কলকাতা: টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে গ্রেফতার হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও৷ তাঁর বাড়িতেই কোটি কোটি টাকার হদিস পায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট৷ শনিবার গ্রেফতারের পর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বান্ধবী চিৎকার করে দাবি করেন, তিনি কোনও অন্যায় করেননি৷ তাঁকে অত্যাচার করা হয়েছে৷ এটা বিজেপির চাল এবং চক্রান্ত৷ মডেল-অভিনেত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, এত টাকা কোথা থেকে পেলেন তিনি? সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি অর্পিতা৷ আপাতত তাঁকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে৷ সেখানেই রাতে অর্পিতা মহিলা লক-আপে রাখা হবে বলে ইডি সূত্রে খবর৷
গতকালই অর্পিতার বাড়ি থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা উদ্ধার করে ইডি৷ বস্তা ভর্তি টাকা দেখে ইডি তখনই অনুমান করেছিল, টাকার অঙ্ক কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ পরে টাকা গোণার যন্ত্র নিয়ে আসা হয়৷ গতকাল সারারাত এবং এদিন বিকেল পর্যন্ত চলে গণনা৷ সবশুদ্ধ ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে অর্পিতার অভিজাত আবাসন থেকে৷ এদিন উদ্ধার হওয়া টাকা ট্রাঙ্কে পুরে স্ট্র্যান্ড রোডের এসবিআই প্রধান দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ দুপুরের পর থেকেই ট্রাঙ্ক বোঝাই টাকা একটি লরিতে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ অন্তত ১৫টি ট্রাঙ্ক তোলা হয় গাড়িতে৷ ইডি সূত্রে খবর, তার মধ্যে ৮টি ট্রাঙ্কে রয়েছে ৫০০ টাকার বান্ডিল৷ ১টি ট্রাঙ্কে ২০০০ টাকার বান্ডিল, ২০০ টাকার বান্ডিল রাখা হয়েছে ৪টি ট্রাঙ্কে এবং ১০০ টাকার বান্ডিল রাখা হয় একটি ট্রাঙ্কে৷ বাকি একটি ট্রাঙ্কে রাখা হয় সোনার গয়না৷
ইডির অনুমান, অর্পিতার বাড়িতে উদ্ধার হওয়া টাকার একটা অংশ শিক্ষক নিয়োগের ঘুষের টাকা৷ হাইকোর্টের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই৷ সেই মামলার তদন্তে সিবিআই জেরার মুখোমুখিও হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ শুক্রবার সকাল থেকে প্রায় ১৪টি জায়গায় ইডির হানা চলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে৷ সকালেই ইডির তদন্তকারীরা অভিযান চালান নাকতলার পার্থর বাড়িতে৷ একই সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন এবং বর্তমান একাধিক কর্তা, কিছু সরকারি অফিসারের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়৷ অভিযান চলে মেদিনীপুরের পিংলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ের মামাশ্বশুরের বাড়িতেও৷ অভিযোগ উঠেছে, পিংলাতে পার্থবাবুর প্রয়াত স্ত্রী বাবলির নামের ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তৈরি করা হয়েছে৷ ইডির সন্দেহ, তাতেও এই দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা খাটানো হয়েছে৷ পার্থবাবুর বাড়ি থেকে কিছু নথি উদ্ধার করে ইডি৷ সেরকমই একটি নথিতে অর্পিতার নাম পাওয়া যায়৷
অর্পিতা কে, সেই প্রশ্নে পার্থবাবু কোনও মন্তব্যই করতে চাননি৷ ইডির কাছে খবর ছিল, অর্পিতার ফ্ল্যাটে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যেতে পারে৷ বিকেলে ইডির একটি বড় দল হাজির হয় হরিদেবপুরে অর্পিতার আবাসনে৷ সেখানেই অর্পিতার বেডরুমে বিপুল টাকার সন্ধান মেলে৷ শুরু হয় তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ৷ রাতভর তাঁকেও নানা প্রশ্ন করেন ইডির অফিসাররা৷ জিজ্ঞাসাবাদ চলে শনিবার বিকেল পর্যন্ত৷ তারপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়৷