বড়ঞা: নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha) । শুধু নিয়োগ দুর্নীতি নয় গরু পাচারকাণ্ডেও যোগ রয়েছে এই তৃণমূল বিধায়কের। বিধায়কের মুর্শিদাবাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছে সিবিআই (CBI)। প্রথম থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন বিধায়ক। তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় বাড়ির পুকুরে নিজের দুটি মোবাইল ফোন ফেলে দেন তিনি। পুকুরের জল সেঁচে সিবিআই অধিকারিকরা মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এই তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির পুকুর নিয়ে চর্চার অন্ত নেই। স্থানীয়রা ওই পুকুরকে সোনারপুকুর নাম দিয়েছে।
ষাটের দশকের রাজ্যের ক্ষমতায় বসে কংগ্রেস। এই সময় থেকেই বাংলার রাজনীতিতে নিজেদের জায়গাকে শক্ত করে একটু একটু করে মাথা তুলতে শুরু করেছে বামশক্তি। সারা রাজ্যের মতো মুর্শিদাবাদে হারাধন মহন্ত, আব্দুল মিঞা, কালোবরণ ঘোষেদের নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে বাম আন্দোলন। অন্য দিকে, সেই সময় যুব কংগ্রেস নেতা সুনীল ঘোষের ছায়াসঙ্গী ছিলেন সাতকড়ি সাহা। সম্পর্কে তিনি জীবনকৃষ্ণের দাদু ছিলেন। সেই বাড়িই ঘেরাও করেছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। ফসল ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলার জের গড়ায় অনেক দূর। আশঙ্কা জন্মায় যো তাঁর সমস্ত লুঠ করতে পারে আন্দোলনকারী কৃষকেরা। নিজের বাড়ির পুকুরে ফেলেন পুটলি ভর্তি সোনাদানা। স্থানীয়রা বলছেন, সেদিন পুকুরে দু’ পুটলি গয়না ফেলে দিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণের দাদু সাতকড়ি। এর এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হতে পুকুরের জল ছেঁচে তুলেছিলেন সোলার পুটলি। তার পর থেকেই স্থানীয়রা ওই পুকুরকে সোনারপুকুর নামে ডাকে।
সেই ষাটেরদশক থেকে ২০২৩ সাল গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। সেই সাতকড়ি সাহার বাড়ি থেকে সোমবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এত বছর পর দাদপর জুতোতে পা গলালো জীবনকৃষ্ণ। দাদুর কায়দায় বাড়ির সেই পুকুরেই মোবাইস জুড়ে ফেলে তথ্য লোপাটের চেষ্টা জীবনের। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। টানা ৩৮ ঘণ্টার চেষ্টায় পুকুর থেকে উদ্ধার হয় মোবাইল। স্থানীয়রা বলছে জীবনের এই কাণ্ড তার দাদুর স্মৃতা ফিরিয়ে আনল নাতি।
আরও পড়ুন:TMC| তৃণমূল কাউন্সিলরকে বেধড়ক মারধর ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা
বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে তেল ডুমা গ্রামে থাকতেন সেই সময়কার দাপুটে বাম নেতা কালোবরণ ঘোষ। তার সঙ্গে দীর্ঘ ২৮ বছর কাটিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।তাঁর কথায়, জীবনের যে পুকুর থেকে সিবিআই মোবাইল উদ্ধার করল, ষাটের দশকে ওই পুকুর থেকেই সোনা উদ্ধার করেছিলেন তৎকালীন আরএসপি নেতা কালোবরন ঘোষ। এই কথা শুনেছিলাম ওঁর মুখেই। এলাকার অন্য প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, সেই সবাই সাতকড়ির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। আমাদের সবাইকে প্রাপ্য ভাগ থেকে বঞ্চিত করে জমির ফসল কেটেছে সাতকড়ি। গ্রামবাসীরা সবাই রাগে ফুঁসছে। এমন সময় সাতকড়ি এজবেস্টারের চাল পেরিয়ে পুকুরের দিকে এসে তিন চারটে পুটলি পুকুরে ছুড়ে ফেলল। আমরাও সেদিকে গিয়ে দেখি জলে ডুবে গেছে পুটলি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমরা অবশ্য কিছু পাইনি। পরে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ কমলে জল ছেঁকে সেই পুকুর থেকে সোনা তুলেছিলেন সাতকড়ি।
প্রসঙ্গত, সোমবার ভোরে গ্রেফতারের পর জীবন কৃষ্ণকে নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতায়। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে নেমে জীবন কৃষ্ণের নাম উঠে আসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha) অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। অনুব্রতের গ্রেফতারের পর থেকেই সিবিআই স্ক্যানারে ছিলেন তৃণমূলের এই বিধায়ক। বীরভূমে জীবনের একাধিক সম্পত্তির হদিশও মিলেছে। তদন্তকারীরা গরু পাচারে জীবনের ভূমিকা খতিয়ে দেখছিলেন। সিবিআই সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম থেকে গরু মুর্শিদাবাদ হয়েই পাচার করা হত। এই গরু যখন জীবনকৃষ্ণের এলাকা দিয়ে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হত, তখন তিনিও সেখান থেকে টাকা তুলতেন বলে জানতে পেরেছে সিবিআই। জীবনের বাড়ি থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি সিবিআই-এর। জীবনের মোবাইল ও পেন ড্রাইভেও এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। উদ্ধার হওয়া নথি থতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।