তেলঙ্গানা: গর্ভবতী মহিলারা নাকি রামায়ণের সুন্দরকাণ্ড জপ করলেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে সবল সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হবেন। বক্তা যে সে লোক নন। তেলঙ্গানার রাজ্যপাল (Governor Tamilisai Soundararajan) তিনি। তামিলিসাই সৌন্দর্যরাজন একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। আজকে দেশকে ডিজিটাল যুগে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi Prime Minister of India)। প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে দেশে। ঠিক তখনই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মুখে শোনা গেল এই বিচিত্র ভাষণ।
দেশে এবার থেকে দেশপ্রেমিক সন্তানের জন্ম দেওয়ার লক্ষ্যে গর্ভ সংস্কার কর্মসূচির সূচনা হল রবিবার। সেই সূচনা লগ্নেই অমৃত বচন শোনা গেল তেলঙ্গানার রাজ্যপাল তথা এক বিশিষ্ট চিকিতসকের মুখে। বাহা রে ভারতবর্ষ। কোথায় পড়ে আছি আমরা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নিয়ন্ত্রিত সংবর্ধিনী ন্যাস দেশ জুড়ে এই গর্ভ সংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণের দায়িত্বে। রবিবার ঢাকঢোল পিটিয়ে সেই কর্মসূচিরই সূচনা করলেন সৌন্দর্যরাজন। এই সংবর্ধিনী শাখা মহিলাদের নিয়ে কাজ করার জন্য আরএসএসের একটি শাখা। যেমন রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি আরএসএসের মহিলা শাখা।
এই সংবর্ধিনী ন্যাস ভারতীয় মহিলাদের মানসিক, বৌদ্ধিক, শারীরিক উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এবার তাদের নতুন কর্মসূচি হল গর্ভ (Pregnancy) সংস্কার। তারা বলছে, গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত নয় মাস গর্ভবতী মায়েরা রোজ সংস্কৃত মন্ত্র জপ করলে এবং নিয়মিত গীতা পাঠ করলে গর্ভস্থ ভ্রুণের মানসিক বিকাশ ঘটবে। ন্যাসের আরও দাবি, টানা নয় মাস গর্ভবতী মায়েরা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গেলে গর্ভস্থ সন্তান সংস্কারি এবং দেশপ্রেমী হবে।
আরও পড়ুন: Coromandel Express Accident | করমণ্ডল দুর্ঘটনায় তিন রেলকর্মীকে আটক করল সিবিআই
ন্যাস বলছে, গর্ভ সংস্কার কর্মসূচির ফলে জন্মের পর সন্তান দেশীয় সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ শিখে যাবে। তার মধ্যে জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হবে।
এই উদ্ভট যুক্তির বিরুদ্ধে দেশে বিদ্বজ্জনেদের একটা অংশ সরব হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কথায় পাত্তা দিচ্ছেকে। ন্যাস ঘটা করে সূচনা করে দিয়েছে গর্ভ সংস্কার কর্মসূচি। সংবর্ধিনী ন্যাস জাতীয়তাবাদী বা বলা ভালো হিন্দুত্ববাদী চিকিতসকদের একটি অংশকে কাজে লাগিয়েছে। সেই চিকিতসকরাও রে রে করে নেমে পড়েছেন গর্ভ সংস্কার কর্মসূচি সফল করতে। ন্যাসের কার্যকর্তাদের দাবি, মজবুত ভারত নির্মাণে এই গর্ভ সংস্কার কর্মসূচি বিশাল ভূমিকা পালন করবে। তাঁরা বলছেন, গর্ভে থাকা ভ্রুণ চার মাস থেকেই নাকি সব শুনতে পায়। তখন থেকেই বাবা-মা সেই গর্ভস্থ সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তখন থেকেই বাবা-মায়েরা সেই সন্তানকে জাতীয়তাবাদের শিক্ষা দিতে পারবেন।
যে হিন্দুত্ববাদী নেতারা গরুর দুধে সোনা খুঁজে পান, গোমূত্র পান করলে করোনা সেরে যাবে বলে দাবি করেন, তাঁরা এই গর্ভ সংস্কার কর্মসূচিকে সফল করতে হই হই করে নেমে পড়বেন, তাতে আর আশ্চর্য কী। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে আবারও লিখতেন, বাহবা সময় তোর, সার্কাসের খেল।