ইস্ট বেঙ্গল–৩ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড–১
(ক্লেটন সিলভা, কিরিয়াকু, জর্দন ডোহার্টি) (ম্যাট ডার্বিশায়ার)
আই এস এল-এর তিন নম্বর ম্যাচেই জয় পেল ইস্ট বেঙ্গল। এবং সেটা আবার অ্যাওয়ে ম্যাচে। বিষ্যুতবারের বার বেলায় গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ইস্ট বেঙ্গল যে দাপট এবং আধিপত্য নিয়ে খেলল তাতে তারা আরও বড় জয় পেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। তার মানে এই নয় যে নর্থ ইস্ট কিছুই খেলতে পারেনি। তারা প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। তাদের একটা নিশ্চিত গোল নষ্ট হয়েছে বারে লেগে। এ সবই ঠিক কথা। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল যা খেলেছে, যে সব সুন্দর সুন্দর গোল করেছে তাতে তারা না জিতলে অন্যায় হত। গোলের কথা বলতে গেলে সবার আগে বলতে হবে মিডফিল্ডার কিরিয়াকুর গোলের কথা। ভি পি সুহের বল্সের ঠিক বাইরে থেকে ব্যাক পাসে বল রেখেছিলেন আগুয়ান কিরিয়াকুর জন্য। কিন্তু কিরি বলটা না ধরে চলতি বলেই দুর্দান্ত শট নিলেন। অরিন্দমকে নড়তে না দিয়ে বল গোলে ঢুকে গেল। এ রকম একটা গোল দেখার জন্য অনেক মাইল হেঁটে আসা যায়। ম্যাচের চারটি গোলের মধ্যে এটিই সর্বত্তোম। সঙ্গত কারণেই কিরিয়াকুকে ম্যাচের সেরা বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে আসল নায়ক কিন্তু লাল হলুদ কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইন। পর পর দুটো ম্যাচ হেরে যখন তিনি এবং তাঁর টিম সমালোচনায় বিদ্ধ তখন অবিচলই ছিলেন ব্রিটিশ কোচ। শুধু বলেছিলেন এফ সি গোয়ার বিরুদ্ধে হারলেও দ্বিতীয়ার্দ্ধের খেলায় তিনি খুশি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
সেটাই যেন করে দেখাল তাঁর সৈনিকরা। গোয়ার বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে গিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। এদিন যেন শুরু থেকেই তারা প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিল খুব তাড়াতাড়ি গোল পেতে হবে। এবং সেটা তারা পেয়েও গেল ১১ মিনিটের মধ্যে। তার আগে প্রশংসা করতে হবে লাল হলুদ কোচের সঠিক এগারো জনকে বেছে নেওয়ার জন্য। দুই সাইড ব্যাক হিসেবে সার্থক গোলুই এবং জেরি অনবদ্য। বিশৈষ করে লেফট ব্যাক জেরি। তাঁর ওভারল্যাপিং দলের আক্রমণকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। রাইট ব্যাক সার্থক ভাল। কিন্তু জেরি তাঁকে ছাপিয়ে গেছেন। দুই সেন্টার ব্যাক ইভান গঞ্জালেস এবং চুংনুঙ্গা লালের মধ্যে সমঝোতা এখনও ঠিক মতো হয়নি। যার জন্য ডিফেন্সে প্রচুর ফাঁক ফোকড় তৈরি হয়েছে। নর্ধ ইস্ট তার সুযোগটা নিতে পারেনি। কিন্তু লাল হলুদের সামনের দিকটা ছিল দুর্দান্ত। দুই উইঙ্গার ভি পি সুহের এবং মহেশ সিং দুর্দান্ত। দুজনেই গোল করিয়েছেন। মাঝ খানে করিয়াকু এবং জর্ডন ডোহার্টি অনেকটাই ভারসাম্য জুগিয়েছেন। সামনের দিকে হাওকিপ এখনও তৈরি নন। তবে ক্লেটন কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছেন। গত বছরের ক্লেটনকে যেন আবার ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তাই শেষ তেরো মিনিটের জন্য অ্যালেক্স লিমা নামলেও এবং তেমন কিছু করতে না পারলেও তাঁর অভাব অনুভূত হল না।
হবে কী করে? কারণ ১১ মিনিটের মধ্যে তো গোল পেয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গল। বাঁ দিক থেকে মহেশ সিং একটা বল ধরে তাঁর দিকের ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চমৎকার একটা ফরোয়ার্ড পাস বাড়ালেন ক্লেটনকে। এবং বলটা ধরেই চকিতে শট নিলেন ক্লেটন। প্রথম বারেই ছিলেন অরিন্দম। বল তাঁর পাশ দিয়ে গোলে চলে গেল। এগারো মিনিটের এই গোলটাই ইস্ট বেঙ্গলকে বাড়তি মনোবল জোগাল। মাঝ মাঠৈ নর্থ ইস্ট বেশি পাস খেলল, বল পসেসনকে অনেক পিছিয়ে রাখল ইস্ট বেঙ্গলকে, কিন্তু তাদের আক্রমণে সেই ভেদ শক্তি ছিল না যা ছিল লাল হলুদের মধ্যে। কিন্তু গোলের সামনে সুবিধেজনক অবস্থায় বল পেয়েও ঠিক মতো গোলে বল না রাখতে পারায় গোলের ব্যবধান বাড়ল না।
বিরতির পর নর্থ ইস্ট তাদের রণছক পাল্টায়। উইং দিয়ে আক্রমণে গিয়ে তারা তেমন সুবিধে করতে পারছিল না। এবার তারা মাঝখান দিয়ে আক্রমণে গেল এবং গোলের বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করে ফেলল। বক্সের মধ্যে শুধু কমলজিৎকে পেয়ে এমিল বেনি তাঁকে হারাতে পারলেন না। বল কমলের হাত থেকে বেড়িয়ে এলে সামনে শুধু ফাঁকা গোল। এই অবস্থায় যখন ফুঁ দিয়ে গোল করা যায়, তখন জোরে মারতে গিয়ে ম্যাট ডার্বিশায়ার বারে লাগালেন। ময়দানের কুসংস্কার বলে বারে বা পোস্টে বল লাগলে সেই ম্যাচ জেতা মুশকিল। নর্থ ইস্টের তাই হল। এর পরে অবশ্য গাজার পা থেকে বল কেড়ে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন কমলজিৎ। তবে তার আগে কিরিয়াকুর গোলে ইস্ট বেঙ্গলের এগিয়ে যাওয়া ৫২ মিনিটে। এবং নর্থ ইস্টের চাপ মাথায় নিয়েও ইস্ট বেঙ্গল তাদের তিন নম্বর গোলটা করে ফেলল ৮৪ মিনিটে। এই গোলটীও সুন্দর। পরিবর্ত মোসাবির রহমানের পাস যখন ধরলেন জর্ডন ডোহার্টি তখন সামনে শুধু অরিন্দম। গোল করতে ভুল করেননি লাল হলুদের অজি মিডফিল্ডার। ৯২ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে ডার্বিশায়ারের গোলটা তাই খানিকটা সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো।
সব মিলিয়ে তৃতীয় ম্যাচেই ইস্ট বেঙ্গলের দুর্দান্ত জয় আরও একটা ইঙ্গিত দিয়ে গেল। তা হল ২৯ অক্টোবরের ডার্বির জন্য তারা প্রস্তুত। ডার্বির ফল কী হবে তা সময়ই বলবে। তবে এই ইস্ট বেঙ্গল কিন্তু অসহায় আত্মসমর্পণ করবে না।