ভয় ধরাচ্ছে সিত্রাং। উত্তর আন্দামান সাগর, দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর যে নিম্নচাপ দেখা দিয়েছে শনিবার সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর রবিবার ওই নিম্নচাপ অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়ে সোমবার কালীপুজোর দিনে তা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে। নবান্ন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষি, বিদ্যুৎ, সেচ, ত্রাণ ও দমকল কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সতর্ক করে বলেছেন, সিত্রাং আমফানের চেয়েও বেশি গতিবেগে ধেয়ে আসতে পারে। ২০০ কিলোমিটার বেগে সিত্রাংয়ের ধেয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কালীপুজোয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপদ মোকাবিলায় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছে প্রশাসন। সূত্রের খবর, সুপার সাইক্লোন সিত্রাং কোনদিকে গতিপথ বদল করবে তা আগামীকালের ভিতরই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এদিন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সিত্রাংয়ের মোকাবিলায় কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সেসম্পর্কে আলোচনা করেছেন রাজ্যের ২০টি দফতরের সচিব ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জেলাশাসকদের সঙ্গে। নবান্ন সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়ের বিপদের কথা মাথায় রেখে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্যান্ডেলের আকার আগেভাগে খতিয়ে দেখে নিতে। পুজো কমিটিগুলিতে শক্তপোক্ত প্যান্ডেল তৈরি করতে হবে। এছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিসর্জনের দিন অমাবস্যা। অমাবস্যার কথা মাথায় রেখে স্থানীয় প্রশাসনকে ঘাটগুলিতে নজরদারি চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতেও বারণ করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৫ তারিখ উপকূলবর্তী জেলাগুলি পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনাতে ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ২৪ অক্টোবর থেকে বৃষ্টি শুরু হবে কলকাতায়। ২৫ অক্টোবর বৃষ্টি আরও বাড়বে। সেইসঙ্গে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া।
সিত্রাংয়ের মোকাবিলাতে একইভাবে সতর্ক কলকাতা পুরসভাও। এদিন পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার পুর কমিশনার বিনোদ কুমার-সহ পুরসভার সব বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, শেষপর্যন্ত যদি সিত্রাং আছড়ে পড়ে তাহলে মহানগরীর যে বাড়িগুলির ভগ্নদশা সেখানকার বাসিন্দাদের এলাকার স্কুল ও কমিউনিটি হলগুলিতে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলাতে।
এদিনের বৈঠকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ত্রাণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি রা্খারও নির্দেশ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি কোনও ঝুঁকি না নিয়ে গালিপিটগুলিকে প্রস্তুত রাখা থেকে শুরু করে মহানগরীতে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা বিদ্যুৎবাহী তারগুলিকে খুলে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।
আরও পড়ুন: Sitrang: কালীপুজোর দিন ঘূর্ণিঝড়, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সুন্দরবনবাসী
এদিন রাজ্য সরকার জানিয়েছে, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির ছুটি বাতিল করা হতে পারে সোমবার ও মঙ্গলবার। অন্যদিকে, এদিন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলাতে বিদ্যুৎ দফতর পুরোপুরিভাবে তৈরি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ দফতরও কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে।