কলকাতা: তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইডি (ED), সিবিআইয়ের (CBI) দরকার পড়বে না, নিজেই আত্মাহুতি দেবেন। এমনটাই জানালেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) (ববি)। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে ফের তৃণমূলের (TMC) ভিতের বাইরে জল্পনা শুরু হয়েছে সোমবার।
এদিন কেওড়াতলা মহাশ্মশানে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের জন্মদিবসে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন মেয়র। সেখানেই কলকাতা পুরসভার (Kolkata Corporation) বিরুদ্ধে নানা বেনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে মেয়র বলেন, বিরোধীরা অভিযোগ করতেই পারেন। তাতে আমার কোনও কিছু বলার নেই। তবে ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে যেদিন অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সেদিন ইডি, সিবিআই কারও দরকার হবে না। ফিরহাদ নিজেই নিজেকে বলি দিয়ে দেবে।
সম্প্রতি গাড়ির পার্কিং ফি বৃদ্ধির পুর সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়রকে পিছু হঠতে হয়। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তিনি বিষয়টি জানতেন না। ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে পুরসভাকে। গুড ফ্রাইডের ছুটির দিনেই পুরসভা বিজ্ঞপ্তি জারি করে পার্কিং ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে। তার আগে ফিরহাদ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী চাইলে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেব। তবে এখনও পর্যন্ত আমার কাছে কোনও নির্দেশ আসেনি। মেয়র বলেন, বিষয়টি আমাকে বলা যেত। সাংবাদিক সম্মেলনে তা আসা উচিত হয়নি।
শনিবার দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ফি বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিতর্ক এখন ক্লোজড চ্যাপ্টার। ববিও বলেন, ক্লোজড চ্যাপ্টার। আমার আর কিছু বলার নেই।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court| কম্বল-কাণ্ডে জামিন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্রর
রবিবার চেতলায় নিজের ওয়ার্ডে একটি রক্তদান শিবিরে মেয়র বলেন, আমার বয়স হচ্ছে। ২৫ বছর ধরে আমি কাউন্সিলর হিসেবে আপনাদের সেবা করছি। আমার বয়স হয়ে গিয়েছে। এখন নতুন প্রজন্ম আসবে। মানুষ আসবে যাবে। উন্নয়ন থাকবে। তবে ফি বৃদ্ধি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ববির বক্তব্য সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ রবিবার বলেন, ববিদা প্রবীণ নেতা, দলের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। প্রশাসনে তাঁর বহুদিনের অভিজ্ঞতা। তিনি অনিঃশেষ জীবন দর্শনের কথা বলেছেন। এর সঙ্গে ফি বিতর্কের কোনও সম্পর্ক নেই।
তৃণমূলের অন্দরে আদির সঙ্গে নব্যর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে অনেকদিন ধরেই। নবীন প্রজন্ম ববির কাজকর্ম নিয়ে খুব একটা খুশি নয়। এবারও তিনি মেয়র হন, চাইছিলেন না অনেক নবীন নেতাই। শেষ পর্যন্ত নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপেই তিনি মেয়র পদে অভিষিক্ত হন।
দলের অন্দরের খবর, পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Avishek Banerjee)। তিনিই নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারপরই নেত্রীর নির্দেশে কুণাল সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ এবং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা জানান।
সম্প্রতি কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ববিকে পুরসভা ছাড়া অন্য সব বিষয় নিয়ে কথা না বলার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে ববি পুরসভা ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কথা বলছেন না। গত সপ্তাহেই তিনি বলেছিলেন, কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে। সোমবার ববির মন্তব্যে ফের পরিষ্কার হল, বিতর্কে কোনও ছেদ পড়েনি।