নয়াদিল্লি: কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা (Employment Guarantee), নাকি দাস শ্রম (Employment Guarantee) প্রথা? কাজ করেও টাকা নেই। আর দেওয়া হলেও, মোট কর্মদিনের টাকা (Total Work Days) মিলছে না। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের জমানায় দেশের বাস্তবচিত্রটা এমনই। ১০০ দিনের নিশ্চিত মজুরির কর্মসংস্থানে সারা সপ্তাহ কাজ করেও, মিলছে ৩ দিন কিংবা ৪ দিনের টাকা। হ্যাঁ, মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম (Mahatma Gandhi National Rural Employment Guarantee Scheme – MGNREGA)-এর হাল এরকমই বিজেপি আমলে (BJP Era)। আর তার কারণ হল, মনরেগা প্রকল্পের অধীনে টাকা দেওয়ার জন্য যে অ্যাপ খুলছে কেন্দ্র, তা ঠিকমতো কাজ করছে না। অথচ কেন্দ্র সরকারের (Central Government) কোনও হুঁশ নেই। বিরোধীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার (Digital India) নারা ফেইল। গরিবরাই বঞ্চিত হচ্ছেন এর ফলে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট, কাল থেকে ৩ দিনের জঙ্গলমহল সফরে মমতা
১০০ দিনের কাজের বাস্তব চিত্রটা কী?
বিহারের মুজফ্ফরপুরের (Muzaffarpur, Bihar) কথা। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো বিহারেও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চলে। সেখানকার শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, কাজ করানো হচ্ছে সপ্তাহে ৬ দিন, অথচ টাকা মিলছে না প্রতিশ্রুতি মতো। মনরেগা প্রকল্পে শ্রমিকদের হাজিরা খাতা হিসেবে ন্যাশনাল মোবাইল মনিটরিং সফটওয়্যার (National Mobile Monitoring Software – NMMS) অ্যাপ চালু করা হয়েছে, কিন্তু এই ডিজিটাল অ্যাটেন্ডেন্স অ্যাপ (Digital-Attendance App) ঠিক মতো কাজ করে না। কখনও ছবি আপলোড (Photo Upload) হয় না তো, কখনও হাজিরা নথিবদ্ধ হয় না। সেই কারণে কাজ করেও বেতনহীন থাকছেন শ্রমিকরা।
রামদুলারি দেবী (Ramdulari Devi) ৬ দিনের কাজ করে ৪ দিনের টাকা মজুরি পেয়েছেন। রঞ্জনা দেবী (Ranjana Devi) ৬ দিন কাজ করে পেয়েছেন ৩ দিনের মজুরি। তাঁর অভিযোগ অ্যাপে কখনও ছবি আপলোড হয়, আবার কখনও হয় না। মঞ্জু দেবী (Manju Devi) অভিযোগ করেছেন, সার্ভার সমস্যার (Server Problems) জেরে ৬ দিন কাজ করে তাঁর ভাগ্যে জুটেছে ৪ দিনের টাকা। ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করা ভুখারি রাম (Bhukhari Ram) নামে এক ব্যক্তির বক্তব্য, ৬ দিন কাজ করে ৩ দিনের টাকা মিলেছে। এখানে উল্লেখ্য, বিহারে মনরেগার প্রকল্পে মজুরি দিনে ২১০ টাকা। অর্থাৎ ৬৩০ টাকা সপ্তাহে আয় তাঁর। সেখানে নাগিনা দেবী (Nagina Devi) ৬দিন কাজ করে মাত্র ৯০০ টাকা পেয়েছেন। খুশবু দেবী (Khushbu Devi) নামে এক মহিলা ৬ দিন কাজ করে ৩ দিনের টাকা পেয়েছেন। সবার সমস্যা একই, কখনও অ্যাপে গ্রুপ ফটো আপলোড হয়, আবার কখনও সার্ভার সমস্যার কারণে ছবি আপলোড হয় না। ফলে কাজ করেও জোটে না প্রাপ্য মজুরি। এটা শুধু প্রহ্লাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের (Prahladpur GP) বাস্তব চিত্র। এরকম আরও অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এরকম আরও অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অ্যাপের সার্ভার সমস্যার কারণে।
আরও পড়ুন: Narendra Modi and BBC: একসময় বিবিসিতে ভরসা ছিল, প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভোল বদল, সমালোচনা বিরোধীদের
কেন্দ্রের বঞ্চনা
কেন্দ্রীয় গ্রমোন্নয়ন মন্ত্রক (Ministry of Rural Development) দাবি করে আসছে, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু এনআরইজিএ সংগ্রাম মোর্চা (NRGEA Sangram Morcha) সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের আরও বক্তব্য, এবার কেন্দ্রীয় বাজেটে দেশের গ্রামাঞ্চলে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তাকে যথেষ্ট বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ (Nirmala Sitharaman, Minister of Finance of India)। এবার ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত চার বছরের তুলনায় এই বরাদ্দ সবচেয়ে কম। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে বারবার অভিযোগ ওঠে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা না পাঠানো নিয়ে। এছাড়া, কেন্দ্র বরাদ্দ কমিয়েছে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক প্রকল্পে। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি যে সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের গ্রামীণ কর্মসংস্থানের হার ৬.৫ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এনআরইজিএ সংগ্রাম মোর্চা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে দেওয়া একটি খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছে, ওই বিবৃতি বিভ্রান্তিকর (Misleading)।