেঙ্গালুরুর অবস্থা। তাদেরকে তাদের মাঠে হারিয়ে দিয়ে এসেছিল ইস্ট বেঙ্গল। এখানেও জিতল। তবে তার জন্য অনেক ঘাম ঝড়াতে হল। ম্যাচের ৪০ মিনিটে প্রথম গোল করে ইস্ট বেঙ্গল। ডান দিক দিয়ে সুহের বল নিয়ে গোল লাইনের কাছে চলে গিয়েছিলেন। বলটা সেন্টার করার সময় তা মিডফিল্ডার সুরেশ সিংয়ের ডান হাতে লাগে। পেনাল্টি থেকে গুরপ্রীতকে উল্টো দিকে ফেলে দিয়ে গোল করেন ক্লেটন। বেঙ্গালুরু গোলটা শোধ করে ৫৫ মিনিটে। রয় কৃষ্ণের ব্যাক সেন্টার থেকে বাঁ পায়ের ছোট্ট তোকায় গোল করে যান জাভি। এর পর অনেক আক্রমণ করেও বেঙ্গালুরু গোল করতে পারেনি। শেষে সংযুক্ত সময়ে ফ্রি কিক থেকে গোল করে ঘরের মাঠে ইস্ট বেঙ্গলের প্রথম জয় এনে দিলেন অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা। নতুন বছরের আগে বর্ষশেষের উৎসবটা ইস্ট বেঙ্গলের ভালই কাটবে। তাদের পরের ম্যাচ ৭ জানুয়ারি ওড়িশা এফ সির বিরুদ্ধে তাদের মাঠে।