নয়াদিল্লি ও কলকাতা: আগামিকাল, শনিবার বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেসের ‘ঐতিহাসিক’ শপথ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলির অন্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য কাকলি ঘোষদস্তিদার ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে শুক্রবার জানান দলের রাজ্যসভা সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে নিজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতাকে। কিন্তু, এদিন ডেরেক টুইট করে জানিয়ে দেন, হবু মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং তাঁর অন্য সহকর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মমতা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কাকলি ঘোষদস্তিদারকে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে দিল্লি থেকে উৎখাত করার ডাক দিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি অন্য অনেকের সঙ্গেই একমত। কয়েকদিন আগে নবান্নে বসে তিনি লোকসভা ভোটে যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাদের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আওয়াজ তোলেন। এক কেন্দ্র, এক প্রার্থী এই তত্ত্বের মান্যতা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবার্তা দিয়েছিলেন বলে অনুমান অনেকেরই। শুধু তাই নয়, কর্নাটকের ভাবী উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারও এ ব্যাপারে মমতার কথায় সায় জানিয়েছিলেন। তারপরেও যে অনুষ্ঠানে দেশের তাবড় বিরোধী দলনেতা এবং সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে খাড়্গে উপস্থিত থাকবেন, সেখানে মমতার অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
আগামিকাল শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানকে অনেকেই বিজেপি বিরোধীদের ঐক্যের বার্তাবহ বলে মনে করছেন। কারণ, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, এমকে স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেন, মেহবুবা মুফতি, ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক অথবা ওমর আবদুল্লা। কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত কেরলের সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রেড্ডি, দিল্লির আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী ও অন্ধ্রপ্রদেশের জগন রেড্ডিকে আমন্ত্রণ জানায়নি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, সর্বভারতীয় জোটবার্তার আভাস দিলেও কর্নাটকে কংগ্রেসের বিপুল জয় তৃণমূল কংগ্রেসের অস্বস্তি ডেকে এনেছে। কংগ্রেসের দাক্ষিণাত্য বিজয়ের পর বিরোধী জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নেও অনেকটা এগিয়ে গেল খাড়্গের দল। সেক্ষেত্রে জোট-নেতৃত্বের প্রশ্নে নীতীশ-মমতা-পাওয়ারের কর্তৃত্ব আর চলবে না। এককভাবে চারটি এবং জোট গড়ে মোট সাতটি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া তৃণমূলের অস্তিত্ব অন্য কোথাও কার্যত নেই বললেই চলে। আর নীতীশ কুমার নিজেই সংখ্যালঘু দলের মুখ্যমন্ত্রী, বিহারে তেজস্বী যাদবের আরজেডি-ই বিধায়ক সংখ্যায় বেশি। শরদ পাওয়ারের এনসিপি মহারাষ্ট্রে টিকে থাকলেও অন্য রাজ্যে টিমটিম করে টিকে রয়েছে।
সেই হিসেবে আগামী লোকসভা ভোটে সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসই প্রধান মুখ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ বছর নভেম্বরে কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়, বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও মিজোরামে বিধানসভা ভোট রয়েছে। ডিসেম্বরে ভোট রয়েছে কংগ্রেসের রাজস্থান, তেলঙ্গানা ও জম্মু-কাশ্মীরে। সেখানেও বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের পাল্লা ভারী। সুতরাং, লোকসভা ভোটের আগে ‘হাত’ চিহ্নের শক্তি যাচাইয়ের বেশ কয়েকটা সুযোগ থাকছে। তৃণমূল, সংযুক্ত জনতা দল কিংবা এনসিপি-র কাছে সে সুযোগই নেই। তাই শপথ অনুষ্ঠানে মমতার অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলের নজর কাড়বে।