মানতে পারলাম না৷ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনার ধনখড় সাহেবের টুইট ব্লক করার সিদ্ধান্ত৷ না মানতে পারলাম না। হ্যাঁ, আপনি অনেক ভালো কাজ করছেন৷ যেখানে ভালো সেখানে আমাদের সমর্থন থাকছে৷ ভালো না মনে হলে আমরা বিরোধিতা করব৷ কারণ ক্ষমতায় বসে থাকা শাসকের প্রত্যেক সিদ্ধান্ত মানতেই হবে৷ এ তো গোদি মিডিয়ার কথা৷ এ কথা তো অররণব গোস্বামী বলে৷ আমরা বলব কেন?
আমরা আপনার এই সিদ্ধান্ত মানতে পারলাম না এবং সবিস্তারে সেই কারণগুলো আপনাকে বলা দরকার বলে আমরা মনে করি৷ সেটাই আমাদের আজকের চতুর্থ স্তম্ভের বিষয়৷ আবার বলছি ধনখড় সাহেবের টুইট ব্লক করার সিদ্ধান্ত আমরা মানতে পারছি না৷ এই কোভিড মহামারি সময়ে বাংলার মানুষের মুখের হাসি আপনি কেড়ে নিতে পারেন না৷ চারিদিকে মানুষ আক্রান্ত, মানুষের মৃত্যুর খবর, অসুস্থতার খবর, রকেট গতিতে বাড়তে থাকা মূল্যবৃদ্ধি, সবল, সক্ষম, শিক্ষিত, স্কিলড যুবক যুবতীদের বেকার বসে থাকা, অর্থনীতির বেহাল অবস্থায় এটাই তো ছিল সাত সকালে হাসির খোরাক।
সক্কালবেলায় উঠে মহামান্য ধনখড় সাহেবের টুইট দেখে, বৃদ্ধ, প্রৌঢ়, নারী, পুরুষ আমোদিত হত৷ মুচকি হাসি, হালকা হাসি, পাতলা হাসি, হো হো হাসি, হা হা হাসিতে ভরে উঠত বাংলার মুখ৷ আপনি তা কেড়ে নিতে পারেন না৷ তুলসী বাঁড়ুজ্জে থেকে জহর, ভানু, খরাজ, কাঞ্চনদের ঐতিহ্য বহনকারী, বাংলার মানুষের মুখ থেকে হাসি কেড়ে নেওয়াটা অন্যায়৷ দয়া করে সেই হাসি কেড়ে নেবেন না৷ আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ভাবুন, সাত সকালে উঠে যখন আমরা দেখি রাজ্যের কনস্টিটিউশনাল হেড, সাংবিধানিক মাথা যখন নিজের রাজ্যকে সন্ত্রাসের গ্যাস চেম্বার বলে টুইট করছেন, তা কি ভানু জহর, কাঞ্চন খরাজের কমেডির চেয়ে কম কিছু। উনি যদি সিরিয়াস হতেন, তাহলে তথ্য সহকারে এসব লিখে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতেন৷ রাজ্য সরকার ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করতেন৷ কিন্তু উনি তো জোকার, হাসাতে এসেছেন, আমোদ দিতে এসেছেন, তো এই আমোদ গেঁড়ে রাজ্যপালের কমিক থেকে, আমাদের বঞ্চিত করার কোনও অধিকার আপনার আছে কি?
