পঞ্চায়েত ভোটের বোধনের বাজনা বেজে গেল রাজ্যে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার ফাঁকেই কমিশন নির্বিঘ্নে গোটা পর্ব সম্পন্ন করতে পারবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে রাজীব সিনহা তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত ‘খেলা শুরু’ শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, খেলা শুরুর আগেই নিজেকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা ঠিক নয়। অর্থাৎ পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে অশান্তি ঠেকাতে কমিশন সক্ষম হবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি রাজীব সিনহা। যদিও ভোট ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসন কমিশনের অধীনে চলে যায়।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকরা বারবার তাঁকে ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি না, প্রতি বুথে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে কি না, গোটা নির্বাচনপর্ব একদিনে হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা কী হবে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা হবে কি না, সর্বোপরি ভোটকর্মীদের কারা নিরাপত্তা দেবে, এসব নিয়ে প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নেরই পাশ কাটিয়ে জবাব দিয়ে রাজীব একাধিকবার বলেন, রাজ্য সরকার এর ব্যবস্থা নেবে। রাজ্য সরকার ও পুলিশ-প্রশাসন ঠিক করবে কোথায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা রাখার কথাও বলেন তিনি।
অর্থাৎ তাঁর কথায় একটা বিষয় স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে না। বুথে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন নিয়েও তিনি স্পষ্ট কিছু জানাননি। বিরোধীদের সব থেকে বড় অভিযোগ, এত কম সময়ের ঘোষণায় ভোট করানো নিয়ে। মাত্র একমাস সময় পাওয়া যাচ্ছে এবং মনোনয়ন জমার জন্য হাতে সময় মাত্র ৬ দিন। এর আগে এত কম সময়ের মধ্যে ভোট হয়েছে কি না তা হাতড়ে বেড়াচ্ছে বিরোধী দলগুলি।
গত পঞ্চায়েত ভোট ও তার আগে-পরে যেসব রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছিল, তা কি এবার ঠেকানো যাবে? এই প্রশ্নেরও সদুত্তর নেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে। অর্থাৎ বিরোধী দলগুলি প্রথম থেকে যে আশঙ্কা করে আসছে, তার জবাব অন্তত এদিন দিতে পারেনি রাজ্য কমিশন। হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যে এই বিপুল পরিমাণ মনোনয়ন জমা দেওয়া অসম্ভব বলে মনে করে তারা। বিরোধীরা যাতে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ না পায় তার জন্য ইচ্ছা করে এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।
সব মিলিয়ে বহু প্রতীক্ষিত পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়ে গিয়েছে। এর জল কতদূর গড়ায় তা এখন দেখার। বিশেষত, লোকসভা ভোটের আগে এ রাজ্যে বিরোধী ও শাসকদলের শক্তি কতখানি সেই খেলারও সেমিফাইনাল এই নির্বাচন। সুতরাং, রাজীব সিনহা ও তাঁর কর্মিবর্গ এই খেলায় চ্যাম্পিয়ন হন বা না হন, আক্ষরিক অর্থেই খেলা যে শুরু হয়ে গিয়েছে তা বলাই বাহুল্য।