Saturday, June 14, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ৮ বছর তো হল মোদিজী, এবার হিসেব নিকেশটাও হোক

চতুর্থ স্তম্ভ: ৮ বছর তো হল মোদিজী, এবার হিসেব নিকেশটাও হোক

Follow Us :

সবে এসেছেন, অনেক ঢাক ঢোল বেজেছে, ফুল ছড়ানো হয়েছে। আমাদের মানে আম আদমির পয়সায় নয় নয় করে সারা পৃথিবী ঘুরেছেন, ছড়িয়েছেন বিস্তর৷ এটিকেট, ভদ্রতা, সভ্যতা ইত্যাদি তো চর্চার বিষয়৷ সে সব তো বিকেলে হাফ প্যান্টুল শাখায় শেখানো হয় না৷ বিভিন্ন দেশে গিয়ে আম্বানি, আদানিদের হয়ে প্রচুর ওকালতি করেছেন৷ এর প্লেনের বরাত চাই তো তার তেলের খনি, কর্পোরেট ল্যাঙ্গোয়েজে একে বিশুদ্ধ ব্রোকারি বলে, সে সব হয়েছে। দেশে অবশ্য দুটো কাজ মন দিয়ে করেছেন৷ প্রথমটা হল দায়িত্ব নিয়ে একটা বেড়ে ওঠা অর্থনীতিকে চুলোর দোরে পাঠিয়েছেন৷ দ্বিতীয়টা হল প্রতিদিন নানান মিথ্যে বলে দেশকে হিন্দু আর মুসলমানে ভাগ করেছেন৷ বেশ করেছেন। এমনটা তো নয় যে, আমরা আপনার কাছ থেকে খুব অন্য কিছু আশা করছিলাম৷ আমাদের চোদ্দ পুরুষের ভাগ্যি যে এর থেকেও খারাপ কিছু করেননি৷ মানে এখনও করেননি। তো এইসব করতে করতে ৮, ৮ টা বছর কেটে গেল৷ এবার আসুন স্যর, একটু হিসেব নিকেশ করা যাক৷

আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে বলে ২০১৪ তে এসেছিলেন ক্ষমতায়৷ তারপর ৮ বছর কেটে গেল৷ এবার আসুন একটু কাজের হিসেব নেওয়া যাক। প্রথমে আসুন দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে কথা হোক৷ ২০১৪ তে যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন স্যর, তার আগে অর্থনীতিতে ফুল ফোটেনি৷ আমরা জানি, কিন্তু খুব ধীর লয়ে হলেও আমাদের মোট সম্পদ বাড়ছিল৷ আমাদের দেশের মানুষের গরিবি যায়নি তো বটেই৷ কিন্তু সামান্য হলেও তাদের মাথাপিছু রোজগার বাড়ছিল৷ ১০০ দিনের কাজ শুরু হয়েছিল, মিড ডে মিল চালু হয়েছিল, কৃষকদের ফসল বিমা চালু হয়েছিল, হচ্ছিল৷ কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছিল৷ এরকম এক সময়ে আপনি এলেন, এলেন না বলে উদয় হলেন বলাই ভালো৷ শনি ও তো উদয় হয়, জীবনে আসে। বছর দুয়েকের মধ্যে নোটবন্দি আর জিএসটি করে অর্থনীতির কাঁথায় আগুন লাগিয়ে দিলেন৷ দেখার মতো ব্যাপার৷ আপনি হাততালি বাজাচ্ছেন, ওদিকে মানুষ হাসফাঁস করছে। য

সেই যে অর্থনীতি নামল, এখনও উঠল না। কতখানি পতন? মোট জাতীয় সম্পদের তুলনায় বাংলাদেশও আমাদের ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে৷ মাথাপিছু আয় এখন বাংলাদেশের মানুষের অনেকটাই বেশি। কেন? কারণ আপনার অবিমৃষ্যকারিতা। দারিদ্রের হিসেব? আজ্ঞে আপনার মুখেই শোনা, ৮০ কোটি মানুষকে বিনা মূল্যে চাল, গম, ছোলা দেওয়া হয়েছে৷ তার মানে ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ৮০ কোটি, মানে ৬০ % মানুষ এতটাই গরিব যে তাদের বিনামূল্যে রেশন দিতে হচ্ছে! এবার সেও যা দেওয়া হয়েছে, হয়েছে, এবার তার বরাদ্দ কমানো হচ্ছে, মানে সেই দরিদ্র মানুষের প্রায় ৩০% আর রেশন পাবে না৷ আজ্ঞে হ্যাঁ, কারণ সংগ্রহের পরিমাণ কমানো হয়েছে৷ ২০১৪ তে রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৪১০ টাকা, তো তখনই, আপনাদের মন্ত্রী, নেতারা রাস্তায় গ্যাসের সিলিন্ডার মাথায় নিয়ে মিছিল করছিলেন৷ আজ? সিলিন্ডারের দাম ১০৩০ টাকা৷ ৬২০ টাকা দাম বেড়েছে এই আট বছরে৷ আপনি ময়ূরকে দানা খাওয়াচ্ছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন।

