নয়াদিল্লি: দেশের আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, সে তিনি যেই হন না কেন। সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষও (Constitutional Authority) কখনও এই কথা বলতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এই কথা বলেছে। দেশের শীর্ষ আদালতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের (Uttar Pradesh Government) পক্ষ থেকে একটি আবেদন (Plea) দাখিল করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের ( Convicts Serving Life Terms) সাজা কমানোর (Remission) বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালকে (Governor) যে তিন মাসের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা যেন আদালত তুলে নেয়। রাজ্যপালকে এইভাবে নির্দিষ্ট সময়সীমার গেরোয় না বাঁধার অনুরোধ করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের কাছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই আর্জি দেশের শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিয়েছে।
দেশের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড় (Chief Justice of India Dhananjaya Y Chandrachud)-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, সাজা মকুবের ২,২৪৮টি মামলার বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইন প্রতিটি কর্তৃপক্ষের জন্য সমান এবং আইন মেনে চলার জন্য সকলেই সমানভাবে বাধ্য। সংবিধান এটাই নিশ্চিত করে যে সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের (Constitutional Functionaries.) স্তরে যেন এরকম কোনও ফাঁকফোকড় (Vacuum) না থাকে। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি পিএস নরসীমা (Justices PS Narasimha) এবং বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা (Justice JB Pardiwala)।
আরও পড়ুন: Virender Sehwag: আদানির পাশে দাঁড়িয়ে হিন্ডেনবার্গকে আক্রমণ বীরুর
বেঞ্চের বক্তব্য, “সাংবিধানিক স্তরে কোনও ফাঁকফোকড় নেই। সর্বস্তরের সিদ্ধান্ত অন্য কোনও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরীক্ষা হওয়া উচিত… আমাদের সংবিধান এতটাই দূরদর্শী (Prescient)। কেউ একজন সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ মানে এমন নয় যে তিনি আইনের ঊর্ধ্বে।”
সুপ্রিম কোর্ট উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশে বলেছিল, যে সমস্ত বন্দিদের সাজা মকুব করে অকাল মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তারা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রাসঙ্গিক নীতি (Relevant Policy of the State) মোতাবেক মুক্তি পাওয়ার যোগ্য কিনা, তা তিন মাসের মধ্যে খতিয়ে দেখে জানাতে হবে। এই বিরুদ্ধেই আদালতে আবেদন করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের এই পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ (Observations and Directions)।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষে মামলা লড়া রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল আইনজীবী অর্ধেন্দুমৌলি কুমার প্রসাদ (Advocate Ardhendumauli Kumar Prasad) নির্ধারিত সময়সীমার কথা উল্লেখ করে আদলতের সামনে যুক্তি দেন, “কোর্ট তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি শেষ পর্যন্ত রাজ্যপালের কাছেই যাবে এবং রাজ্যপাল সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ। আমি এটা বলতে চাইছি, যদি এই কারণে দেরি হয় (রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করলে), আমরা আদালত অবমাননার দায়ে (Contempt of Court) কোর্টে ফিরে আসতে চাই না।”
তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতিদের বক্তব্য, “এই কথা বলবেন না যে সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষকে আইনের গেরোয় বাঁধা নন। এই কথা আপনি বলতেই পারেন না যে আমি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ, তাই আমি আইনের ঊর্ধ্বে (Above The Law)।” পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালত এটাও উল্লেখ করেছে, এমন অনেক বন্দি রয়েছে, যারা সাজা মকুবের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বন্দিদশায় পড়ে রয়েছে। কারণ হয় তাদের মধ্যে সচেতনতা নেই, আর নাহলে তাদের আবেদন করার মতো জোর নেই।