কলকাতা: কালবৈশাখী ঝড়ে (Thunder Storm) মধ্যবিত্তের স্বস্তি এলেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা চা বাগান (Tea Garden), আমচাষ (Mango) ও সবজি চাষে (Vegetable)। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়তে পারে দার্জিলিংসহ (Darjeeling) ডুয়ার্সের (Dooars) চা বলয়ে। গত কয়েকদিন থেকেই মূলত পাহাড়ি এলাকায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সক্রিয় রয়েছে। যার ফলে আগামী কয়েকদিনও বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ের সম্ভাবনা আছে (Weather Forecast)।
বুধবার দুপুর থেকেই পাহাড়ের আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। শুরু হয় বৃষ্টিপাত এবং তার পাশাপাশি পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্স-এর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শুরু হয় প্রবল শিলাবৃষ্টি। শিলাবৃষ্টির ফলে চা গাছের উপর সাদা আস্তরণ পড়ে যায়। যেটা চা শিল্পের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। প্রথম শ্রেণির চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যা প্রভাব ফেলতে পারে। এবছর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে পাহাড়ে ৬৬ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ছিল। শীতকালীন বৃষ্টির পরিমাণের উপর দার্জিলিং চায়ের মান এবং পরিমাণ নির্ভর করে। শীতকালীন অনাবৃষ্টিতে এ বছর চা শিল্পের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। এর উপর শিলাবৃষ্টিতে চা শিল্প আরও ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল হল। আগামী কয়েক দিনেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে যদি আবারও শিল পড়ে তবে চা শিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Weather Updates | আজও কালবৈশাখীর সম্ভাবনা মহানগরীতে
যে চা গাছগুলোতে কলম কাটা হয়েছে, সেই গাছগুলোর সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন পাতা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং একইসঙ্গে কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ডালগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। উপরন্তু এর পরে রোদ উঠলে মাইক, লুপার, গ্রিন ফ্লাই সহ একাধিক পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যেই প্রিমিয়াম ফার্স্ট-ফ্লাশ চায়ের জন্য চা পাতা তোলা শুরু হয়েছে। মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে উৎপাদিত ফার্স্ট-ফ্লাশ চায়ের সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক বাজারে।
এই সময়ে উৎপাদিত ফার্স্ট-ফ্লাশ চা, বার্ষিক উৎপাদিত চায়ের ২০ শতাংশ হয়। বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় চায়ের বার্ষিক ফলনের ৪৫ শতাংশ এবং শরতে মোট উৎপাদনের ১৫ শতাংশ। গত ৩০ বছরের নিরিখে এবার পাহাড়ে ২২% বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই এ বছর ফলন কম এবং দামও কম, আশঙ্কা কমার চায়ের গুণগত মানের। উপরন্তু শিলাবৃষ্টি সেই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সব মিলিয়ে এবার গভীর সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে চা বলয়।
অন্যদিকে, কালবৈশাখীর দাপট এবং শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুল থেকে সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট সীমান্ত থেকে সুন্দরবনের ১০টি ব্লকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ৪০ মিনিট ধরে কালবৈশাখীর ঝড়, সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ শিল পড়ায় রীতিমতো ক্ষতি হয়েছে আমের মুকুলের। যেসব গাছে আমের গুটি ধরেছে, তার উপর শিল পড়ে নষ্ট হতে পারে আমের ফলন।
সবজি বিশেষ করে সজনে ডাঁটা, পটল, উচ্ছে, কাঁচালঙ্কা, ঝিঙে সহ বিভিন্ন সবজি শিল পড়ে নষ্ট হতে বসেছে। রোদ উঠলেই সেগুলোয় পচন ধরবে, এমনটাই জানাচ্ছেন কৃষকরা। ঝড়ের প্রচণ্ড দাপট সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, বসিরহাট ১, ২ নম্বর ব্লক সহ প্রায় ১০টি ব্লকের বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক অঞ্চলগুলোতে। সকালবেলায় কৃষকরা মাঠে গিয়ে দেখেন প্রচুর পরিমাণে সবজির ক্ষতি হয়েছে।