নয়াদিল্লি: বাংলাদেশ (Bangladesh) কি আরও বিপাকে পড়তে চলেছে? মায়ানমারের(Myanmar) আরও একটি এলাকা আরাকান আর্মির (Arakan Army) দখলে। ফলে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা দখল হওয়ায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা (Rohingya) অনুপ্রবেশের সমস্যা বাড়তে পারে। মায়ানমারের সিতওয়ের একটি অঞ্চলের দখল নিল আরাকান আর্মি। শহরটি দখল নেওয়ার পরে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন ( আরএসও ) এবং আরসাকে আত্মসমর্পণ করতে বলল আরাকান আর্মি। দখলের এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশের আরও প্রায় ৩৭ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা। এর আগে মংডু, বুথিডং, পালেতাওয়ার শহর-সহ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা দখল করে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এতে বাংলাদেশ -মায়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটারের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) মংডু দখলের ফলে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং আগে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা।
মংডু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরই বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদের মায়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরাকান আর্মি। ওই ঘোষণার পর নাফ নদে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি বাংলাদেশেও। বাড়ানো হয়েছে বিজিবির টহল। সীমান্তে অযাচিত যাতায়াত বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: আমেরিকা, ব্রিটেনের বাইরে ভারতীয় পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষায় কোন দেশে ঝুঁকছেন?
মংডু দখলের পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জানিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে উদ্যোগী হচ্ছে, যাতে অন্তত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে গভীরভাবে বিবেচনা না করে এই বিষয়ে নির্ণায়ক কোনও পদক্ষেপ হবে না বলে জানান তিনি। বিদ্রোহীরা সীমান্ত দখলের পরে বাংলাদেশ সরকার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে। ফলে সার্বিক অসুবিধায় পড়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে মায়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোর করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড। মায়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, চীন, লাওস ও কম্বোডিয়া-এই ছয় দেশের বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে আগামী ১৯ ডিসেম্বর ব্যাংককে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ওই বৈঠকে যোগ দেবেন। বাংলাদেশ, মায়ানমার, লাওস ও কম্বোডিয়ার বিদেশমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দিলেও এখনও ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চীনের বিদেশমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত চীনের পক্ষে দেশটির উপ-বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা।
প্রসঙ্গত, এমন পরিস্থিত সামলাতে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা বাণিজ্য—এই তিনটি কারণে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা বাংলাদেশের জরুরি। তবে বাংলাদেশের বিদেশনীতির কারণে মায়ানমারের জুন্টা সরকারকে উপেক্ষা করে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে উঠছে না।
দেখুন অন্য খবর: