কাতার: যুগের অবসান। অবসান ফুটবলের একটা ঘরানার। বিশ্বকাপের মঞ্চে আর দেখা যাবে না সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে। এমনকী নীল-সাদা জার্সিতেই আর তাঁকে দেখা যাবে না। তাঁর বাঁ পায়ের জাদু দেখা যাবে শুধুমাত্র ক্লাব ফুটবলেই। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অভিযান শেষ, সেই সঙ্গে সাঙ্গ হল মেসির আন্তর্জাতিক ফুটবল কেরিয়ার। অধরা মাধুরী স্পর্শ করেই ক্ষান্ত হলেন তিনি।
২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে দেশের হয়ে অভিষেক হয় মেসির। তারপর থেকে ১৭টা বছর ধরে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মাঠে দৌড়েছেন তিনি। একার কাঁধে কত যে ম্যাচ জিতিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে মোট পাঁচটা বিশ্বকাপ হল তাঁর। ২০০৬ সাল থেকে শুরু। সার্বিয়া ও মন্টিনেগ্রোর বিরুদ্ধে ৭৫ মিনিটের মাথায় ম্যাক্সি রডরিগেজের পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন মেসি। ৮৮ মিনিটে করেছিলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর প্রথম গোল।
আরও পড়ুন: Qatar World Cup: মেসি, মারাদোনা এবং অমরত্ব…
২০১০ বিশ্বকাপটা একেবারেই ভাল যায়নি। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল আর্জেন্টিনা। পাঁচ ম্যাচ খেলে একটাও গোল পাননি। কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপ ছিল মেসি-ময়। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। করেছিলেন চারটি গোল এবং গোলের পাস দিয়েছিলেন একটি। সেই বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন মেসি। দুর্ভাগ্য, ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে যেতে হয়।
২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে একটিই গোল করেছিলেন লিও মেসি। কাতারে আরও পাঁচটি। এখন বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর নামের পাশে ১৩টা গোল। অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন দিয়েগো মারাদোনা এবং চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে।
তবে গোলের পরিসংখ্যান দিয়ে লিওনেল মেসিকে মাপা যায় না। তিনি রোনাল্ডো না যে শিকারি বিড়ালের মতো গোলের গন্ধে ছোঁক ছোঁক করবেন, সুযোগ পেলেই জালে জড়িয়ে দেবেন। মেসি একজন শিল্পী, তিনি গোল করেন যেমন, গোল করানও। তাঁর মতো পাসিং দক্ষতা বিশ্ব ফুটবলে খুব লোকের ছিল, আছে এবং থাকবে। রোনাল্ডোর খেলা রাতে না দেখতে পারলেও পরের দিন সকালে হাইলাইটস দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু মেসির জন্য রাত জাগতেই হবে। কখনও ড্রিবল করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে মাটি ধরিয়ে দেবেন, কখনও মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঠিকানা লেখা পাস বাড়াবেন, কখনও দর্শনীয় ফ্রিকিকে বল জালে জড়াবেন। ৩৫ বছর বয়সেও কী না করলেন। সোনার বল তাঁকে ছাড়া আর কাকেই বা দেওয়া যেত।
কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে আর সেসব দেখা যাবে না। মন খারাপ হতে বাধ্য, মেসিকে তবু কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে। তিনি জন্মেছিলেন বলেই ফুটবল আরও আকর্ষক হয়ে উঠেছিল। তিনি জন্মেছিলেন বলেই বিশ্বজুড়ে একটা প্রজন্ম ফুটবল খেলার প্রেমে পড়েছিল। ভুল বললাম। মহাপুরুষের জন্ম হয় না, আবির্ভাব ঘটে। তাঁর আবির্ভাবের জন্যই দেরি হলেও ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা। বিদায় লিওনেল মেসি, ভাল থাকবেন…