Tuesday, August 12, 2025
Homeখেলা১৯৭৫ বিশ্বকাপ- ক্রিকেট দুনিয়াকে হুঙ্কার ক্লাইভ এন্ড কোম্পানির

১৯৭৫ বিশ্বকাপ- ক্রিকেট দুনিয়াকে হুঙ্কার ক্লাইভ এন্ড কোম্পানির

Follow Us :

১৯৭৫ সাল। সূচনা হয় প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের। আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড। শুরু হয়েছিল ৭ জুন এবং শেষ ২১ জুন। সবমিলিয়ে হয় মোট ১৫টি ম্যাচ। ৬০ ওভারের ছিল এই ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ফরম্যাট। এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে সবমিলিয়ে মাত্র ১৮টি একদিনের ম্যাচ হয়েছিল সারা বিশ্বে। সেই কারণে বেশিরভাগ দলই এই নতুন ফরম্যাটেও টেস্টের মতোই খেলতে শুরু করে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের কথাই বলতে হয়। ইংল্যান্ডের করা ৩৩৪ রানের জবাবে ভারত করে মাত্র ১৩২/৩। ৬০ ওভার ব্যাটিং করে সুনীল গাভাসকর করেন মাত্র ৩৪ রান। এরপর শোনা যায় একজন দর্শক তাঁর লাঞ্চ ছুড়ে ফেলেন ভারতীয় ওপেনারের পায়ে। দুটি ফরম্যাটের মধ্যে পার্থক্য বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। 

গ্রুপ এ-থেকে সেরা দুটি দল ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে, গ্রুপ বি- থেকে সেরা দুটি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া। এই চারটি দলই পৌঁছায় সেমিফাইনালে। 

বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম জয়

১৯৭৫ সালের ১১ জুন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম জয় পায় ভারত। যদিও পরাজিত করে দুর্বল প্রতিপক্ষ পূর্ব আফ্রিকাকে। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১২০ রানে অল আউট হয়ে যায় পূর্ব আফ্রিকা। অনবদ্য বোলিং করেন মদন লাল এবং বিষেণ সিং বেদি। ১৫ রানের বিনিময়ে মদন লাল তুলে নেন ৩ উইকেট। বিষেণ সিং বেদির বোলিং ফিগার ১২-৮-৬-১। জবাবে ব্যাট করতে নেমে কোনও উইকেট না হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় ভারত। সুনীল গাভাসকর ৬৫ এবং ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার করেন ৫৪ রান। এই একমাত্র জয় ছাড়া ভারতের  পারফরম্যান্স নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। 

সেরা ব্যাটিং

১৯৭৫ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে শাসন করেন গ্লেন টার্নার। এই বিশ্বকাপে তিনি করেন ৩৩৩ রান। ইস্ট আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৭১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন এই নিউজিল্যান্ড ব্যাটার। অন্যান্য ব্যাটারদের মধ্যে নজর কেড়েছিলেন অ্যালভিন কালিচরণ যিনি ডেনিস লিলির অ্যাটাকের বিরুদ্ধে ৭৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের ৮৫ বলে ১০২ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসও স্মৃতিতে অটুট।

সেরা বোলিং    

১৯৭৫ বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ আসলেই যে ক্রিকেটারের নাম বারবার আসে তিনি হলেন গ্যারি গিলমর। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হেডিংলে-তে সিমিং কন্ডিশনে গ্যারি গিলমরের বোলিং ফিগার-৬/১৪। একে একে তুলে নেন ডেনিস অ্যামিস, ব্যারি উড, টনি গ্রেগ ফ্র্যাঙ্ক হেইস প্রমুখকে। বিশ্বকাপ ফাইনালেও ৫ উইকেট নেন গ্যারি গিলমর।

বিতর্ক

ওভালে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চলাকালীন একদল শ্রীলঙ্কান তামিল মাঠে ঢুকে যায় এবং পিচে গিয়ে শুয়ে পড়ে। এরপর ব্যানার দেখিয়ে তাঁদের ওপর রাজনৈতিক অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। খুব দ্রুতই তাদের মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুনরায় খেলা শুরু হয়। 

অভিষেক

জাভেদ মিয়াঁদাদের অভিষেক হয় এই বিশ্বকাপে। এরপর আরও পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেন তিনি। এই বিশ্বকাপের সময় অক্সফোর্ড-কে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন এবং পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন অন্যতম তারকা ইমরান খান। তাঁর খেলা পাঁচটি বিশ্বকাপের মধ্যে এটি প্রথম বিশ্বকাপ।

বিদায়

লিলি-থমসন-মার্শ শেষবারের মতো একসঙ্গে বিশ্বকাপ খেলেন। এই বিশ্বকাপের পরই রোহন কানহাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। ফাইনালে তাঁর করা ৫৫ রানের অতিমূল্যবান ইনিংস এবং ক্লাইভ লয়েডের সঙ্গে ম্যাচ নির্ধারক পার্টনারশিপ এখনও মনে রেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। ইংল্যান্ডের অ্যামিস, অ্যালন নট, টনি গ্রেগ, স্নো এবং মাইক ডেনেস তাঁদের শেষ বিশ্বকাপ খেলেন। মাইক ডেনেস এরপর মাত্র একটি টেস্ট খেলেন।

বিশ্বকাপ ফাইনাল

২১ জুন মিডসামারে ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে এই বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হয় রাত ৮টা ৪২-এ। প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ২৯১। ক্যাপট্যান্স নক খেলেন ক্লাইভ লয়েড(১০২)। রোহন কানহাই-কে সঙ্গে নিয়ে ১৪৯ রানের পার্টনারশিপও করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নামলে অ্যালন টার্নার(৪০), ইয়ান চ্যাপেল(৬২), ডুগ ওয়াল্টার্স(৩৫) এবং রস এডওয়ার্ডস(২৮) নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একসময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২৩৩/৯। এরপর শেষ উইকেটে লিলি-থমসনের ৪১ রানের পার্টনারশিপ হয়। কিন্তু তাতে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৭ রানে হারতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। অনবদ্য ব্যাটিং-এর জন্য ম্যাচের সেরা হন ক্লাইভ লয়েড।

RELATED ARTICLES

Most Popular