নয়াদিল্লি: সমস্যা বাড়ল অক্সফাম ইন্ডিয়ার (Oxfam India ) জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক (Ministry of Home Affairs – MHA) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’কে (Central Bureau of Investigation – CBI) অক্সফামের বিরুদ্ধে বিদেশি তহবিল আইনের (Foreign Funds Act) অধীনে তদন্তের (Probe) নির্দেশ দিয়েছে। অক্সফাম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা বিদেশি কর (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১০ [Foreign Contribution (Regulation) Act 2010 or FCRA, 2010)] উল্লঙ্ঘন (Violation) করেছে। সেই কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সিবিআইকে এই নিয়ে তদন্ত করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: AK Antony Son Joins BJP | প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনির ছেলে বিজেপিতে
কেন তদন্তের আওতায় অক্সফাম?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, বিদেশি কর (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন ২০২০ [Foreign Contribution (Regulation) Amendment Act, 2020] লাগু হওয়া সত্ত্বেও অক্সফাম বিভিন্ন বিদেশি সংস্থাকে অর্থ হস্তান্তর করা জারি রেখেছে। এখানে উল্লেখ্য, এই সংধোশনী আইন ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে লাগু হয়েছে। সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারপরেও অর্থ অন্য সংস্থায় অর্থ স্থানান্তরিত করে আইন উল্লঙ্ঘন করেছে অক্সফাম।
খবরে প্রকাশ, দাতব্য সংস্থা অর্থাৎ চ্যারিটেবল অর্গ্যানাইজেশন অক্সফাম ইন্ডিয়া (Oxfam, Charitable Organization) অন্যান্য এনজিও’কে (Non-Governmental Organisation – NGO) অর্থ পাঠিয়েছে। আর এইভাবে তারা এফসিআরএ ২০১০ আইন উল্লঙ্ঘন করেছে।
সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (Central Board of Direct Taxes – CBDT) এই নিয়ে আইটি সমীক্ষা (IT survey) চালিয়েছিল। সেই সমীক্ষায় তাদের হাতে কিছু ইমেইল (E-Mail) এসেছে। তা পর্যবেক্ষণ করে সিবিডিটি জানতে পেরেছে, এফসিআরএ নিবন্ধিত অন্যান্য সংস্থায় (FCRA-Registered Associations) অর্থ তহবিল পাঠিয়ে কিংবা লাভের উদ্দেশ্যে-পরামর্শমূলক পথে (For-Profit Consultancy Route) অর্থতহবিলকে চালিত (Routing Funds) করে অক্সফাম এফসিআরএ ২০১০ আইনের প্রবিধান উল্লঙ্ঘের পরিকল্পনা করছিল। মূল্য লক্ষ্য ছিল, কর ফাঁকি দেওয়া।
সিবিডিটি’র সমীক্ষায় এটাও উঠে এসেছে, অক্সফাম ইন্ডিয়া বিদেশি সংস্থার (Foreign Organizations / Entities) বিদেশি নীতির (Foreign Policy) সম্ভাব্য যন্ত্র (probable instrument) হিসেবে কাজ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থাগুলি অকুণ্ঠভাবে বছর পর বছর ধরে টাকা জুগিয়ে গিয়েছে অক্সফাম ইন্ডিয়াকে। আর তারপর অক্সফাম ইন্ডিয়া সেই অর্থ কৌশলে অন্যত্র চালান করেছে।
অক্সফাম ইন্ডিয়া সামাজিক কার্যক্রম (Social Activities) চালানোর জন্য নিবন্ধিত (registered) একটি সংস্থা। তারা কমিশন (commission) হিসেবে সহযোগী/কর্মচারীদের মাধ্যমে সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (Centre for Policy Research – CPR) কাছে অর্থ পাঠায়। এই সংক্রান্ত টিডিএস ডেটা বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সিপিআর’কে তারা ১৯৪জে ধারার (section 194J) অধীনে ১২,৭১,১৮৮ টাকা দিয়েছে।
প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, অক্সফাম ইন্ডিয়া যে বিদেশি অনুদান পেয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় তার পরিমাণ প্রায় ১.৫০ কোটি টাকা। ওই অর্থ মনোনীত এফসিআরএ অ্যাকাউন্টে (designated FCRA account) বিদেশি অবদান (Foreign Contribution) হিসেবে গ্রহণের পরিবর্তে সরাসরি সংস্থার এফসি ইউটিলাইজেশ অ্যাকাউন্টে (FC Utilization Account) জমা হয়েছে। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অক্সফাম ইন্ডিয়ার করা এফসিআরএ রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণের (Registration Renewal) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে অক্সফাম ইন্ডিয়া আদলতের দ্বারস্থ হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court) অক্সফাম ইন্ডিয়ার ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ২০১০-এর অধীনে নিবন্ধন পুনর্নবীকরণের আবেদনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া চেয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে আদেশ দিয়েছিল, তাকে চ্যালেঞ্জ করে সংশ্লিষ্ট অলাভজনক সংস্থা আদালতে যে পিটিশন দাখিল করেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট নোটিস জারি করে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাদের আগের অবস্থানেই অনড় থেকেছে। অক্সফামের এফসিআরএ রেজিস্ট্রেশন রিনিউ করতে রাজি নয় মন্ত্রক।
উল্লেখ্য, অক্সফাম ইন্ডিয়ার দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯৫ সালে তৈরি এই সংস্থার সারা বিশ্বে ২১টি সংস্থা রয়েছে, যাকে সম্মিলিতভাবে অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন (Oxfam International Confederation) বলা হয়। ভারত সরকার (Government of India) ভারতীয় কোম্পানি আইন, ২০১৩ (Indian Companies Act, 2013)-র ধারা ৮-এর আওতায় অক্সফাম ইন্ডিয়াকে একটি অলাভজনক সংস্থা (Non-Profit Organization) হিসেবে নিবন্ধিত করেছিল৷