নিজেই যে ঘরে বাস করেন, সে ঘরকে সাত সকালে উঠে গ্যাস চেম্বার বলছেন৷ আমরা হাসছি আর ভাবছি উনি তার আগের দিন রাতে ফুলকপি খেয়েছেন? না মূলো? যাই হোক আমাদেরই পয়সায় খেয়েছেন তো৷ তারপর এ বয়সে স্বাভাবিক, যা হবার তাই হয়েছে৷ উনি লিখেছেন, আমরা কল্পনায় তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের সেই সশব্দ গ্যাসচেম্বারের ধ্বনি, গন্ধ উপলব্ধি করছি, হাসছি, এই বাজারেও হাসছি, এ টুইট নিয়ে আপনার উপলব্ধি দ্বিতীয় খন্ড না লিখে, তা ব্লক করার সিদ্ধান্ত আমরা মানছি না মানব না।
এখানেই কি শেষ? মোটেই নয়। কাঞ্চনকে বলুন, এই সব টুইটের এক সংকলন বার করতে৷ ত্রিদিবকে বলুন যত্ন সহকারে ছাপতে, প্রচ্ছদে থাকুক ধনখড় সাহেবের কথা বলতে বলতে, দাঁত কপাটি বেরিয়ে আসার ছবি। নারায়ণ দেবনাথের সঙ্গেই মারা গিয়েছে বাঁটুল, নন্টে, ফন্টে, কেলো, হাঁদা, ভোঁদা। এ বই অনেকটাই সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে৷ এই বইয়ের রয়্যালটি দিয়ে রাজভবনে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলোর চাষ হোক৷ সেখান থেকে গ্যাস এবং তারপরে উজ্জ্বল আলো রাজভবন জুড়ে, বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে, আরও কিছু গরিব মানুষ ফ্রিতে বিদ্যুৎ পাবে৷ সেই বিরাট সম্ভাবনাকে আপনি স্তব্ধ করতে পারেন না৷ আমরা প্রতিবাদ করছি। তারপর ধরুন বিজেপির ছোট, মেজ, সেজ, বড় নেতাদের শিক্ষিত হয়ে ওঠার সম্ভাবনাকে আপনি রুদ্ধ করতে পারেন না৷ কাঁথির ছোট খোকা, বড় খোকা, দিলু ঘোষ থেকে অগ্নিমিত্রা পাল নয় পল, এই টুইট পড়ে পড়ে শিক্ষিত হচ্ছেন, একদা এই বাংলায় মাইল ফলকের লেখা পড়ে বিদ্যাসাগর সংখ্যা শিখে ফেলেছিলেন৷ তেমনটাই, ধনখড় সাহেবের টুইট পড়ে পড়ে শুভেন্দু, দিলুদা শিক্ষিত হচ্ছেন, বিরোধী হলেও তাঁদের এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না, আপনার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছি।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনি রাজ্যের আমলাদের কথা ভাববেন না? না আমি সিনিয়রদের কথা বলছি না, জুনিয়রদের কথা ভাবুন, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে পা দিয়েই রোজ, প্রতিদিন নিয়ম করে গালাগালি খাবার যে শিক্ষা পাচ্ছেন, তা তাদের অনতিবিলম্বে স্টোইক করে তুলবে, নিরাসক্ত করে তুলবে, মান অপমানের কথা মাথায় রাখিস না, কর্ম করে যা, রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, জগদীপ ধনখড় তার প্রয়োগশালা, তিনি সকালে উঠেই যা করেন, তা আমলাদের ট্রেনিং, কোন কথা কানে নিতে হয়, কার কথা কানে নিতে হয় বা হয় না, তার ট্রেনিং। বিনামূল্যে এই ট্রেনিং আপনি বন্ধ করতে পারেন না, আমরা প্রতিবাদ করছি।
আপনি বলেছেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, রাজভবন থেকে পেগাসাস চলছে, মানে পেগাসাসের ভাইরাস ছড়ানো হচ্ছে, ১০০ কোটি টাকা দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে সওদা করেছেন, তার ব্যবহার হচ্ছে। ধরা যাক, ঐ বিশাল রাজভবনের কোনও এক কোণে বসে ধনখড় সাহেব, ফোনে আড়ি পাতছেন, তা মোকাবিলা করার সহজ উপায় তো ছিল, রাজ চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, কাঞ্চন মৈত্রদের বসিয়ে দিন৷ কিংকর্তব্যবিমূঢ়, কুঝ্বটিকা, পুন্ডরীকাক্ষ পুরকায়স্থ ইত্যাদি বলে যাক, জাঠ ধনখড় কিছু বাংলা শিখুক, হাঁপিয়ে গেলে, মানে তেনার নাভিশ্বাস উঠলে নিজেই বন্ধ করে দেবেন পেগাসাসের কারখানা, তেমন তেমন হলে ওনার টুইটের জবাবে, আপনিও বাংলার এই সব রত্ন শব্দগুলোর প্রয়োগ করতে পারেন, হোঁদল কুৎ কুৎ, কুমড়ো পটাস, রামসুখ তেওয়ারির কথা,পুরনো শব্দগুলো ফিরে আসবে, ওনারও বাংলা শিক্ষা হবে, তা না করে টুইট ব্লক করা আমরা মানছি না মানবো না।
