কলকাতা: আজ, রবিবার কল্পতরু উৎসব (Kalpataru Utsav)। ভোররাত থেকেই সার বেঁধে ভক্তরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাশীপুর উদ্যানবাটিতে (Cossipore Udyanbati)। এখানে এদিনেই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (Ramkrishnadev Paramhans)কল্পতরু হয়েছিলেন। তাই রামকৃষ্ণ অনুগামীদের কাছে এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
শুধু কাশীপুর উদ্যানবাটিই নয়, রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলেনর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেই এইদিনে পুজোপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু করেন। উদ্যানবাটি ছাড়াও কলকাতার যোগোদ্যান, মায়ের বাড়ি, কাচের মন্দির, বলরাম বসুর বাড়িতেও বহু ভক্ত সমাগম হয়। ভোর থেকে বেদপাঠ, ভক্তিগীতি ও রামকৃষ্ণ ভজনায় দিনটি পালিত হয়।
আরও পড়ুন: Yearly Horoscope 2023: নতুন বছরে কেমন হবে নতুন করে পথচলা?
কেন কল্পতরু উৎসব?
১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই উৎসব শুরু হয়েছিল। এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর অনুগামীদের কাছে নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর উদ্যানবাটিতে এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনের শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা এই উৎসবকে ঠাকুরের বিশেষ উৎসবগুলির অন্যতম উৎসব হিসেবে গণ্য করেন।
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। সারা দেশ থেকে রামকৃষ্ণ-অনুগামী তীর্থযাত্রীরা এই দিন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পূজা দিতে আসেন। এছাড়াও কামারপুকুর ও জয়রামবাটিতেও এই দিনটিতে বিশেষ পুজোপাঠের আয়োজন করা হয়। কলকাতা থেকে অসংখ্য ভক্ত কামারপুকুরে ঠাকুরের ভিটে দর্শনে যান।
রামকৃষ্ণ পরমহংস সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলের একটি বাগানবাড়িতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১ জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন।
সেখানে তিনি তাঁর অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কী মনে হয়, আমি কে? গিরিশচন্দ্র বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, রামকৃষ্ণ পরমহংস মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার। রামকৃষ্ণ বলেন, আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক। এরপর তিনি সমাধিস্থ হয়ে তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। রামকৃষ্ণ-অনুগামীদের মতে, তাঁর স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল।
রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন ঠাকুর হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল। উল্লেখ্য, এইদিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহী শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না।