কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন ঘিরে দেশে এখন দলীয় কর্মীদের মধ্যে নানা জল্পনা চলছে। বহুদিন পর কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচন হতে চলেছে। অনেকদিন পর গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ কংগ্রেস সভাপতি পদে বসছেন। তবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বা সাংসদ শশী থারুর, যেই সভাপতি হোন না কেন, তাঁর রিমোট কিন্তু থাকবে গান্ধী পরিবারের হাতেই, এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক মহলের। সভাপতি নির্বাচনের আবহে রাজনৈতিক মহলে বা কংগ্রেসের অন্দরে আর একটা বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে প্রয়াত দুই কংগ্রেস নেতার নাম নিয়ে। গান্ধী পরিবারের বাইরের এই অকাল প্রয়াত দুই নেতারই কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার মতো সব রকমের যোগ্যতা ছিল। দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে অল্প বয়সে। দুজনের মৃত্যুই অস্বাভাবিক। সেই দুই মৃত্যু নিয়েও অসংখ্য প্রশ্ন আছে। সে্ সব প্রশ্নের নিরসন আজও হয়নি।
কথা হচ্ছে গোয়ালিয়রের মহারাজ মাধবরাও সিন্ধিয়া(Madhavrao Scindia) এবং রাজেশ পাইলটকে(Rajesh Pilot) নিয়ে। একটু অতীত খুঁড়ে দেখা যাক এই দুই প্রয়াত নেতাকে নিয়ে। ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মাধবরাওয়ের। কানপুরে একটি জনসভায় যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। কংগ্রেসে তিনি ছিলেন এক সম্ভাবনাময় নেতা। বলিয়ে কইয়ে তুখোড় সাংসদ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে মাধবরাওয়ের নাম উঠে এসেছিল।
ওই বিমান দুর্ঘটনায় মাধবরাওয়ের সঙ্গে যে কজন ছিলেন, সকলেই মারা যান। সকলেরই দেহ এমন ভাবে পুড়ে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না। সব কটি দেহই আগ্রা হয়ে দিল্লিতে আনা হয়েছিল বিমানে। সেই বিমানের ব্যবস্থা করে দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি(Atal Bihari Vajpayee)। ঘটনাচক্রে এই বাজপেয়িকেই ১৯৮৪ সালে লোকসভা ভোটে গোয়ালিয়র কেন্দ্রে হারিয়েছিলেন মাধবরাও।
মাধবরাওয়ের একটা জনভিত্তি ছিল। আপামর কংগ্রেস কর্মী এবং আমজনতার কাছে তাঁর একটা আলাদা আপিল ছিল। গোয়ালিয়রের রাজমাতা বিজয়রাজে সিন্ধিয়ার (Gwalior Rajmata Vijayraje Scindia) ছেলে হিসেবে তাঁর একটা পারিবারিক মর্যাদাও ছিল।
রাজীব গান্ধীর(Rajiv Gandhi) জমানায় রেলমন্ত্রী হিসেবেও তাঁর অবদান ছিল যথেষ্ট্। ১৯৯১ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও(P. V. Narasimha Rao) বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হিসেবে মাধবরাওকে নিয়ে আসেন। দিল্লি বিমানবন্দরে এক দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি ইস্কফা দেন। পরে ১৯৯৫ সালে তিনি মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী হন। পরের বছর অবশ্য তিনি লোকসভার টিকিট পাননি হাওয়ালা কেলেঙ্কারির চার্জশিটে নাম থাকায়। তখন তিনি মধ্যপ্রদেশ বিকাশ কংগ্রেস গঠন করেন। সীতারাম কেশরী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর মাধবরাও আবার দলে ফিরে আসেন। তাঁর ছেলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যান। বর্তমানে তিনি বাবার মতোই বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে। প্রসঙ্গত, মাধবরাও খুব ভালো পাইলট ছিলেন।
মাধবরাওয়ের মতোই রাজেশ পাইলটেরও মৃত্যু হয় এক দুর্ঘটনায়। তিনিও ভালো পাইলট ছিলেন। রাজেশ ছিলেন সোনিয়া গান্ধীর(Sonia Gandhi) প্রতিদ্বন্দ্বী, যিনি সটান তাঁকে গিয়ে বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই। জয়পুরে এক পথ দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরা। শরদ পাওয়ার(Sharad Pawar) কংগ্রেস ছাড়ার পর প্রশ্ন ওঠে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। কারণ, ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ি সরকারের অকাল পতন ঘটে। সেই বছর কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন রাজেশ। এতটাই সোজাসাপ্টা ছিলেন রাজেশ যে, বিবিসির(BBC) এক অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি সোনিয়ার ইস্তফা দাবি করেছিলেন সভানেত্রী পদ থেকে। দুর্ঘটনার সময় রাজেশের জেড প্লাস নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর তদন্তেরও দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। তাঁর বাবা অকালে মারা যান। দুধ বিক্রেতা দাদা তাঁকে মানুষ করেন। এক সময় তিনিও দুধ বিক্রি করতেন। পরে তিনিই সাংসদ হন। এখনও কংগ্রেসে যাঁরা এই দুই নেতার অনুগামী আছেন, তাঁরা মনে করেন, মাধবরাও কিংবা রাজেশ পাইলট বিমানের পাইলটের মতোই শক্ত হাতে কংগ্রেসের হাল ধরার ক্ষমতা রাখতেন