আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে বাংলার (Bengal) মুখোমুখি সৌরাষ্ট্র (Saurashtra)। ৩৩ বছর পর রঞ্জি জয়ের হাতছানি বাংলার সামনে। ৩ বছর আগে এই সৌরাষ্ট্রের কাছেই হারতে হয়েছিল বাংলাকে। তাই কোথাও গিয়ে এই রঞ্জি ফাইনালকে অনেকে বদলার ম্যাচ হিসেবেও দেখেছেন। বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্র মহারণ নিয়ে কী ভাবছেন ১৯৮৯-৯০-এর রঞ্জি জয়ের অন্যতম নায়ক এবং বাংলার প্রাক্তন কোচ অরুণ লাল (Arun Lal)? রঞ্জি ফাইনাল প্রসঙ্গ নিয়ে কলকাতা টিভির প্রতিনিধি জয়জ্যোতি ঘোষের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অন্য মেজাজে ধরা দিলেন অরুণ লাল। বলা যেতে পারে প্রশ্নকর্তার প্রতিটি ডেলিভারি ফ্রন্টফুটে সামলালেন…
জয়জ্যোতি: ২০১৯-২০ এর পর আরও একবার রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে বাংলা। শেষবার বাংলা ফাইনালে ওঠার সময় আপনি কোচ ছিলেন। এবারে কী প্রত্যাশা বাংলাকে নিয়ে?
অরুণ লাল: প্রত্যাশা অনেক। গতবারও আমাদের দল তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। তবে এবারে সবকিছু ঠিকঠাক হবে আশা রাখছি। সিনিয়র এবং তরুণ ক্রিকেটারের দারুণ মিশেল রয়েছে এই দলে। যে মানের তরুণ ক্রিকেটার রয়েছে বাংলা দলে, তাতে আগামী পাঁচ বছরে দু’বার রঞ্জি ট্রফি জেতা উচিত।
জয়জ্যোতি: এই দলের ইউএসপি…কোথায় আলাদা এই বাংলা দল বাকি দলগুলির থেকে?
অরুণ লাল: সেরা বোলিং সাইড…কোনও কথা হবে না। যেভাবে বোলিং করছেন আকাশদীপ, মুকেশ কুমার, ঈশান পোড়েল, প্রদীপ্ত প্রামানিকরা তা এককথায় অনবদ্য। তবে আমি মনে করি বাংলা দলে তুরুপের তাস শাহবাজ আহমেদ। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিনটি ক্ষেত্রেই সাবলীল শাহবাজ। আপনি 3D পারফরম্যান্স আশা করতেই পারেন শাহবাজের থেকে(হাসি)।
জয়জ্যোতি: অনুষ্টুপ মজুমদারও কিন্তু বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাচ্ছেন…
অরুণ লাল: একদম সহমত। একবার শুধু চিন্তা করুন এই বয়সেও বাংলা দলের প্রতি অনুষ্টুপের দায়বদ্ধতা। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে এই রঞ্জি মরশুমে। আমি নিশ্চিত ফাইনালেও ইডেনকে রাঙাবে অনুষ্টুপের ব্যাট। তবে অনুষ্টুপের সঙ্গে আমি আরেকজন ক্রিকেটারের নাম নেব- সুদীপ ঘরামি। কী দারুণ ব্যাটিংটাই না করছে! সেমিফাইনালে কোনও তরুণ ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে এ ধরণের ইনিংস বহু বছর দেখিনি।
জয়জ্যোতি: সুদীপ ঘরামি, অভিষেক পোড়েল, প্রদীপ্ত প্রামানিকদের একদম কাছ থেকে দেখেছেন…
অরুণ লাল: সেইজন্যই তো বলছি আগামী পাঁচ বছরে সব ট্রফি জিতবে বাংলা। রঞ্জি ট্রফি, ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি সব জেতা উচিত। এই দলের ‘বেঞ্চস্ট্রেংথ’ সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহল। করণ লাল, সুদীপ, প্রদীপ্ত, ঋত্ত্বিক, অভিমন্যু-এরা প্রত্যেকে দুর্দান্ত। দলের মধ্যে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই অলরাউন্ডার। বাকি দলগুলিকে বেগ দিতে যথেষ্ট এই নতুন ‘টিম বাংলা’। আগে যেমন মুম্বইকে সবাই সমীহ করত, এখন সময় এসেছে বাংলাকে সমীহ করার।
জয়জ্যোতি: ১৯৮৯-৯০ তে আপনাদের যে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই দলের সঙ্গে বর্তমান দলের কোনও মিল খুঁজে পান…
অরুণ লাল: আমি তুলনায় যাব না। সেবার আমাদের ব্যাটিং ভীষণ ভালো ছিল। এবারের বোলিং দুর্দান্ত। আমরা পাঁচ বছরে সম্ভবত তিনবার ফাইনাল খেলেছিলাম। সেটাকে ছাপিয়ে যেতে পারে এই দল।
জয়জ্যোতি: এর আগে ক্রিকেটার এবং ক্যাপ্টেন লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে দেখেছেন। এবারে কোচ লক্ষ্মীকে দেখছেন। কীভাবে মূল্যায়ন করবেন কোচ লক্ষ্মীকে?
