কলকাতা: শেষ বেলায় কি অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর মতোন এক মহান শিল্পীকে ৯২ বছর বয়সে পদ্মশ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল, সেই বেদনা নিয়েই কি তিনি চলে গেলেন? গীতশ্রীর প্রয়াণের দিন সেই প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরে আসতে শুরু করল। মনের এই কু-ডাককে যেন আরেকটি ঘটনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
যেদিন পদ্মশ্রী দেওয়ার কথা তাঁকে জানানো হয় এবং তিনি প্রত্যাখ্যান করেন, তার পরদিনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শিল্পী। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এই বয়সে কি একটা মানসিক ধাক্কা পেয়েছিলেন? তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন থেকে শুরু করে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী সবার স্মৃতিচারণায় এই কথাটাই উঠে এল বারবার।
গত ২৫ জানুয়ারি জানা যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দেওয়ার কেন্দ্রীয় প্রস্তাব। এই খবর শুনে তখনই তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন গীতশ্রী। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতন এমন শিল্পীকে কেন পদ্মশ্রী? তা নিয়ে গর্জে উঠেছিল গোটা বাংলা। তাঁদের একটাই কথা ছিল, এই বয়সে এমন একজন মানুষকে পদ্ম সম্মাননার একদম শেষ ধাপের পুরস্কার দেওয়ার অর্থ কি অপমান নয়!
যার গান গোটা বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে, দেশকে সমৃদ্ধ করেছে, তাঁকে ভারতরত্নের মত সম্মান না দিয়ে পদ্মশ্রী কেন? বাংলার প্রতিটি মানুষ সেদিন গীতশ্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। গীতশ্রীর পদ্ম-সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে দু-হাত তুলে কুর্ণিশ জানিয়েছিলেন। গীতশ্রীকে এভাবে অপমান করার স্পর্ধা কেন্দ্রের নেই বলেই দাবি উঠেছিল গোটা বাংলায়।
এই ঘটনার ঠিক পরদিনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী। ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর। এর পর গীতশ্রীর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাঁকে অ্যাপোলোতে স্থানান্তরিত করা হয়। করোনাকে হারানোর পর অনেকটা সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বুধবার সন্ধে সাড়ে ৭টা। সুর থেমে গেল পাখিটার।
সন্ধ্যাতারায় বিলীন হয়ে গেলেন সন্ধ্যা। খবরটা যেন ঝড়ের মত আছড়ে পড়ল বাংলার মাটিতে। তীরটা যেন বিঁধল প্রতিটি বাঙালির বুকে। চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজনীতি-সাংস্কৃতিক সহ সর্বস্তরের মানুষ। যে মানুষটির গলা উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে অমরত্ব দিয়েছে, সেই গলা আজ থেমে গেল।
কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই গেল। ২৫ জানুয়ারির সেই ফোন, যা জানিয়েছিল ‘আপনি পদ্মশ্রীর জন্য মনোনীত…’, কতটা বেদনা দিয়েছিল সন্ধ্যাকে?