জেরুজালেম: বিচারবিভাগের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের (Israel) প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু (Prime Minister Benjamin Netanyahu) বিরোধী আন্দোলন দিনদিন জোরাল হয়ে উঠছে। আন্দোলন দমনে ইজরায়েলি পুলিশ কঠোর দমন-পীড়নের নীতি নিয়েছে। বুধবার প্রতিবাদীদের জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান এবং ঘুমপাড়ানি গ্রেনেড পর্যন্ত ব্যবহার করে। হাজার হাজার মানুষ তেল আভিভের (Tel Aviv) একটি রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন।
সেই সময় নেতানইয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানইয়াহু (Sara Netanyahu) স্থানীয় একটি সালোঁতে কেশচর্চার জন্য গিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারী ওই সালোঁর বাইরে জমায়েত করে তা ঘিরে ফেলে। তেল আভিভের অভিজাত ওই এলাকায় ব্যাপক গন্ডগোলের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদীরা সালোঁর বাইরে ´শেম, শেম´ স্লোগান দিতে থাকে। মুহূর্তে সেই জায়গায় কয়েক শো পুলিশ গিয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে সারাকে উদ্ধার করে লিমোজিন গাড়িতে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: Adani Group of Companies: ঋণ মেটাতে ১৫,৪৪৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করল আদানি গোষ্ঠী
বুধবারের ওই ঘটনাকে বিক্ষোভকারীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন নেতানইয়াহু। যদিও ইজরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু আমেরিকাও (US) বিচারবিভাগের ক্ষমতা হস্তগত করা এবং প্রতিবাদ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারি খড়্গহস্ত হওয়ার ঘটনার নিন্দা করেছে। তা সত্ত্বেও নেতানইয়াহু এবং তাঁর রাজনৈতিক শরিকরা দেশের বিচারবিভাগকে বদলে ফেলার জন্য একগুচ্ছ আইন প্রণয়নের সি্দ্ধান্ত থেকে একচুলও সরে আসেননি। তাঁর এই পদক্ষেপ প্যালেস্তাইনের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধে দীর্ণ ইজরায়েলকে নতুন করে ঘরোয়া লড়াইয়ে নামিয়ে এনেছে। যার ফলে ইজরায়েলে আর্থিক সঙ্কট ফের মাথাচাড়া দিয়েছে।
এই অবস্থায় বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবার আরও জোরদার কর্মসূচি নিচ্ছে। তেল আভিভে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে বুধবারের চেয়েও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। জেরুজালেমে (Jerusalem) হতে চলা ওই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন নিরাপত্তা কর্তারা ভাষণ দিতে পারেন। এছাড়াও দুই প্রাক্তন ব্যাঙ্ক অফ ইজরায়েলের প্রধান সহ প্রাক্তন অর্থনীতিবিদরা বক্তৃতা দেবেন। একজন নোবেলজয়ীও দেশের অর্থনীতির ডুবন্ত দশা নিয়ে ভাষণ দেবেন।
যদিও বুধবার রাতেই ইজরায়েলি আইনমন্ত্রী, যিনি এই ব্যবস্থার অন্যতম রূপকার, সেই ইয়ারিভ লেভিন (Justice Minister Yariv Levin) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আইনের বদল অবশ্যম্ভাবী। কোনও চাপের কাছেই সরকার নতিস্বীকার করবে না। প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত বিলে রাজনীতিবিদ এবং পার্লামেন্টের হাতে বিচারবিভাগীয় নিয়োগের নিয়ন্ত্রণ সঁপে দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও অমান্য করার ক্ষমতা পাবে পার্লামেন্ট। এর বিরুদ্ধেই দেশের সর্বস্তরের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন সেনা অফিসার থেকে শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং শিল্পপতিরাও। তাঁদের মতে, এই আইনের ফলে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। আইনের নিরপেক্ষতা ভারসাম্য হারাবে।
আসলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় হাতকড়ি পরানোর চেষ্টার কারণ হল, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা ইজরায়েলের অবিসংবাদিত নেতা নেতানইয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি এবং বিশ্বাসভঙ্গের বিচার চলছে সেখানকার আদালতে। অবশ্য এইসব অভিযোগকে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলে জানিয়েছেন নেতানইয়াহু। তদন্তকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও সংবাদমাধ্যম তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ নেতানইয়াহুর।