কলকাতা: সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতি রুখতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করল নবান্ন। শুক্রবার উপস্থিতির হার জানার জন্য চার দফায় অফিসারদের রেকর্ড রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০.৪৫, দুপুর ১২ টা, দুপুর ১.৩০ টা এবং বিকেল ৫ টার সময় উপস্থিতি কত, তা ইমেল করে জানাতে বলা হয়েছে বিভিন্ন জেলাতে। সব জেলায় এর জন্য অ্যাটেনডেন্স ফরম্যাট ও পাঠানো হয়েছে। সেই ফরম্যাট পূরণ করে এদিন বিকেলের মধ্যে সব জেলাকে রিপোর্ট নবান্নে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন কোন আধিকারিক অনুস্পস্থিত রয়েছেন, জানাতে হবে তারও বিস্তারিত তথ্য।
ডিএ-র দাবিতে এদিন সকাল থেকেই সরকারি অফিসে কর্মবিরতি চলছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের দাবি, জেলায় জেলায় কর্মবিরতি প্রায় ৯০ শতাংশ সফল। মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, অনেক জায়গায় শাসক দলের লোকজন প্ররোচনার সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কর্মবিরতি আন্দোলন ভাঙতে সচেষ্ট হয়েছে কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের জেদি মনোভাবের সামনে পড়ে শাসকদলের সমর্থকরা পিছিয়ে এসেছে। রাজ্য সরকারের অবশ্য দাবি, কর্মবিরতিতে সাড়া মেলেনি।
আরও পড়ুন: WB State Govt Employees Strike | সরকারি হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে রাজ্যকর্মীদের ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া
এদিন বিধানসভায় পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ৩ শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বনধের বন্ধ্যা সংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস রাজ্যে আবার সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
তৃণমূল জমানায় এই প্রথম সরকারি হুমকি উপেক্ষা করে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছে। সরকারি অফিসের সামনে পিকেটিং, মিছিল, মিটিং চালিয়ে গিয়েছেন ধর্মঘটীরা। বৃহস্পতিবারেই নবান্ন থেকে জারি করা নির্দেশিকায় হুমকি দেওয়া হয়েছিল, শুক্রবার কেউ ছুটি নিতে পারবেন না। কাজে অনুপস্থিত থাকলে শোকজ করা হবে। একদিনের জন্য চাকরি ছেদ করা হবে। কিন্তু ধর্মঘটীরা সেই নির্দেশিকাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। উল্টে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ওই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি পথে যাবে বলে গতকালই জানিয়ে দিয়েছে। সিপিএম প্রভাবিত রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটিও এই কর্মবিরতির ডাককে সমর্থন করে পথে নেমেছে। বিজেপির সরকারি কর্মচারী সংগঠন কর্মচারী পরিষদ এই আন্দোলনে মঞ্চের পাশে রয়েছে। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে যারা মূল আন্দোলন করছে, কংগ্রেস প্রভাবিত সেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কনফেডারেশন কর্মবিরতিতে না থাকলেও তাকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ কলকাতার বহু সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এদিন কর্মবিরতি হয়েছে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যে বনধ সংস্কৃতির বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর মতে, বনধের নামে অনেক সময়ই সরকারি যে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়। এসব বন্ধ করার জন্যই তিনি অনেক দিন ধরেই আইন আনার কথা বলছিলেন। অবশ্য বিরোধীনেত্রী থাকার সময় তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস এবং তৃণমূল রাজ্যে অনেক ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করেছে। বাম জমানায় যখন তখন বনধ বা ধর্মঘট ডেকেছে তৃণমূল। সে সব ঘিরে ধ্বংসাত্মক এবং হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটেছে। সিঙ্গুর আন্দোলন পর্বে ২০২৬ সালে শেষ দিকে মমতার উপস্থিতিতে বিধান সভায় তৃণমূল ব্যাপক তান্ডপ চালায়। দলীয় বিধায়করা বহু মূল্যবান আসবাবপত্র ভেঙে চুরমার করেন।