সিএবি’র মিডিয়া টিম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছবিটা পোস্ট করতেই চমকে উঠেছিলাম। সিনিয়র ব্যাটার মনোজ তিওয়ারির দুটো হাঁটুতেই ব্যান্ডেজ! কিন্তু মুখে সেই লড়াকু ক্রিকেটারের হাসি। সেই টপ হ্যান্ড গ্রিপে ব্যাট ধরে দাঁড়ানো। এই যন্ত্রণা নিয়ে তিনি খেলে চলেছেন! আর কোণঠাসা বাংলাকে রঞ্জি ট্রফি সেমি ফাইনালে প্রথম গণ্ডি টপকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এখনও! নিজে একরাশ আতঙ্কে ( বাংলার দলের ভবিষ্যতের চিন্তায় ) এই ছবিটা দেখেই, কি মনে হল – জানি না, মনোজকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠিয়ে বসেছিলাম ছবিটার সঙ্গে। কথা বলতে চেয়েছিলাম। উত্তর মিলল : LOL। আজ নয়, দাদা … প্লিজ কাল দিনের খেলা শেষ হলে পর।
উত্তরে বিনয়। আর মনকে শক্ত রাখার এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলার এক যুবক। ভাবছিলাম সিএবি – র মিডিয়া টিম এই ছবিটা এডিট করে পাঠাতে পারতো। মাঠের বাইরের টেনশনটা এমন করে চড়চড় করে বেড়ে যেত না, বাংলার ক্রিকেপ্রেমীদের। এটা প্রাথমিক ভাবনা ছিল। কিছুক্ষণ ছবিতে মনোজকে দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই ছবিটাই এডিট করে শুধু মনোজকে রেখে বাংলার ড্রেসিং রুমে রাখাই যায়।
কেন এমন ভাবনা? শেয়ার করতে চাই সকলের সঙ্গে। মনোজ তিওয়ারি এখন আর শুধু বাংলার সিনিয়র সফলতম ব্যাটারই নন, তিনি রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। জানিনা, ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজীর আদৌ আছে কিনা – একজন মন্ত্রী প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ( ক্লাব ম্যাচ না খেলে) খেলে নক আউট পর্যায়ে নিয়মিত রান করছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছেন। আর মধ্য প্রদেশ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বাংলার ৩ টপ অর্ডার ব্যাটারকে মাত্র ১১ রানে ফিরিয়ে দিয়েছে, তখন থেকে একদিক থেকে লড়াই শুরু করেছেন। এরমধ্যে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে দেখেছেন দলের ৫ উইকেটে ৫৪ রানের কোণঠাসা অবস্থা। সেই থেকে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
#RanjiTrophy2022 SF 1, Day 2
MP 🆚 BENGAL
MP began Day 2 at 271/6, added 70 more before they were bundled out for 341. H Mantri scored 165 of those🔥
Bengal were reeling at 5/54 before M Tiwary (84*) & Shabaz Ahmed (72*) combined to take them to 197/5 at stumps.
