কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ৮০ ঘণ্টা তল্লাশি। অবশ্য একে তল্লাশি নয়, ‘তাণ্ডব’ বলাই ভাল। ইনকাম ট্যাক্স রেডের নামে টানা ১৬ অগস্ট সকাল থেকে টানা তিন দিন ধরে হেনস্তা করা হয়েছে কলকাতা টিভি কর্মীদের। ৮০ ঘণ্টা তল্লাশির পর অবশ্য খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে আয়কর হানাদারদের। তল্লাশিতে কিছু না পেয়ে রূঢ় ব্যবহারও করেন আধিকারিকেরা। বহু কর্মীকে ৪৮ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। অনেকের মনেই প্রশ্ন, এই হানার পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই তো? ইতিমধ্যেই দলমত নির্বিশেষে সমাজের সব স্তরের মানুষ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। এবার কলকাতা টিভির পাশে দাঁড়াল নেশন ইন ডিস্ট্রেস। কেন্দ্রের মোদি সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে সই সংগ্রহ করছে তারা। তাদের পক্ষ থেকে আবেদন পত্রে বলা হয়েছে, “কেন্দ্রর মোদি সরকার কলকাতা টিভি-র উপর আক্রমণ নামিয়ে এনে সংবাদ সম্প্রচারে বাধা সৃষ্টি করছে, আমরা মনে করছি তা অগণতান্ত্রিক। আমরা সংগঠনগত ভাবে ফ্যাসিবাদী এই আক্রমণের বিরূদ্ধে ধিক্কার জানাচ্ছি। আশা করব, সরকার এমন অগণতান্ত্রিক আচরণ থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন।” এই আবেদন জানিয়ে শুরু হয়েছে অনলাইন প্রচারও। ইতিমধ্যেই শতাধিক মানুষ এই আবেদনে সাড়া দিয়ে সই করেছেন।
প্রসঙ্গত, কলকাতা টিভি-র উপর আঘাত হানতে মোট ৫৫০ জনের টিম গঠন করা হয়। সারা দেশে ৩টি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়। ৩৬০ জনকে নিযুক্ত করা হয় সার্চিং অপারেশনে। বাকিরা ছিলেন কন্ট্রোল রুমে। ৩৫০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকেও কাজে লাগানো হয়। ১৬ অগস্ট সকাল ৬টা থেকে ১৯ অগস্ট বেলা ১টা ৪০ পর্যন্ত কলকাতা টিভির মূল দফতরে চলে তল্লাশি। সংস্থার দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ের অফিসেও চালানো হয় তল্লাশি। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা টিভিকে বাগে আনার জন্যই দিল্লিতে বসে গোটা পরিকল্পনার করা হয়েছিল কি না? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই মিলবে না। কিন্তু নিট ফল দাঁড়িয়েছে শূন্য। ফলে হতাশ আয়কর দফতর, হতাশ আরও অনেকেই!
কলকাতা টিভির প্রধান অফিস থেকে মোট ১০ লক্ষ ২৯ হাজার ২০ টাকা পান আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয় ৯ লক্ষ টাকা। বাকি ১ লক্ষ ২৯ হাজার ২০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ের বাড়ি থেকে মোট ১০ লক্ষ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা পান আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয় ৯ লক্ষ টাকা। বাকি ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কলকাতা টিভির ডিরেক্টরদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল আয়কর দফতর। সব জায়গা থেকেই শূন্য হাতে ফিরতে হয় তাদের। (কলকাতা টিভির হিসেব অনুযায়ী বিভিন্ন সময় ব্যাঙ্ক থেকে তোলা অর্থের মোট অঙ্কই ৯ লক্ষ। চ্যানেলে হঠাৎ কোনও টেকনিক্যাল সমস্যা বা কোনও যন্ত্রাংশের সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্যই এই নগদ অর্থ সব সময় রাখা হয়)।
আয়কর তল্লাশির নামে কলকাতা টিভির দফতরে তাণ্ডবের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্টজন। প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু নেতা বলেন, যেভাবে আয়কর দফতর তল্লাশির নামে হেনস্তা করেছে, তা তাদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না। গোয়েন্দা দফতর এসব করলে তবু বোঝা যায়। কিন্তু আয়কর দফতরের তো সেই এক্তিয়ারই নেই। আমি শুনেছি, ওরা কলকাতা টিভির প্রোডাকশন কন্ট্রোল রুমে ঢুকে সংবাদ সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করেছে। সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার কোনও অধিকারই নেই আয়কর দফতরের। যা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা করছি আমি।
ঘটনার নিন্দা করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায়। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করেছে আয়কর দফতর। যেভাবে কলকাতা টিভির দফতরে তল্লাশির নামে সকলকে হেনস্তা করেছে, তার নিন্দা করার ভাষা নেই। নিন্দা করেছেন অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, স্বপ্নময় চক্রবর্তী প্রমুখ। বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা কখনওই কাম্য নয়। তবে এটি একটি আইনি বিষয়। কেন, কী কারণে আয়কর দফতর গিয়েছিল, তা তারাই বলতে পারবে।