রাজ্যে এই মুহূর্তে এক লক্ষেরও বেশি দেওয়ানি মামলা বকেয়া পড়ে রয়েছে। সেগুলি সবই প্রবীণ নাগরিকদের করা। সেই সব মামলার মধ্যে জমিজমা, সম্পত্তি বিবাদ, পারিবারিক বিবাদে সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে। তথ্য বলছে, ১ লক্ষ ৪ হাজার মামলা জমে রয়েছে সারা রাজ্যে।
ন্যাশনাল জুডিসিয়াল ডাটা গ্রিডের (এনজেডিজি) তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সব চেয়ে বেশি দেওয়ানি মামলা আছে। এই জেলার স্থান দেশে তৃতীয়। পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিকদের করা ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও এগিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আলিপুর আদালতেই রয়েছে এই ধরনের মামলার পাহাড়।
এনজেডিজি-র তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রবীণদের করা ২৬ লক্ষ ২ হাজার মামলা বকেয়া রয়েছে। তার মধ্যে ৫ শতাংশ এই রাজ্যের। এগুলির মধ্যে ১৯ লক্ষ ৮ হাজার হচ্ছে দেওয়ানি মামলা, ৬ লক্ষ ৪ হাজার ফৌজদারি মামলা। প্রবীণদের করা মামলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা যদি প্রথম হয়, মুর্শিদাবাদ হল দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ হল যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ। কলকাতা রয়েছে পঞ্চম স্থানে। শহর কলকাতায় দেওয়ানি মামলা চলছে ৫,৩৭৮ টি এবং ফৌজদারি মামলা চলছে ১,০৮৮ টি। সব চেয়ে কম মামলা রয়েছে কালিম্পংয়ে। সেখানে দেওয়ানি মামলা ৭১ টি, ফৌজদারি মামলা সাতটি।
বিশিষ্ট আইনজীবী তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই সব মামলার অধিকাংশই বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিবাদ কিংবা জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে। এ ছাড়া রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ঘর থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে মামলাও। বহ প্রবীণ নাগরিক আদালতে আসেন ছেলে, ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে। আর এক আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, সম্প্রতি তিনি একটি মামলায় সওয়াল করেছেন এক বৃদ্ধ দম্পতির হয়ে। সরকারি কর্মচারী ছেলে তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়িতে থাকতে দিতে বাধ্য হন ওই সরকারি কর্মচারী সুপুত্র।
প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, প্রবীণ নাগরিকদের এই ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। আদালতের দরজায় ঘুরতে ঘুরতে অনেকেরই জীবন শেষ হয়ে যায়। বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, প্রবীণ নাগরিকদের মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবী এবং বিচারপতিদের অনেক সক্রিয় হওয়া উচিত, যাতে মামলাগুলির দ্রুত ফয়সালা হতে পারে। আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য মনে করেন, এর জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা দরকার। স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির সম্পাদক রাজু মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা প্রবীণ নাগরিকদের সব রকমের সহায়তা দিয়ে থাকেন।