— Cricket.com (@weRcricket) June 15, 2022
তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষে মধ্য প্রদেশ ৩৪১ রানে থেমে যায়। বাংলার পেসার মুকেশ কুমারের দাপটে মধ্যপ্রদেশ গুটিয়ে যায়। ৪টি উইকেট তুলে নেন মুকেশ কুমার আর ৩ উইকেট দখল করলেন অভিজ্ঞ স্পিনার শাহবাজ । আর এখন সেই শাহবাজই ক্রিজে মনোজের সঙ্গে ব্যাট নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
2021/22 Ranji Trophy : Semi Final – Day 2 Update#RanjiTrophy #RanjiTrophy2022 #CricketTwitter #SanjuSamson #rahultripathi #IPL #Cricket #bcci pic.twitter.com/DetsOeyWj0
— Indian Domestic Cricket Forum – IDCF (@IDCForum) June 15, 2022
রঞ্জিট্রফির সেমিফাইনালে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের শেষে বাংলার স্কোর ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৭। মনোজ তিওয়ারি (৮৪*) এবং শাহবাজ আহমেদের (৭২*) জুটিতে ভর করে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে লড়াই করছে বাংলা। ষষ্ঠ উইকেটে ১৪৩ রান যোগ হয়ে গেছে। আরও দরকার ১৪৫ রান। তবে বাংলা টপকে যাবে প্রথম ইনিংসের লড়াইয়ে।
মাঠের বাইরে কোচ অরুণলালও জানেন তাঁর দলে মনোজ এক স্তম্ভ। ভরসার পয়লা নম্বর হাতিয়ার এই ব্যাটার। তাই তিনি বলছেন দিনের খেলা শেষে : মনোজ তো বাংলার লিজেন্ড। ওর চেয়ে বেশি রান বাংলার হয়ে খেলে কেউ করেনি এখনও। কি মারাত্মক খিদে! বল উইকেটে পড়ে স্পিন নিচ্ছে। সেখানে সে সব চাপ সামলে খেলে যাচ্ছে। ওকে দেখে শেখার আছে। কি স্কিল! খেলাটা এত ভালো বোঝে, দলের সব সময় কাজে লাগে। মধ্য প্রদেশকে থামিয়ে দিতে ও সারাক্ষণ দলের নবীন নেতা ঈশ্বরণকে সাহায্য করে গেছে।
মনোজ এখনও পর্যন্ত ৯ টি বাউন্ডারি মেরেছেন, প্রতিটি দেখার মতন। ওর সঙ্গী এখন শাহবাজ। বাংলার কোচের বড় ভরসা এই সফল অলরাউন্ডারের উপর। বলেছেন সে কথা। “ও তো অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে চলেছে। কি টেম্পেরামেন্ট! বিনা লড়াইয়ে সামান্য জমিও শাহবাজ কাউকে দেয়না। ও ম্যাচ খেলতে নামলেই সাফল্য পায়।”
অরুণ একটা কথা ঠিক বলেছেন, এত সব লড়াই বেকার হয়ে যাবে – যদি না দল বিপক্ষের প্রথম ইনিংসের রান না টপকাতে পারে।
Day 2: Stumps!
BEN v MP, 1st Semi-FinalBEN 197-5
MP 341Shahbaz Ahmed﹡: 72 (149)
Manoj Tiwary: 84 (182)
Saransh Jain 16-3-58-1Bengal trail by 144 runs..
📷 – BCCI/Hotstar#BENvMP #RanjiTrophy #CricketTwitter #ManojTiwary #ShahbazAhmed #Cricket pic.twitter.com/KFqZrsEqqU
— Sportz Point (@sportz_point) June 15, 2022
দ্বিতীয় দিনের শুরুর দিকটা মন্দ ছিল না বাংলার পক্ষে। বিপক্ষের ইনিংস বেশি লম্বা হয়নি। কিন্তু শূন্য রানে রমন – ঘরামি ফিরতেই চাপটা বাড়ে। ১১ রানে অনুষ্টুপ ফিরেছেন। তারপর ঈশ্বরণ। আবার উইকেটকিপার – ব্যাটার অভিষেকও। টলানো যায়নি মনোজকে। শাহবাজ মনে হয় মনোজের লড়াইয়ে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মাঠে মনোজ বুঝতেই দেননি যে হাঁটুর যন্ত্রণা আসল চ্যালেঞ্জটার সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
এই বাংলা দলই আগের ম্যাচে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। পরপর ৯ জন ব্যাটার ৫০ রানের বেশি করেছিলেন। মনোজকে ঘিরে বাকিরা লড়াই চালিয়ে গেলে ১৪৫ রান আরও তোলাটা সহজ।
এরই মধ্যে বাংলা ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া দলের সকলকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা দিয়ে উৎসাহিত করলেন। বার্তায় লিখেছেন : ” নিজেদের উপর বিশ্বাসটা যেন জমাট থাকে, আমরা অনেক ভালো টিম। যোগ্য দল। আরও অনেক লড়াই বাকি এই ম্যাচে। আমরা এই লড়াই জিতবই। সকলে একজোট হয়ে দারুণ খেলছো। ” কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের দিন সকালে কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে উড়ে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডালমিয়া। এবার তিনিও বাবার সময়ে রঞ্জি জয়ের (১৯৮৯-৯০) মুহুর্ত ফিরে পেতে মরিয়া।
ম্যাচের তৃতীয় দিন আসল লড়াই।
ছবি: সৌ- সিএবি, টুইটার।