তিনি চাইলে দল ছেড়ে দিতে পারেন। দলের পক্ষ থেকে রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের মাধ্যমে সাংসদ জহর সরকরাকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হল বলে খবর তৃণমূল সূত্রে। যদিও এ প্রসঙ্গে সুখেন্দুশেখর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। আমি কথা বলেছি। দল যা জানাতে বলেছিল, ওনাকে জানিয়েছি। উনি যা বলেছেন তা সবই দলকে জানিয়ে দিয়েছি।”
জহর সরকার তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য। দিন কয়েক আগে নিজ দল তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে কড়া কড়া কথা শুনিয়েছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়-অনুব্রত মণ্ডলের ঘটনাকে ‘পচন’এর সঙ্গে তুলনা করেন। বলেছিলেন, এই সব নেতাদের যদি দল এখনই বর্জন না করে তাহলে এই পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা মুশকিল! সেখানেই না থেমে জহর সরকার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গও তুলেছিলেন। আত্মীয় থেকে বন্ধুরা তাঁকে তৃণমূল ছাড়ার কথা বলেছেন বলেও জানান জহর। কেন তিনি এখনও তৃণমূলে আছেন, সে প্রশ্নও বন্ধুরা করেন তাঁকে। এমন প্রশ্ন তিনি যে অপমানিত-লাঞ্ছিত, তাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তৃণমূল সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে দিন জহর বলেন, বন্ধুরা জানতে চাইছে, আমি কতটা পেয়েছি।
এমন কথা বলার পরই জহর সম্পর্কে দলের মধ্যে বাড়তে থাকে অস্বস্তি। মুখ খোলেন লোকসভার সদস্য সৌগত রায়। বলেন, “জহর সরকার কোনও দিন তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেননি। ওঁকে সব চেয়ে লোভনীয় পদ রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল দল। তিনি কি না দলের ভিতরে না বলে প্রকাশ্যে দল বিরোধী কথা বলে দিলেন! এটা খুবই লজ্জার কথা। ওঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তাপস রায়ের কথায়, ‘‘জহরবাবুর এই মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অরাজনৈতিক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যসভার ভোটে জহরবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলাম। আজ লজ্জা হচ্ছে।’’ সুখেন্দুশেখরের বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল মানুষের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।’’
দিন কয়েক ধরে দলের মু্খপাত্রদের মন্তব্যই স্পষ্ট করছিল দলের অবস্থান কোন দিকে যাচ্ছে। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ের পরে রাজ্যসভায় প্রার্থী হিসাবে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন অধিকর্তা জহরের নাম ঘোষণা করে চমক দিয়েছিলেন মমতা। তৃণমূলের অনেক নেতাই সে দিন বলেছিলেন, ‘‘দিদি ওঁর আস্তিনে এমন অস্ত্র যে লুকিয়ে রেছেছিলেন, তা আগে এক বারও জানতে পারিনি।’’ আর সেই ব্যক্তি সম্পর্কে একের পর এক দলীয় মুখপাত্রের এহেন মন্তব্যের পর মোটামুটি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে দল জহরের সঙ্গে ‘সরকারি’ ভাবে নামে না হলেও আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে।
২০২০ সালের ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন দীনেশ। তাঁর জায়গাতেই জহরকে পাঠান মমতা। এক বছর আগে ২০২১ সালের ৯ অগস্ট রাজ্যসভার উপনির্বাচনে সহজ জয় পান জহর। ২০২৬ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাংসদ পদের মেয়াদ রয়েছে তাঁর। তার মধ্যেই আচম্বিতে এমন মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন এই প্রাক্তন আমলা। এখন দেখার, দলের শীর্ষনেতৃত্ব জহরের মন্তব্য সম্পর্কে কী অবস্থান নেন।