২০১৪-তে কেরোসিনের দাম ছিল ১৮ টাকা লিটার৷ আজ? ৯০ টাকা। রোজগার কমেছে, দাম বেড়েছে৷ এ তো আপনারই অবদান মিঃ প্রাইম মিনিস্টার। বেকারত্ব? রেকর্ড৷ স্বাধীনতার পর থেকে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে৷ এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যুবকরা কাজের চেষ্টাও করছেন না, এতটাই হতাশ তাঁরা। রেল, ডাক, তার, রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প নামমাত্র দামে বেচে দেওয়া হচ্ছে৷ দেশের বন্দর তো এখন আদানির হাতে, জাহাজ বন্দর, বিমানবন্দর তৈরি করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ তারা দেশের সবচেয়ে খারাপ আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা কামাচ্ছে৷ দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষ যখন নতুন করে দারিদ্র সীমার নীচে চলে গেল, ঠিক তখন দেশে নতুন বিলিওনিয়ার তৈরি হচ্ছে৷ এশিয়া এবং বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নতুন নতুন ভারতীয় নাম উঠে আসছে৷ আপনি স্বাধীনতার অমৃত কাল উৎসবে ভাষণ দিচ্ছেন৷ যে স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনারা, মানে আরএসএস – হিন্দু মহাসভা, সাভারকর, গোলওয়ালকর, হেডগাওকরের দল অংশগ্রহণ তো করেনইনি, বরং বিশ্বাসঘাতকতা করে৷

সে যাই হোক আপাতত পরের ধনে পোদ্দারি করছেন কেবল নয়, তার লুঠতরাজেও সাহায্য করছেন৷ ঠিক এই ৮ বছরে ৫৭ জনের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে, যারা দেশের পয়সা মেরে বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের গুটি কয়েক, মেরেকেটে ৩ জনকে বাদ দিলে ঘটনাচক্রে প্রত্যেকে গুজরাটি ভাই ছে, একটা হিসেব পেলাম, ৮১ – ৮২ সালে মোট সম্পদ যা তৈরি হয়েছে ১৪৫০০ কোটি টাকা, মোট সম্পদ মানে? তার মধ্যে কাঁচা মাল আছে, প্রযুক্তির খরচ আছে, উৎপাদন খরচ আছে, মজুরি আছে, মুনাফাও আছে, তো সেই ১৪৫০০ কোটি টাকার মধ্যে মজুরি হিসেবে শ্রমিকরা পেয়েছিল ৩০.৩% আর মুনাফা হিসেবে মালিকরা পেয়েছিল ২৩.৪%, ২০১৯ – ২০ সালে মোট সম্পদ তৈরি হল ১২.১ লক্ষ কোটি টাকা, তার ১৮.৯% পেলেন শ্রমিকরা, মালিকরা পেলেন ৩৮.৬% টাকা। কার আচ্ছে দিন এল স্যর?

মাঠে দাঁড়িয়ে গরিব গুর্বো মানুষদের দিকে তাকিয়ে বললেন, আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে, এল আদানি, আম্বানির? অক্স ফ্যাম রিপোর্ট এ বলা হচ্ছে ৩৩ ঘন্টায় ১০ লক্ষ মানুষ গরিব হচ্ছেন, আর ওই প্রতি ৩৩ ঘন্টায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে একজন নতুন ধনী তৈরি হচ্ছে, এই হিসেব ছিল পৃথিবীর, ভারতবর্ষের বৈষম্য সেই পৃথিবীকেও লজ্জা দেবে৷ জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশের হাতে আছে জাতীয় আয়ের ২২%, মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ দখল করেছে জাতীয় আয়ের ৫৭% এটা ছিল ২০১৯-২০ র হিসেব৷ এখন? ২০২১-২০২২ এর হিসেব বলছে দেশের জনসংখ্যার ১% মানুষ দখল করেছে ৭৭% জাতীয় সম্পদ৷ আপনি এবং আপনার অর্থমন্ত্রী জানাচ্ছেন, আমরা নাকি অমৃতকালে ঢুকে পড়েছি৷ কী কাণ্ড বলুন তো, আপনাদের এই অসভ্য অমৃত কালে গরিব আরও গরিব হচ্ছে৷ বড়লোক আরও আরও বড়লোক হচ্ছে। মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ৪০০% ৷ গৌতম আদানির ১৮৩০%৷ এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ। ২০১৪ সালে স্যর, যখন আপনি ঢোল পিটিয়ে ক্ষমতায় এলেন, সেই বছরে আম্বানির সম্পদ ১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা, আর আপনারই বদান্যতায় আজ সেই সম্পত্তি বেড়ে ৭.৯০ লক্ষ কোটি টাকা। গৌতম আদানির ছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা, এখন ৮.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা, নরেন্দ্র ভাই গৌতম ভাইকেও চেনেন, মুকেশভাইকেও চেনেন, ওনাদের ছেড়েই দিন, ওনাদের স্ত্রীর সামনেও মাথা ঝুঁকিয়েই অভিবাদন করে থাকেন।

