কলকাতা: লক্ষ্মণ রেখা সবাইকেই মেনে চলতে হবে বলে বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। মঙ্গলবার রাতে শিবপুর ডালখোলা রিষড়ার সাম্প্রতিক অশান্তি নিয়ে রাজভবনে (Raj Bhavan) সাংবাদিক বৈঠক (Press Conference) করেন রাজ্যপাল (Governor)। যেখানেই তিনি বলেন, রাজ্যে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। বরদাস্ত করা হবে না কোনও গুন্ডামি। যারাই আইন শৃঙ্খলা ভাঙবে তাদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে। মানুষের শান্তিতে থাকার সমস্ত অধিকার আছে, আছে বাঁচার অধিকার। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। রাজ্যপাল বলেন, গণতন্ত্রে সকলে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে শান্তি চাই। আমার মতো সব সাধারণ নাগরিকই শান্তিতে বসবাস করতে চায়।
রামনবমী মিছিল ঘিরে গত ক’দিন ধরেই উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা, হাওড়ার শিবপুর, হুগলির রিষড়ায় অশান্তি চলছে। হাওড়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। রোববার এবং সোমবার রিষড়ায় অশান্তি ছড়ায় রামনবমী মিছিলকে কেন্দ্র করে। রবিবার শিলিগুড়ি থেকেই রাজ্যপাল রিষড়ার ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দেন। রবিবার রামনবমী ওই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাঁর অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশের চোখের সামনে ইটবৃষ্টি হয়, বোমাবাজি চলে মিছিলকারীরা ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। দিলীপ আরও জানান, তাঁর গাড়িতেও হামলা হয়। নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। শাসকদলের পাল্টা অভিযোগ দিলীপের প্ররোচনাতেই রবিবার রিষড়ায় গোলমাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari | রাজ্যপালের ভূমিকায় বেজায় চটেছেন শুভেন্দু, কী বললেন জেনে নিন
সোমবার রাতে ফের রিষড়ায় একপ্রস্ত অশান্তি চলে। বোমাবাজি অগ্নিসংযোগ ঘটে। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে রাজ্যপাল কলকাতায় ফায়ার আসেন। বিমানবন্দর থেকেই তিনি সোজা রিষড়ায় চলে যান। সেখানে রাজ্যপাল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানেও তিনি বলেন, রাজনীতিতে দূর্বৃত্তায়ন কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। রাতে রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠকেও একই কথা বলেন তিনি।
এদিকে রাজ্যের ১৩ জন বুদ্ধিজীবী এক খোলা চিঠিতে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিন্দা করেন। তাতে বলা হয়েছে রামনবমীকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নাগরিক হিসেবে এতে আমরা শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করছি। সেই সঙ্গে আরও লেখা হয়েছে সাধারণ মানুষের প্রাণ এবং সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। সেই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকারও তীব্র নিন্দা করছি। চিঠিতে মেরুকরণের হিংস্র রাজনীতি বন্ধ করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক হস্তখেপেরও দাবি করা হয়েছে। সেই চিঠিতে সই করেছেন অপর্ণা সেন, সুমন মুখ্যোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, সুজন মুখ্যোপাধ্যায়, রেশমি সেন, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋদ্ধি সেন, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলান গাঙ্গুলি, শ্রীকান্ত আচার্য, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অনুপম রায় এবং সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়।