চন্দ্রকোনা: মায়ের পুজোতে লাগে না পুরোহিত এখানে আপনিই পুরোহিত। প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার কালী মা ভক্তদের কাছে ক্ষীরপাইয়ের বড়মা( Khirpai Boro Maa kali) নামেই পরিচিত।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই পুরসভার চিরকুনডাঙ্গা এলাকায় রয়েছেন কংক্রীটের তৈরি ৪৫ ফুট উচ্চতার বিশালাকার কালী প্রতিমা। যা ভক্তদের কাছে ‘বড়মা’ নামেই পরিচিত। এবছর বড়মায়ের পুজো ২১ বছরে পড়বে। শুধু চন্দ্রকোনা নয় জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলার মানুষও এই কালী মাকে বড়মা নামেই জানে। ক্ষীরপাই এর বড়মার পুজোর অপেক্ষায় থাকে অগনিত মানুষ। পুজোর সময় স্থানীয় আশপাশের মানুষ ছাড়াও জেলা ও ভিন জেলার দুরদুরান্তের মানুষও ভিড় জমায় ক্ষীরপাই বড়মার পুজোয়।শ্মশানকালী হলেও এই পুজোয় বলি হয়না। সমস্ত রীতি মেনেই এখানে পুজো হয়।পুজোর পরের দিন হাজার হাজার মানুষ আসে মায়ের খেচুড়ি প্রসাদ খাওয়ার জন্য।
২০ বছর আগে শশ্মানের উপর বড়মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ওই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা শুদ্ধদেব রায়। প্রথমে মাটির চালায় প্রতিমা তৈরি করে পুজোর শুরু করেন প্রতিষ্ঠাতা শুদ্ধদেব রায়,যা ছোটো মা নামেই ডাকা হয়। তবে বন্যা কবলিত এলাকা হওয়ায় একবার বন্যায় ছোটো মায়ের মাটির চালা ডুবে গিয়ে মুর্তি ভেঙে যায়,যদিও মায়ের একটি ভাঙা হাত রয়ে গিয়েছিল যা আজও ছোটো মায়ের নতুন মুর্তির পাশে রাখা রয়েছে।পরে ছোটো মায়ের পাশেই ৪৫ ফুট উচ্চতার কংক্রীটের মায়ের মুর্তি নির্মান করে মন্দির স্থাপনা হয়। যা জেলা কেনো রাজ্যও এতো বড় মাপের কালী প্রতিমা নেই বলেই মত প্রতিষ্ঠাতা থেকে অগনিত ভক্তদেরও। সবার কাছেই তা ক্ষীরপাই বড়মা নামেই পরিচিত।অমবস্যা তিথি ছাড়া বড়মায়ের মন্দিরে থাকেনা কোনও পুজারী।
আরও পড়ুন: ১০০ বছর, নৈহাটির বড়মার পুজোয় কী কী অভিনবত্ব
তিথির সময় ছাড়াও প্রতিদিন প্রচুর মানুষ মায়ের দর্শনে আসেন।তারাই নিজেরাই নিজের মতো করে মায়ের পুজো দিতে পারে পুরোহিত ছাড়াই।ভক্তদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় মন্দিরের পুজো আর্চনার কাজ।যে যার নিজের মতো করে নিজে হাতে পুজো দেয় বড়মাকে।আর এজন্যই প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম লেগেই থাকে।বিশালাকার কালী মন্দিরের বৈশিষ্ট্য নজরকাড়ে সকলেরই। আগত ভক্তদের নিষেধ আছে কোনও রুপ দক্ষিনা না দেওয়ার ক্ষেত্রে,কোনও প্রণামী বক্সের ঠাই নেই মন্দিরে।কোনও রুপ আর্থিক সাহায্য করা বা দক্ষিনা হিসাবে কোনও পয়সা দেওয়া যাবেনা মন্দিরে তা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্দির চত্বরে।পুরোহিত ছাড়াই ভক্তরা নিজের মত করে মাকে নিজে হাতে পুজো দিতে পেরে তৃপ্তি পাই বলেই মত আগত ভক্তদের।
ক্যালেন্ডার মতে প্রতি অমাবস্যায় পুজো হয় আর এসময়ও দুরদুরান্তের প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় মন্দিরে।অনেক ভক্তের দাবী মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে তা পুরন হবেই।বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের জন্যও অনেকে মায়ের স্মরনাপন্ন হয় এবং অনেকের দাবী তাতে বিমুখ হয়নি কেউ।’অর্থের বিনিময়ে নয় নিজে হাতে পুজো করুন মাকে যাচাই করুন ‘মন্দীরে লেখা এমনই বানী চোখে পড়বে সকলের।বিশালাকার কংক্রীটের বড় মায়ের এক হাতে রয়েছে পৃথিবী আর এক হাতে রয়েছে সাদা পায়রা,বাকি দুই হাতে কারতান ও মুন্ডচ্ছেদ।মায়ের রুদ্র রুপের পাশাপাশি,ধরিত্রীর রক্ষাকর্তা ও শান্তির বাহক হিসেবে একহাতে পৃথিবী ও অপর হাতে পায়রা রয়েছে বলে জানাযায়।কালী পুজোর দিন বড়মার মন্দিরে হাজারও ভক্তসমাগম হয়ে থাকে। কালী পুজো,পুজোয় জাকজমক না থাকলেও ভক্তদের আরাধনায় প্রতিবছর কালী পুজো গমগম করে ক্ষীরপাইয়ের বড়মা।
আরও অন্য খবর দেখুন