কুয়ালা লামপুর সিটি এফ সি–৩ এটিকে মোহনবাগান–১
(পাওলো জোসু, ফকরুল আইমান, রোমেল মোরালেস) (ফারদিন আলি মোল্লা)
গত বছরের মতো এ বারও এ এফসি কাপের সেমিফাইনালে হেরে গেল এটিকে মোহনবাগান। গতবার হেরেছিল উজবেকিস্তানে গিয়ে নাসাফ এফ সি-র কাছে ছয় গোল খেয়ে। আর এবার নিজেদের মাঠেই হেরে গেল তিন গোল খেয়ে। পর্যাপ্ত প্রাধান্য নিয়ে খেলে, প্রথমার্দ্ধে ৮০ শতাংশ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেও মোহনবাগান ম্যাচটা হারল তার একটাই কারণ কুয়ালা লামপুরের এই দলটা তাদের চেয়ে অনেক ভাল। বিশৈষ করে দেখবার মতো তাদের ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন। ক্রোয়েশিয়ার কোচ বোজান হোডাক চমৎকার হোম ওয়ার্ক করে টিমটাকে খেলালেন। তিনি জানতেন মোহনবাগানের গোল করার মতো লোক নেই। উইংয়ে লিস্টন কোলাসোকে রুখে দিতে পারলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সেটাই করল তাঁর ডিফেন্স। লিস্টন যতবারই বাঁ দিক দিয়ে উঠতে গেছেন তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছে মালয়েশিয়ার দলটির ডিফেন্ডাররা। হয়তো কর্নার বেশি পেয়েছে মোহনবাগান। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাবার মতো লোক ছিল না। আর প্রশংসা করতে হবে কুয়ালা লামপুরের গোলকিপারেরও। ছোটখাটো চেহারার আজরি আব্দুল গনি শূণ্যে অথবা জমিতে কতবার যে বাগানিদের পায়ের কিংবা মাথার গ্রাস কেড়ে নিয়েছেন তা গুণে শেষ করা যাবে না। মোহনবাগান কোচ এ বছর নিজেই টিম করেছেন। রয় কৃষ্ণের মতো পজিটিভ স্ট্রাইকারকে বাদ দেওয়ার খেসারত তাঁকে দিতে হচ্ছে। ডুরান্ডের গ্রুপ লিগ থেকে বিদায়ের পর এ বার এ এফ সি কাপের সেমিফাইনালেও হার। উইঙ্গারকে দিয়ে গোল করার উচ্চাকাঙ্খা নিয়েই যদি ম্যাচ জেতা যেত তাহলে আর্লিং হাল্যান্ড কিংবা রবার্ট লেওনডস্কিকে নিয়ে ইউরোপে এত মাতামাতি হত না। স্ট্রাইকার হচ্ছে একটা টিমের দাঁত এবং নখ। সেটাই তো জুয়ান ফেরান্দোর টিমের নেই। কী করে জিতবে তাঁর টিম?
সত্যি কথা বলতে কী বহু দিন পর একটা বিদেশি টিমের খেলা দেখে মনটা ভরে গেল। এই টিমের প্লেয়ারদের আমরা এর আগে চোখে দেখিনি। শুধু শুনেছিলাম টিমটার অধিনায়ক পাওলো জোসু একজন ব্রাজিলিয়ান এবং তিনিই টিমটার মূল চালিকা শক্তি। এবং সেটা কত বড় সত্যি তা বোঝালেন পাওলো। নিজে একটা দুরন্ত গোল করলেন এবং সেট পিস থেকে একটা চমৎকার গোল করালেন। ইদানিং দুই প্রধানের ব্রাজিলিয়ানগুলোকে দেখে শুধু বিরক্তিই না ঘেন্না ধরে যাচ্ছিল। ব্রাজিলের ফুটবলারের আসল জাত বলতে কী বোঝায় তা দেখালেন এই পাওলো জোসু। প্রথমার্দ্ধের প্রায় পুরোটাই ডিফেন্স করল তাঁর দল। আশি শতাংশ বল পসেসন মোহনবাগানের। এই সময় বল ক্লিয়ার করে কুয়ালা লামপুর চেষ্টা কর্ছিল লং বলে আক্রমণে যেতে। এবং সেগুলো মোহনবাগানের ডিফেন্সের দুই ব্যাক ফ্লিওরিন্তিন পোগবা কিংবা ব্রেন্ডন হামিলের পাঁচিলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছিল। বিরতির পর কিন্তু খেলাটা বদলে দিলেন ওই পাওলো-ই। প্রথমার্দ্ধে যাঁকে শুধু জার্সি দেখে চিনতে হচ্ছিল, বিরতির পর তিনি স্বমূর্তি ধরলেন। মাঝ মাঠে বল ধরে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে উঠতে লাগল পাওলোর সতীর্থরা। এবং এটা করতেই করতেই ঠিক এক ঘণ্টার মাথায় প্রথম গোল। এবং জেম অফ আ গোল। এই গোল দেখবার জন্য অনেক মাইল হেঁটে আসা যায়। বক্সের বাইরে এর ওর কাছ থেকে বল পেয়ে অন্তত কুড়ি বাইশ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের চমৎকার ভলিএ গোল করলেন পাওলো জোসু। বাগান গোলকিপার বিশাল কাইথ, যিনি এতক্ষণ কোনও বলই ধরেননি, ঝাঁপিয়ে পড়েও বলে আঙুল ছোঁয়াতে পারেননি।
আচমকা গোলের খোঁয়া খেয়ে মোহনবাগান একটু ধাঁধায় পড়ে যায়। তবে তারা গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয়। এই সময় জুয়ান ফেরান্দো দুটো পরিবর্তন করেন। প্রথমে প্রীতম কোটালকে তুলে নিয়ে রাইট ব্যাকে নামান আশিস রাইকে। এবং তার পর সেন্টার ব্যাক ব্রেন্ডন হামিলকে তুলে নিয়ে নামান ফারদিন আলি মোল্লাকে। এবং একটু পরে দীপক ট্যাংরির বদলে কিয়ান নাসিরি। শেষ পর্যন্ত তাঁর দল গোল পায়। কুয়ালা লামপুর গোলকিপার একটা শট আটকালে রিবাউন্ড থেকে গোল করলেন ফারদিন আলি মোল্লা। তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি ঘুরিয়ে দিল মোহনবাগান। কিন্তু কোথায় কী? দু মিনিট যেতে না যেতেই আবার গোল খেয়ে গেল বাগান। ডান দিক থেকে ফ্রি কিকটা পাওলো জোসু ঠিক রাখলেন ফকরুলের মাথায়। গায়ের উপর ডিফেন্ডারদের নিয়েই চমৎকার হেডে গোল করলেন সুপার সাব ফকরুল। যেন এতেই শেষ নয় তা বোঝাতে আবার গোল বিদেশিদের। এবার ভিলেন পল পোগবার দাদা। তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে প্রায় হাঁটতে হাঁটতে গোল করে এলেন রোমেল মোরালেস। একটু এগিয়ে চমৎকার শটে। এই সময় খুব অসহায় লাগছিল মোহনবাগানকে। মরসুম সবে শুরু তাদের। প্রস্তুতি চলছে। সেই সময় একটা ভাল টিমের সামনে পড়ে সব জারিজুরি শেষ। তবে জেনুইন স্ট্রাইকার না নিয়ে খেলার খেসারত তো দিতেই হবে। মনবীর সিং কিংবা আশিক কুরুনিয়ানদের দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতার স্বপ্ন না দেখাই ভাল। তা হলে সেটা বুধসন্ধ্যার মতো দুঃস্বপ্নই হয়ে থাকবে।