সিমলা: হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সুখবিন্দর সিং সুখু (Sukhvinder Singh Sukhu)। গান্ধী পরিবারে অত্যন্ত অনুগত, প্রদেশ কংগ্রসের প্রাক্তন সভাপতি সুখুর নাম শনিবারই স্থির করা হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাহুল (Rahul Gandhi) ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (Priyanka Gandhi), দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে।
রাহুল এদিন ছিলেন রাজস্থানের বুঁদিতে। সেখানে সকাল ৬টায় ৯৫-তম দিনের ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেন। ১৩ কিমি পদযাত্রা করে তিনি সোজা চলে আসেন সিমলায়। সেখানে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েই আবার সন্ধ্যার আগে ৯কিমি পদযাত্রায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ।
আরও পড়ুন: Delhi BJP chief Adesh Gupta quits: ইস্তফা দিলেন দিল্লি বিজেপির সভাপতি আদেশ গুপ্তা
হিমাচলের পঞ্চদশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এদিন শপথ নেন সুখবিন্দর সিং সুখু। তাঁর সঙ্গে উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মুকেশ অগ্নিহোত্রী। উল্লেখযোগ্য হল, শপথ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রতিভা সিংও। শপথ অনুষ্ঠানে এসে প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমরা খুবই খুশি। আমরা ভোটের আগে যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, তা পূর্ণ করব। এদিন শপথ অনুষ্ঠান দেখতে সিমলার রিজ ময়দানে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
শপথ নেওয়ার পর উপ মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী বলেন, পুরনো পেনশন প্রকল্প সহ সব প্রতিশ্রুতি আমরা রাখব। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। মানুষের মনে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে, বিজেপিকে হারানো যায় না। আমরা সেই রথ থামিয়ে দিয়েছি।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে সিমলার রিজ ময়দানে অনুষ্ঠানটি হবে। সুখু ছাড়াও উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন মুকেশ অগ্নিহোত্রী। পরে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করা হবে। প্রসঙ্গত, শনিবার সুখুর নাম অনুমোদন করে কংগ্রেস হাইকমান্ড (High Command)। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর সুখুর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মুকেশ অগ্নিহোত্রী (Mukesh Agmihotri) হচ্ছেন উপ মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও চারবারের বিধায়ক সুখবিন্দর বলেন, আমি এবং মুকেশ একসঙ্গে কাজ করব। কংগ্রেস আমার জন্যে যা করেছে তা কোনওদিন ভুলতে পারব না।
সূত্রের খবর, শনিবার কংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের বিধায়কদের (Congress MLA) সঙ্গে আলোচনায় সব পক্ষকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ পর্যবেক্ষকদের (Observer)। ৬৮ আসনের হিমাচল প্রদেশের বিধানসভায় কংগ্রেসের হাতে এসেছে ৪০টি আসন। আর বিজেপি জিতেছে ২৫টি আসন। তিনটি আসনে জয় পেয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে ওই তিন নির্দল বিধায়ক জানিয়েছেন, তাঁরা বিধানসভায় কংগ্রেসকেই সমর্থন করবেন।
শুক্রবার বিকেলে ৪০ বিধায়কের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পরেও মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) পদ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনো যায়নি। শেষে মুখরক্ষার জন্য এক লাইনের প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব হাইকমান্ডের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর পদের দাবিদার হিসাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের স্ত্রী প্রতিভা সিং। মান্ডির কংগ্রেস সাংসদ আপাতত দলের প্রদেশ সভাপতির (PCC President) দায়িত্বে। শুক্রবার সিমলায় কংগ্রেস অফিসের বাইরে প্রতিভাকে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁর সমর্থকরা। পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের গাড়ি আটকেও দাবি জানান তাঁরা।
কিন্তু দলের বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় পর্যবেক্ষকরা বুঝতে পারেন অধিকাংশই মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রতিভা সিংকে (Pratibha Singh) চান না। বরং তাঁদের একটি বড় অংশের সমর্থন আছে চলতি নির্বাচনে দলের প্রচার কমিটির প্রধান সুখবিন্দর সিংয়ের দিকে। এরপরেই আর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেনি হাইকমান্ড।
১৭ বছর বয়সে রাজনীতিতে আসা সুখবিন্দর-এর বাবা ছিলেন হিমাচল রাষ্ট্রীয় পরিবহণের গাড়ি চালক। একসময় উপার্জনের জন্য দুধও বিক্রি করেছেন সুখু। পরে অবশ্য নিজের চেষ্টায় উচ্চশিক্ষা শেষ করে আইনও পাশ করেন তিনি। রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা সুখুর মাথাতেই এখন উঠতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট।