কলকাতা: কাকদ্বীপ থেকে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি প্রকল্পের সুবিধার কথা তুলে ধরে রাজ্যের মানুষকে তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতানোর ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্যই ছিল বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম। যার মধ্যে কংগ্রেস এবং সিপিএম লোকসভা ভোটে বিজেপি সরকারকে উৎখাতের যে প্রয়াস চলছে, তার অন্যতম শরিক। মমতার কথায়, ওরা সর্বনাশা, বুদ্ধিনাশা। বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে যে হিংসা হয়েছে, তার জন্য এদিন বিরোধীদেরই কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাষণের এক পর্বে তৃণমূল নেত্রী এও বলেন যে, বিজেপির কোলে কংগ্রেস দোলে, কংগ্রেসের কোলে বিজেপি দোলে। আগামী শুক্রবার, ২৩ জুন, পাটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির যখন মহাবৈঠক বসতে চলেছে, তার মাত্র এক সপ্তাহ আগে মোদি বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ তৃণমূল নেত্রীর এহেন মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: Panchayat Election | Mamata Banerjee | এত শান্তিতে মনোনয়ন আগে কখনও হয়নি, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে স্তরের হিংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়েছে তা নিয়েও কংগ্রেস নেতৃত্বর খুশি হওয়ার কথা নয়। জোট নেতৃত্বের অন্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সঙ্গে প্রায় রোজই হানাহানি, রক্তারক্তি চলছে রাজ্যে। পাটনা বৈঠকের আগে এই ইস্যু নিয়েও মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আইন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপেও বিরোধী জোটে ঘোঁট পাকতে শুরু করেছে। শেষপর্যন্ত ভোটের মুখে ফের অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ইস্যু উসকে দিয়ে বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করার যে রণকৌশল বিজেপি নিয়েছে, তাতে পাটলিপুত্রের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে এখনই প্রশ্নচিহ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের জনজোয়ার কর্মসূচির ছিল শেষদিন। সেই অনুষ্ঠানে অভিষেকের সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদকের ভাষণের পর বলতে ওঠেন মমতা। বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় তির বিঁধে তিনি বলেন, এখন বড় বড় কথা! যখন তোমরা ক্ষমতায় ছিলে, তখন মানুষ মারাই ছিল তোমাদের ক্ষমতা। আর তোমাদের দাম্ভিকতা। এরপরেই মমতা বলেন, সিপিএমের কোলে কংগ্রেস দোলে…। মমতার কথায়, তৃণমূলের যে সম্পদ আছে, তা কোনও দলের নেই। অন্য দলের কেবলমাত্র আপদ আছে। আপদ বিদায় করতে হবে। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই চারজনের জামানত বাজেয়াপ্ত করে দিন।
আমরা কথা দিচ্ছি, ২০২৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে আমরা চেয়ার থেকে সরাবই। চারদল বলতে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম এবং আইএসএফকে বোঝাতে চেয়েছেন মমতা। বাংলাই পারে, বাংলাই পারবে বলে মোদি বিরোধী লড়াইয়ে তৃণমূলের গুরুত্বের কথাই মমতা তুলে ধরতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। পর্যবেক্ষকদের মতে, পাটনা বৈঠকের প্রক্রিয়া যখন অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, তখন আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে মমতার এই মন্তব্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে জোট বার্তায়। তাতে আখেরে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট গঠনের প্রয়াস শুরুতেই ধাক্কা খেতে পারে।