নয়াদিল্লি: আন্দোলনকারী কুস্তিগিররা নিজ নিজ কাজে যোগ দিলেন। সোমবার রেলে চাকরিরত সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগট এবং বজরং পুনিয়া আন্দোলন গুটিয়ে কাজে যোগ দেন। উল্লেখ্য, গত শনিবার মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে কুস্তিগিরদের এক প্রতিনিধিদল। সেই বৈঠকে থেকে বেরিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আচমকা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গোটা দেশ বিস্মিত হয়ে গিয়েছে। তাহলে কি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য সরকার তাঁদের ভয় দেখিয়েছে? নাকি চরম সময়সীমা কেটে যাওয়ার পরেও সরকার কোনও পদক্ষেপ না করায় সম্মানজনক মুখরক্ষার কোনও ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে?
সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, গত ৩১ মে সাক্ষী, ফোগট এবং পুনিয়া কাজে যোগ দিয়েছেন। যদিও সাক্ষী মালিক এদিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, কাজে যোগ দিলেও তাঁদের আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, আমরা অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছি। খুবই সাধারণ আলোচনা হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করতে হবে। আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না। রেলের কাজে যোগ দিয়েছি। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে, এটা সকলকে স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখছি। আমরা পিছু হটছি না। নাবালিকাও এফআইআর প্রত্যাহার করবে না, যা রটছে তা ভুয়ো খবর।
আরও পড়ুন: Odisha Train Accident | রেল দুর্ঘটনার তদন্ত করা সিবিআইয়ের কাজ নয়, মোদিকে পত্রবাণ খাড়্গের
সূত্রে জানা গিয়েছে, কুস্তিতে অভাবনীয় সাফল্যের কারণে তাঁদের তিনজনকে রেলে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটিতে নিয়োগ করা হয়েছিল। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট সময়ে ছুটির পর কাজে যোগ দিতে হয়। কেবলমাত্র অসুস্থতা ও জরুরি কোনও বিষয় ছাড়া অনির্দিষ্টকাল ছুটিতে থাকা যায় না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন আন্দোলনকারী কুস্তিগিররা। দেখা করার পর কুস্তিগির বজরং পুনিয়া জানান, তাঁরা ফেডারেশন সভাপতি তথা বিজেপি এমপি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। শনিবার বেশি রাতে অমিত শাহের দিল্লির বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন কুস্তিগিররা। রাত ১১টার সময় শুরু হওয়া বৈঠক চলে প্রায় ঘণ্টাখানেক। সেখানে পুনিয়া ছাড়াও ছিলেন সাক্ষী মালিক, সঙ্গীতা ফোগট এবং সত্যার্থ কাদিয়াঁ।
এই বৈঠককে কটাক্ষ করে আজ, সোমবার সকালে একটি টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বাল। তাঁর ভাষায়, অমিত শাহ কুস্তিগিরদের সঙ্গে দেখা করলেন। সমাধানের পথ খুঁজতে সরকার কুস্তি করছে। আমার অনুমান, কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। দায়সারা গোছের চার্জশিট দেওয়া হবে। ব্রিজভূষণকে জামিন দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ওরা বলবে বিষয়টি বিচারাধীন।
প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের শাহ আশ্বস্ত করে বলেন, আইনের চোখে সকলেই সমান। আইনকে আইনের পথে চলতে দিন। সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাঁচদিনের যে চরম সময়সীমা দিয়েছিলেন কুস্তিগিররা তা শেষ হয় গত সোমবার। তারপর থেকে তাঁরা অমিত শাহের সঙ্গে একটা বৈঠকের আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগকে সরকার উপেক্ষা করছে। বৈঠকের শেষে সাক্ষীর স্বামী সত্যার্থ বলেন, বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।
তিনি আরও জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে যে ধরনের প্রত্যুত্তর আশা করা হয়েছিল, তা তিনি দিতে পারেননি। তাঁরা অবিলম্বে ব্রিজভূষণের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ তার সদুত্তর না দিতে পারায় তাঁরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। ভবিষ্যতে আমাদের আন্দোলন কোন পথে যাবে, তা ঠিক করছি আমরা। তবে কোনওমতেই পিছু হটবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি। অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার আগে কুস্তিগিররা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গেও দেখা করেন। ঠাকুর তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দেন।