নয়াদিল্লি: ক্যানসার (Cancer) নির্মূল করবে এই ওষুধ। ক্যানসার সারাতে চান? অর্ধেক দামে সংগ্রহ করুন ওষুধ। এইসব বিজ্ঞাপনে শুধু লোক ঠকানোই নয়, অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খেলতে গিয়ে শ্রীঘরে গোটা চক্র।
পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে, তারা কেউই এলিতেলি নয়। প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত কিংবা পয়সাওয়ালা লোক। যেমন, ডাঃ পবিত্রনারায়ণ প্রধান। চীনের হুবেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস করেন। দেশে ফিরে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (MCI) ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশনে (FMGE) স্ক্রিনিং পরীক্ষাও দেন। তারপর অন্যদের মতো ডাক্তারির পথ বেছে নেন।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: শুভেন্দুর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর মন্ত্রী বীরবাহার
দিল্লির জিটিবি হাসপাতালে পেশা শুরু করে সুপার স্পেশালিটি ক্যানসার ইনস্টিটিউট এবং তারপর দীপচাঁদবন্ধু হাসপাতালে জুনিয়র হিসেবে যোগ দেন। তখনই এক অনুষ্ঠানে ব্যবসায় নামার প্রস্তাবটি আসে। বাংলাদেশের এক মেডিসিন ছাত্র ওষুধ প্রস্তুতের ব্যবসার প্রস্তাব দেন তাঁকে। সহজে বড়লোক হওয়ার এই প্রস্তাবই তাঁকে ঠেলে নিয়ে যায় অপরাধ জগতের দিকে, জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
প্রচুর টাকা রোজগারের জন্য প্রধান এই কাজে তাঁর এক তুতো ভাই শুভম মান্না এবং রাম কুমার নামে একজনকে জোগাড় করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ক্যানসারের জাল ওষুধ (Spurious Cancer Drugs) বাজারে বিক্রি করে ফায়দা তোলা। বাজারদরের থেকে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে তাঁরা ক্যানসারের ভুয়ো ওষুধ বিক্রি শুরু করে দেন। দিল্লির অপরাধ দমন বিভাগের স্পেশাল কমিশনার রবীন্দ্র যাদব বলেন, প্রধান বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ২১টিরও বেশি জাল ক্যানসারের ওষুধ তৈরি ও সরবরাহ করতেন।
তাঁর এই চক্রের সকলেই উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চ রোজগেরে লোক ছিলেন। যেমন, মান্না বি-টেক পাশ। প্রধানের দলে ভেড়ার আগে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর কাজ বারকোড, ব্যাচ নম্বর তৈরি ও বসানো এবং ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণের ডেট ঠিক করা। মান্না জাল ওষুধের প্যাকেজিংয়ের বিষয়টি দেখভাল করতেন।
আরেক অভিযুক্ত রাম কুমার হরিয়ানায় একটি কারখানা চালাতেন। যেখানে এই সমস্ত ভুয়ো ওষুধ তৈরি করা হতো। একাংশ বর্মা চণ্ডীগড়ে একটি ফার্মা কোম্পানির মালিক ছিলেন। তিনি এই চক্রকে এক লক্ষ জাল ক্যাপসুল সরবরাহ করেছিলেন। এছাড়াও ইন্ডিয়ামার্টের সাহায্যে ক্যানসারের ওষুধের খোঁজ করছেন, এমন ব্যক্তিদের ফোন নম্বর জোগাড় করতেন। তারপর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্ধেক দামে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব দিতেন।
প্রভাত কুমার নামে এমবিএ পাশ আরেক সন্দেহভাজন ব্যক্তিও একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতেন। পরে তিনি অঙ্কোলজি ও নেফ্রোলজির ওষুধের পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন। প্রধান তাঁর এই দোকানকে জাল ওষুধ বিক্রির জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন। এই চক্রের আরও যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের নাম পঙ্কজ বোহরা এবং অঙ্কিত শর্মা। দুজনেই আইটিআই ডিপ্লোমা। তাঁরা ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহের দিকটি দেখতেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রে আরও কে জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে।