কলকাতা: রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আগামিদিনে আর কোনও বিতর্ক থাকবে না বলে দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Education Minister Bratya Basu)। মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের (Governor CV Ananda Bose) সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর ব্রাত্য বলেন, এবার থেকে রাজভবন, নবান্ন এবং বিকাশভবন সমন্বয় করে কাজ করবে। আজকের বৈঠকের মূল নির্যাস, বিরোধ নয়, সমন্বয়। তিনি বারবার রাজ্যপালকে আচার্য বলেও সম্বোধন করেন। শিক্ষমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে আচার্যের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করা হবে। রাজভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রাজ্যপালকে পাশে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠক সারেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজ্যপাল বলেন, শিক্ষাই বাংলার নতুন প্রজন্মের ভিত্তি। তাই শিক্ষার উন্নতিকল্পে যা যা করণীয়, তাই আমি করব। বাংলার শিক্ষায় নবজাগরণ আসবে বলেও দাবি করেন রাজ্যপাল।
এদিন রাজ্যপাল ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও ডেকে ছিলেন। রাজ্যপাল বলেন, বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। ব্রাত্যর দাবি, এই বৈঠক ঐতিহাসিক। এর আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিযয়ে তৃণমূল সরকারের সংঘাত চরমে উঠেছিল। এর মধ্যে শিক্ষা নিয়ে রাজভাবন ও নবান্নের সংঘাত ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল ধনখড় বহুবার উপাচার্যদের রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন বৈঠক করার জন্য। সংঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে, রাজ্য সরকার উপাচার্যদের রাজভবনে যেতে পর্যন্ত নিষেধ করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা মেনেই উপাচার্যরা ধনখড়ের ডাকা কোনও বৈঠকেই যোগ দেননি। এমনকী শিলিগুড়িতে গিয়েও রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠক ডেকে নিরাশ হয়েছেন। ধনখড়ের অভিযোগ ছিল, রাজ্য সরকার তাঁর সঙ্গে আলোচনা না করেই আইন বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেছে। শুধু তাই নয়, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেআইনিভাবে উপাচার্যদের পুনর্নিয়োগও দিয়েছে রাজ্য সরকার। তা নিয়ে আইন আদালতও হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই মামলা করায় আদালতে মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।
আরও পড়ুন:Rahul Gandhi: বরুণকে দেখলে জড়িয়ে ধরতে পারি, বলেও লক্ষ্মণগণ্ডি টানলেন দাদা রাহুল
এই আবহেই রাজ্য সরকার বিশবিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপাল কে সরানোর জন্য বিধানসভায় বিল পাশ করায়। সেই বিলও ধনখড়ের কাছে আটকে ছিল। একইভাবে উচ্চশিক্ষ সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের আরও অনেক সিদ্ধান্ত ধনখড় আটকে দেন। তা নিয়েও রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান ধনখড়। অবশেষে উপরাষ্ট্রপতি হয়ে ধনখড় দিল্লি চলে যাওয়ায় রাজ্য স্বস্তি পেয়েছে। ২০১৯ সালে ধনখড় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের শুরু। বর্তামান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই উল্টো। প্রথম থেকেই বোসের প্রতি তৃণমূল সরকার নরম মনোভাব দেখায়। রাজ্যপালের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘অত্যন্ত ভালো লোক’ বলে দরাজ সার্টিফিকেট দেন। তিনি বলেন, এই রাজ্যপালের সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধে হবে না। এদিনের বৈঠকের পর রাজ্য সরকার মনে করছে, শিক্ষার ইস্যুতে এবার জটিলতা কেটে যাবে। কোনও রাখঢাক না করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সেই বিষয়টিই পরিষ্কার করে দিয়েছেন।