প্রয়াত কিংবদন্তি সুরকার ও গীতিকার সলিল চৌধুরি যাঁর গলা শুনে বলেছিলেন, ঈশ্বর গান গাইলে বোধহয় এ রকমই হতো তাঁর গলা! একবার নৌশাদ বলেছিলেন – লতার মতো সঙ্গীত প্রতিভা আমি আর পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমেই এক একজন আসেন, যাঁর মাথায় ঈশ্বর হাত রাখেন, লতা তেমনই একজন। সাধনা, সংগ্রাম, শৃঙ্খলা, সততা, সঙ্গীতে জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতার সঙ্গে স্বকীয় প্রতিভার জোরেই ঈশ্বরের এই আশীর্বাদ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন লতা।
হ্যাঁ। তাঁর নাম লতা মঙ্গেশকর। ভারত কেন বিশ্ব যাঁকে এক নামে জানে। তাঁর সম্পর্কে প্রশংসা করাই অবান্তর। লতা মঙ্গেশকর ভারতীয় সংগীত জগতের নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। লতা নিজেকে গানে এমন অপরিহার্য করে তুলেছিলেন যে, শঙ্কর জয়কিষেণ বলতেন, লতাজির হাঁচি হলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সর্দি লেগে যায়। হিন্দি সিনেমার কিংবদন্তি রাজ কাপুর একবার বলেছিলেন, আমরা সৌভাগ্যবান যে লতার সময় ছবি করতে পেরেছি। এমন প্রতিভা শতাব্দীতে একজন জন্মায় কি না সন্দেহ।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত করে। ২০০১ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়। এম এস শুভলক্ষ্মীর পর এই সম্মান পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ফ্রান্স তাঁকে সেদেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লিজিওঁ অব অনারে ভূষিত করে।
তিনি ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা এফজেএ পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ গায়িকা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ২টি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ারের আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতা সবার বড়। তাঁর বাকি ভাইবোনরা হলেন, আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোরে (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কনী সঙ্গীতজ্ঞ এবং মঞ্চাভিনেতা ছিলেন। তাঁর মা শেবন্তী (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে সুধামতী) বোম্বে প্রেসিডেন্সির তালনারের (বর্তমান উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র) গুজরাতি মহিলা ছিলেন। তিনি দীননাথের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁর প্রথম স্ত্রী নর্মদা শেবন্তীর বড়বোন ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
পুরস্কার ও সম্মান
২০০৭- লিজিওঁ অব অনার (ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানা)
২০০১- ভারতরত্ন (ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা)
১৯৯৯- পদ্মবিভূষণ (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা )
১৯৯৯- এনটিআর জাতীয় পুরস্কার
১৯৯৭- মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার
১৯৮৯- দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদান)
১৯৬৯- পদ্মভূষণে (তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা)
এছাড়াও অসংখ্য সবকারি-বেসরকারি পুরস্কার যেমন- জি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৯), এএনআর জাতীয় পুরস্কার (২০০৯), শ্রেষ্ঠ মহিলা নেপথ্য শিল্পী বিভাগে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ৪টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৯৩ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ১৯৯৪ ও ২০০৪ সালে দুইবার ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন।