মেদিনীপুর: অনাস্থা প্রস্তাবে জ্বরে আক্রান্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল। সেই অনাস্থা প্রস্তাব আটকাতে মরিয়া চেষ্টা জেলা নেতৃত্বের। মেদিনীপুরে একের পর এক পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আসছে। খড়্গপুর পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান সম্প্রতি দলের কাউন্সিলরদের আনা অনাস্থায় প্রস্তাবের জেরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। তার জের কাটতে না কাটতেই এবার মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও দলীয় কাউন্সিলররা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন। জেলার বাকি পাঁচটা পুরসভাতেও একই অবস্থা। এর জেরেই দলের ভাবমূর্তি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় তৃণমূল। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলা নেতৃত্ব।
খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন তৃণমূলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলর। প্রাথমিকভাবে দল আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রদীপ ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। তবে এতে যে খড়্গপুর পুরসভার জটিলতা কেটেছে, এমনটা নয়। কারণ, প্রদীপের দাবি, এসডিও জানান, এভাবে ইস্তফা দেওয়া যায় না। বোর্ড মিটিং ডেকে তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। তার আগে পর্যন্ত তিনিই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাবেন। বুধবার প্রদীপের ওই দাবি শুনেই জেলার কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতি যোগাযোগ করেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। সূত্রের খবর, জেলা নেতৃত্বের চাপেই স্থানীয় প্রশাসন ইস্তফা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানায়। তা নিয়ে আগামী দিনেও জলঘোলা হতে পারে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা। শাসকদলের সেই অস্বস্তি পুরোপুরি কাটার আগেই এবার সামনে এল মেদিনীপুর পুরসভার কাণ্ডা। চেয়ারম্যান সৌমেন খানের বিরুদ্ধে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনাস্থাসূচক চিঠি দেন দলের অধিকাংশ কাউন্সিলর।
আরও পড়ুন:TMC Innerclash: বুথকমিটির সভা ঘিরে রাতের অন্ধকারে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ-মারধর
এ বিষয়ে মেদিনীপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর লিপি বিশুই বলেন, বোর্ডের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত আমাদের না জানিয়েই হচ্ছে। অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড উন্নয়নের টাকা বিলিতেও পক্ষপাতিত্ব করছেন চেয়ারম্যান। এরই প্রতিবাদে আমরা এই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, কাউন্সিলরদের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আমাকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। আমি চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু আশানুরূপ ফল হয়নি মনে করে কাউন্সিলাররা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চলে গিয়েছেন। দল বিষয়টা দেখছে।
সম্প্রতি মেদিনীপুর শহরে মেদিনীপুর পুরসভার পক্ষ থেকে একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজ মাঠে। মহরম ও পুজো কমিটিকে সম্মানিত করা হয় সেখানে। যেখানে তৃণমূলের অনেক কাউন্সিলরাই অনুপস্থিত ছিলেন। পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে নেত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি সেটা নিয়ম মেনে পালন করার চেষ্টা করছি। আমার কাজে বোর্ডের সমস্ত কাউন্সিলরকেই শামিল করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এরপরেও কে বা কারা কী অভিযোগ করেছেন আমার জানা নেই।
আরও পড়ুন:Intranasal Covid Vaccine: সূচ ফোটাতে হবে না! কী করে মিলবে নতুন বুস্টার ডোজ?
এ বিষয়ে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইত বলেন, কাটমানির ভাগাভাগি না পেলেই যেভাবে খড়্গপুরের চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছে, সেভাবেই মেদিনীপুরের চেয়ারম্যান পরিবর্তনও হতে চলেছে। গোষ্ঠীকোন্দলের জর্জরিত শাসকদল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে সাতটি পুরসভা। সমস্ত পুরবোর্ডই তৃণমূলের দখলে। ফলে খড়্গপুরের পর মেদিনীপুর পুরসভা যেভাবে অনাস্থা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে, সেই একই সংক্রমণ যাতে অন্যান্য পুরসভাগুলিতে না প্রবেশ করে, তা আটকানোর চূড়ান্ত চেষ্টা শুরু করেছে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মন্তব্য না করলেও, সমস্ত কাউন্সিলরের সঙ্গে বসে এই অনাস্থা পাশ আটকানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছেন বলে সূত্রের খবর।