কলকাতা: ঘড়ির কাটায় সকাল ৯টা বেজে ২০ মিনিট। সৌরাষ্ট্রের অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাট সজোরে হেঁটে চলেছেন ইডেনের পিচের দিকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে রঞ্জি ফাইনালের আগে বেশ চিন্তিত তিনি। গত দু’দিন ধরে বলা হচ্ছে ইডেনের উইকেট গ্রিন টপ হতে চলেছে। বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি আবার ইতিমধ্যেই ‘মাইন্ডগেম’ খেলা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যেই এই বলে হাওয়া গরম করে দিয়েছেন যে, ‘সৌরাষ্ট্রের বেশিরভাগ সাফল্য এসেছে মন্থর উইকেটে। ইডেনের লড়াই হবে একপেশে। রঞ্জি ফাইনাল জিতবে বাংলা।’ আজ এই প্রসঙ্গে বিপক্ষের অধিনায়ককে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলে তিনি হেসে বলেন, ‘যখন মনোজ এ রকম বলেই দিয়েছে, তখন আর আমার নতুন করে কী বলার আছে…তবে আমি মনে করি এই ম্যাচে দুটি দলই শক্তিশালী। কেউই কাউকে লড়াই ছাড়া এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না।’ ঠিক এরপরেই বাংলা সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরও একটা ইয়র্কার আসে। মনে হচ্ছিল রঞ্জি ফাইনালের আগে সৌরাষ্ট্রের অধিনায়ক বনাম বাংলা মিডিয়ার রুদ্ধশ্বাস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ চলছে। ইডেন উইকেট তো গ্রিনটপ, এই উইকেটে সৌরাষ্ট্রের ব্যাটাররা বাংলার পেসারদের সামলাবেন কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আক্রমণাত্মক সৌরাষ্ট্রের অধিনায়কও। ‘গ্রিন টপ যদি সৌরাষ্ট্রের ব্যাটারদের জন্য সমস্যার হয়, তাহলে সেটা বাংলার ব্যাটারদের জন্যও হবে। এই বিষয়টা কখনওই একতরফা হতে পারে না। যদিও আমার ইডেনের উইকেট দেখে মনে হয়নি যে এটা গ্রিন টপ। বরং আমার মনে হয়েছে এটা ভালো স্পোর্টিং উইকেট। এই উইকেটে পেসাররা সহায়তা পাবে অবশ্যই, কিন্তু এমন নয় যে ব্যাটাররা রান পাবে না-’ গুরুগম্ভীরভাবে বলে গেলেন জয়দেব উনাদকাট।
বাংলা শিবিরের জন্য ভালো খবর এটাই যে এই মুহূর্তে প্রত্যেকে ফিট। মনোজ বলেন, ‘দলে প্রত্যেকে ফিট অ্যান্ড ফাইন। শাহবাজের গতকাল হাল্কা জ্বর ছিল। তবে আজ অনুশীলনে ব্যাট করেছে শাহবাজ। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’ তবে ওপেনিং পজিশনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। বাংলার অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা এখনও টিম মিটিং করিনি। টিম মিটিং করার পর সিদ্ধান্ত নেব। করণ লাল ওপেনিং স্লটে অবদান রাখছেন ঠিকই, তবে আগামিকাল বাংলা দলে নতুন কোনও ওপেনারকে অভিষেক করতে দেখলে অবাক হবেন না।’ বাংলা দল সূত্রে খবর অভিষেক হতে পারে সুমন্ত গুপ্তর। বড়িশা ক্লাবের হয়ে খেলা এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারের দিকে নজর রয়েছে বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টের। ১৯৮৯-৯০-তে এরকমই এক রঞ্জি ফাইনালে বীরেন রায় রোডের আরেক বাঁ-হাতির অভিষেক হয়েছিল। ২০১৯-২০ রঞ্জি ফাইনালে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিল সুদীপ ঘরামির।
২০১৯-২০ সালের রঞ্জি ফাইনালে এই সৌরাষ্ট্রের কাছেই হারতে হয়েছিল বাংলাকে। এরপর থেকে অনেকেই এই রঞ্জি ফাইনালকে বদলার ফাইনাল বলে সম্বোধন করছেন। এই প্রসঙ্গে বাংলা অধিনায়ক বলেন, ‘যেটা হয়ে গিয়েছে সেটা অতীত। আমরা বদলার ম্যাচ হিসেবে দেখছি না। আমাদের ক্রিকেটীয় পারদর্শীতায়, ট্যাকটিক্সে এবং স্ট্র্যাটেজিতে হারাতে হবে সৌরাষ্ট্রকে।’
আরও পড়ুন: Ranji Trophy Final- Bengal: স্মৃতির সরণি বেয়ে বাংলার রঞ্জি ফাইনালের ইতিহাস
ঈশান পোড়েলের বাঁ-পায়ের আঙুলে চোট এখন অনেকটাই কম। বুধবার সকালে নেটে বল করে গেলেন এক নাগাড়ে। মুকেশ কুমার-আকাশদীপ-ঈশান পোড়েল তিনজনই সম্ভবত খেলছেন। ধোঁয়াশা শুধু একজনকে নিয়ে। তিনি হচ্ছেন বাংলার সেমিফাইনাল জয়ের অন্যতম নায়ক প্রদীপ্ত প্রামানিক। মনে করা হচ্ছে ইডেনের পিচের জন্য প্রদীপ্ত প্রামানিকের জায়গায় সুযোগ দেওয়া হতে পারে আকাশ ঘটককে। তবে বাংলা শিবিররের একাংশের মত যেহেতু ভালো ফর্মে রয়েছেন প্রদীপ্ত প্রামানিক, সেহেতু সুযোগ দেওয়া উচিত তাঁকেই। উইকেটের প্রকৃতি যাই হোক না কেন!
বাংলা দলের অনুশীলন দেখতে এসেছিলেন প্রাক্তন সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া। পরনে বেগুনি-সাদা চেক শার্ট, মুখে সেই চেনা হাসি। বাংলার প্রত্যেক ক্রিকেটারকে আলাদা করে শুভেচ্ছা জানালেন। এই বাংলা দলকে অনেক কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি। তাই ফাইনালের আগের দিন চুপ করে বসে থাকেন কি করে?
অনুশীলনের একেবারে শেষে একটা দারুণ জিনিস চোখে পড়ল। মনোজ তিওয়ারিকে দূর থেকে ‘মন্ত্রী’- ‘মন্ত্রী’ বলে ডাকছেন জয়দেব উনাদকাট! মনোজ শুনে দূর থেকে ছুটে এলেন এবং আলিঙ্গন করলেন জয়দেবকে। কোথায় বদলার রঞ্জি ফাইনাল? এখানে তো সৌহার্দ্যের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি দেখছি। বলে রাখা ভালো একসময় কেকেআর শিবিরে জয়দেব এবং মনোজ দু’জনেই ছিলেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে জয়দেব উনাদকাটেরও একসময়ের হোম গ্রাউন্ড কিন্তু এই স্বর্গোদ্যান। তবে আগামিকাল থেকে স্বর্গোদ্যানের সবুজ গালিচায় এই ছবি যে দেখা যাবে না তা ইডেন ছাড়ার আগে সাফ জানিয়ে যান জয়দেবের একসময়ের কেকেআর ড্রেসিংরুমের টিমমেট…