শেষ কি এখানে? ধুর, ধনখড় সাহেবের টুইট আরও বহুতর সম্ভাবনা খুলে দেয়৷ বাঘের আগে ফেউ আসে, তা ফেউকে তো চিনতে হবে, চেনার উপায়? ধনখড় সাহেবের টুইটের পরেই কমরেড সুজনের টুইট আসবে, ফেউ চেনা যাবে। কত মাথা খাটিয়ে কমরেড সুজন গতকাল বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যে আফটার অল গভর্নর দ্বারা অ্যাপয়েনটেড, তা কি তিনি অস্বীকার করতে পারেন? মানুষের দ্বারা নির্বাচিত নয়, গভর্নর দ্বারা অ্যাপয়েনটেড৷ কমরেড সুজনের পলিটিক্যাল সেন্স। ইদানিং বিধানসভায় বলার চান্স পাচ্ছেন না, তাই ফেউ বনেছেন৷ ধনখড় টুইট করছেন, কমরেড সুজনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হচ্ছে৷ তিনিও টুইট করছেন৷ আমরা ফেউ চিনতে পারছি৷ আমাদের ফেউ চেনার অধিকার আপনি কেড়ে নিতে পারেন না৷ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আমরা আপনার এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের স্বার্থ, সংবাদপত্রের স্বার্থ, সাংবাদিকদের স্বার্থ আপনি দেখবেন না? মাঝে মধ্যেই বাজার শুকিয়ে যায়৷ আমি খবরের বাজারের কথা বলছি৷ শুকিয়ে যায়, সেদিন হয় তো দিলুদা দিল্লিতে, সুকান্তদা তো উত্তর বঙ্গ বিজেপি, কাঁথির খোকাবাবুর রেস্ট ডে, আপনিও বড় কিছু ঘোষণা করলেন না, সেদিন? কে বাঁচাবে? গড়িয়াহাটে বাইক দুর্ঘটনা তো হেড লাইন হতে পারে না৷ সেদিন আমাদের সহায় রাজ্যের রাজ্যপাল, জগদীপ ধনখড়৷ এরকম বাজারে কিছু সাংবাদিক আছে, যাঁরা ফোন করে ওনাকে রিকোয়েস্ট করেন, স্যর মুখ্যমন্ত্রীকে একটা টুইট করুন, প্লিজ করুন, আমাদের কাগজের প্রথম পাতা জুড়ে জাবর কাটার মতো কিছুই নেই৷ তিনি শুনে মুচকি হাসেন, মূলো, ফুলকপি, বাঁধাকপি খেয়ে একটা টুইট করেন৷ ওমনি ছা গয়া আসমান। আমাদের চাকরি বাঁচে, মাইনে বাঁচে, আপনি আমাদের সেই সুযোগ কেড়ে নিতে চান, আমরা তা হতে দিতে পারি না, আমরা আপনার সিদ্ধান্তের চরম প্রতিবাদ জানাচ্ছি, দরকারে ডরিনা ক্রসিং এ কোভিড নিয়ম মেনেই জমায়েতের ডাক দেব, ফিরিয়ে নিন আপনার সিদ্ধান্ত।
এবং অন অ্যা সিরিয়াস নোট, ইতিহাস থাকুক, লিপিবদ্ধ হোক এই সব হারামিপনা, বজ্জাতি, প্রতিদিন বাংলার মানুষের পিছনে কাঠিবাজির ইতিহাস আমরা মুছে যেতে দেব না৷ উনি টুইট করুন, তা থাকুক আগামী দিনের জন্য৷ এক বাংলা বিরোধী, বাঙালি বিরোধী মানুষের যাবতীয় কুকর্ম থাকুক আগামী প্রজন্মের জন্য৷ রাজ্যের সাংবিধানিক মাথা এই বাংলাকে সন্ত্রাসের গ্যাস চেম্বার বলে এই রাজ্যের শিল্প, পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছেন, লক্ষ কোটি বেকারের আগামী দিন কেড়ে নিচ্ছেন, সেই শয়তানের ইতিহাস মুছে ফেলা হবে?
ওনাকে লিখতে দিন, মেফিস্টোফিলিসের গাথার পাশে স্থান হোক জগদীপ ধনখড়ের, চালু রাখতে দিন ওনার টুইট, শয়তানের ইতিহাসও জরুরি, শয়তানের স্বরূপ জানাটাও জরুরি।