অরুণ লাল: অপূর্ব! প্রথমবার কোচিং করিয়েই বাংলাকে রঞ্জি ফাইনালে নিয়ে যাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আর বাংলা ক্রিকেটে লক্ষ্মীরতন শুক্লার অবদান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রতিটি ক্রিকেটারের মানসিকতা খুব ভালো মতো বোঝার ক্ষমতা রাখে। ক্রিকেটারেরা যাতে আত্মতুষ্টিতে না ভোগে সেটাও খেয়াল রাখে।
জয়জ্যোতি: অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে কিছু বলতে চাইবেন…
অরুণ লাল: বাংলা ক্রিকেটের কিংবদন্তি মনোজ তিওয়ারি। মনোজের জন্যই বাংলার রঞ্জি ট্রফি জেতা উচিত। বিশ্বকাপ জিতে শচীনকে যেমন ট্রফি উৎসর্গ করেছিল টিম ইন্ডিয়া, মনোজের ক্ষেত্রেও একই কথা বলব। মনোজ-লক্ষ্মী-সৌরভ-ঋদ্ধি এঁরা প্রত্যেকে বাংলা ক্রিকেটের জন্য প্রচুর অবদান রেখেছেন। মনোজ এখনও দুর্দান্ত খেলছে যা এককথায় অবিশ্বাস্য!
জয়জ্যোতি: এই বাংলা দলের দুর্বল দিক…
অরুণ লাল: ওপেনাররা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে না। ওপেনিং পার্টনারশিপ ভালো হওয়া খুব প্রয়োজন। আরেকটা জিনিস বাংলার লোয়ার অর্ডারও খুব বেশি রান করতে পারছে না। আশা করছি ফাইনালে সব ঠিকঠাক ক্লিক করবে।
জয়জ্যোতি: প্রতিপক্ষ সৌরাষ্ট্রকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অরুণ লাল: বেশ ভালো দল। যথেষ্ট ধারাবাহিকতাও দেখাচ্ছে। সৌরাষ্ট্রের লোয়ার অর্ডার রান করতে জানে। এটাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। প্রথম ৬ জন ব্যাটার দুটি দলেই প্রায় এক। আমরা যেবার সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফাইনালে হেরেছিলাম, সেবারও দেখুন সৌরাষ্ট্রের লোয়ার অর্ডার পারফর্ম করেছিল।
জয়জ্যোতি: রঞ্জি ফাইনালে কোন দলকে ফেবারিট মনে করছেন?
অরুণ লাল: আমার কাছে বাংলা ফেবারিট। যদি বাংলা প্রথমে ব্যাট করে এবং অভিমন্যু-মনোজরা প্রথম ইনিংসে বেশি রান তুলে দেয় সেক্ষেত্রে চাপে পড়ে যাবে সৌরাষ্ট্র। মনে হয় না বাংলা মোমেন্টাম হাতছাড়া করবে বলে। প্রার্থনা করছি ম্যাচের শেষ দিন যাতে মনোজের হাতে ট্রফি দেখতে পারি…