আপনার ট্যাক্স বাড়ছে? আয় কমছে? আদানি আম্বানিদের ট্যাক্স কমছে, কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০% থেকে কমিয়ে ২২% করা হয়েছে, রাজস্বের ক্ষতি? মাত্র ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা, মোদিজীর তো নয়, আপনার আমার টাকা। পিএফের সুদ কমেছে, জমা টাকায় সুদের হার কমেছে, বেকারি বেড়েছে, মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, পেট্রল ডিজেলের দাম রোজ বাড়ছে, এসব হল মোদিজীর আচ্ছে দিনের ছবি। এরই মধ্যে খুব সন্তর্পণে তীব্র গোঁড়া হিন্দুত্বের বীষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশে, প্রানিতিক অঞ্চল, গ্রাম দেহাত, শহর বস্তি কোনও জায়গা বাদ নেই। কেন? ওনারা হিন্দু বলে? ওনারা খুব ধার্মিক বলে? একেবারেই না, দেশের সাধারণ মানুষ লড়তে থাকুক, মরতে থাকুক, এই তো দেখুন না, গত ৫/৬ দিন ধরে কী চলছে, আপনি হয় দাঙ্গা করছেন, নয় দাঙ্গায় উসকানি দিচ্ছেন, নাহলে দাঙ্গা থামানোর কাজ করছেন, মিছিল মিটিং করছেন, আপনি ব্যস্ত কী নিয়ে? দেশের বেকারত্ব নিয়ে? স্বাস্থ নিয়ে? শিক্ষা নিয়ে? না, আপনি ব্যস্ত হিন্দু মুসলমান ইস্যুতে আপনার অবস্থান জানাতে, হয় দাঙ্গা করতে, নয় দাঙ্গা থামাতে, আর ঠিক এটাই মোদিজী, মানে আমাদের চাওয়ালা, কাম চৌকিদার, কাম প্রধান সেবক এটাই চান, আমরা লড়ে মরি৷ আদানি আম্বানির টাকা হোক৷ উনি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান, নিজের জন্য প্লেন কিনেছেন, বিরাট বাসভবন তৈরি হচ্ছে, জীবন তো ফুরফুরে৷ ময়ূর খাওয়াবেন, ওনার কেনা প্রচারমাধ্যমে, আমরা মোদিজীর জয়ঢাক বাজার শব্দে মাতাল হব৷ অর্ণব এখনও ৮ বছরের পুরনো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নেশন ওয়ান্টস টু নো বলে প্রশ্ন করেই যাবে৷ মাঝে মধ্যে কানাডার নাগরিক মোদিজীকে প্রশ্ন করবেন, আপনি আম চুষে খান? চেটে খান? নাকি কামড়ে খান? আর আমরা? কন্ঠ তেমন জোর নয় বলছেন? তত বড় সংবাদমাধ্যম নয় বলছেন? ঠিক আছে তাই সই৷ কিন্তু প্রশ্ন করে যাব৷ ৮ বছরে কি পেল দেশের আম জনতা, প্রশ্ন করছি মোদিজী, জবাব দিন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | ১০০ মি/সা/ইল অ‍্যা/টাকে ত/ছন/ছ তেল আভিভ, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | এবার ইরানের পাল্টা মি/সা/ইল হা/মলা, ত/ছ/নছ তেল আভিভ, কী করবে ইজরায়েল?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | Benjamin Netanyahu | বিগ ব্রেকিং, মোদিকে ফোন নেতানিয়াহুর, কার পাশে দিল্লি?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের ব্যালেস্টিক মি/সা/ইল কনভয় হা/ম/লা ইজরায়েলের, বিপুল বি/স্ফো/রণ,দেখুন কী অবস্থা
00:00
Video thumbnail
TMC Meeting | ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি ঘিরে আজ তৃণমূলের বৈঠক, কে কে উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে?
00:00
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
02:00:07
Video thumbnail
Donald Trump | Israel | ইজরায়েলকে সমর্থন আমেরিকার এবার কী হবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:49:56
Video thumbnail
Air India Incident | আমার চোখের সামনেই...কী হয়েছিল বিমানে? সব জানালেন একমাত্র জীবিত যাত্রী
02:56:07
Video thumbnail
Eco ইন্ডিয়া | Eco ইন্ডিয়া দেখুন প্রতি রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায়
00:25
Video thumbnail
Kultali | ফের কুলতলিতে বাঘের আ/তঙ্ক
00:39