skip to content
Saturday, July 27, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | সিপিএম ক’টা আসন পাবে? ক’টা আসনে লড়াই হবে?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | সিপিএম ক’টা আসন পাবে? ক’টা আসনে লড়াই হবে?

বামেদের রাস্তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা লড়ছেন

Follow Us :

এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জেতা হারা নিয়ে কথা শুরু হলেই বামেদের প্রসঙ্গ আসছে, বারবার আসছে। সেই বাম যাঁরা একদা এই বঙ্গজীবনে বোরোলিনের মতোই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন, তাঁরাই কমতে কমতে বিধানসভাতে শূন্য হয়েছেন। কিন্তু বাম তো কেবল সিপিএম সিপিআই নয়, বাম এক আদর্শ, বামপন্থা এক পথ যা সাম্যের কথা বলে। পৃথিবীতে শ্রেণি বিভাজন থাকবে, বৈষম্য থাকবে আর বামপন্থা উবে যাবে তা তো হয় না, বামপন্থাও থাকবে। কাজেই তার নানান বিবর্তন আমরা দেখব, সে শেষ হওয়ার আগে ফিনিক্স পাখির মতোই আবার ফিরে আসবে এটাই সমাজ বিজ্ঞানের এক সত্য। তো শূন্যতে নামার পর আর কতটা নামা যায়? এদিকে রাজ্যজুড়ে শাসক দলের দুর্নীতি, ওদিকে মোদিজির দেশ বেচে দেওয়া আর বাড়তে থাকা বৈষম্যের সঙ্গে নোংরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তো এক উর্বর ক্ষেত্র যেখানে বামপন্থা দেশজুড়েই এক নতুন স্বর হয়ে উঠতেই পারে। উঠছে না কারণ সে মাটিতে বামপন্থার বীজ নেই, ছড়ায়নি কেউ। কিন্তু বাংলার মাটিতে তো আছে, তাই একটা রব সর্বত্র, বামেরা ফিরছে বামেরা ফিরছে। কীভাবে ফিরবে? যে ভোট এক ধাক্কায় ৩৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে তা একধাক্কায় আবার ওই ৩৮ শতাংশে পৌঁছে যাবে? সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়। যে কোনও জমানার শিখরই আসলে তার পতনের সূত্রপাত, মানে সব থেকে উপরে ওঠার পরে তার পতন শুরু হয়, আর একবার পতন শুরু হলে আবার ঘুরে দাঁড়ানো, আবার উঠে পথ চলা ভারি কঠিন। কারণও সেই শিখরে থাকাকালীন অজস্র ভুল, অজস্র ব্লান্ডার, অজস্র স্ববিরোধী কাজ পরবর্তী সময়ে বোঝা হয়ে থাকে।

ধরুন বাম জমানার শিখর ২০০৪-এর লোকসভা, ৪২টার মধ্যে ৩৫টা আসন পেয়েছিল বামেরা। ভোট ৫০ শতাংশ। কিন্তু অন্যদিকে বিভক্ত বিরোধীদেরও মিলিত ভোট শতাংশ ছিল কাছাকাছি ৫০ শতাংশ, কিন্তু আসন মাত্র সাত। মমতা একমাত্র তৃণমূল সাংসদ। ২০০৬-এর বিধানসভা বামফ্রন্টের ভোট ৪৯.৭২ শতাংশ, আসন ২৩৫। অন্যদিকে বিভক্ত বিরোধীদের কাছে বেশি ভোট, প্রায় ৫১ শতাংশ কিন্তু আসন ৫১টা। আমরা সেই সময়ে শুনেছি ওরা ৩৫, আমরা ২৩৫। কিন্তু তখন ক্ষয় আর পতন শুরু হয়ে গেছে। এক অখ্যাত মদন মিত্র বিষ্ণুপুর বাই ইলেকশনে জিতে গেল ২০০৯-এ। আর তারপরেই ছিল সাধারণ নির্বাচন, যার আগে বামেরা কংগ্রেস সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলেছে, কাজেই কংগ্রেস তৃণমূল জোটের সূচনা হতে পেরেছে। ২০০৯-এ বামফ্রন্ট ৪৩.৫ শতাংশ, একটু বেশি ভোট পেল, আসন হারাল ২০টা। কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেসের মোট ভোট ছিল ৪৪.৫ শতাংশ, আসন পেল ২৬টা আর বিজেপি তখনও তলানিতে, ৬ শতাংশ ভোট আর আসন একটা। এই নির্বাচন বলেই দিচ্ছিল পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের বাম বিপর্যয় অনিবার্য। কিন্তু তা জানার পরেও ২০০১-তে বামেরা কোর্স কারেকশন করতে পারল না, নিজেদের শুধরোতে পারল না, বরং নিজেরা সঠিক পথেই আছে, তারাই শিল্প চাইছে, তারাই উন্নয়ন চাইছে বলে চলল। ২০১১-তে স্বাভাবিক বিপর্যয় এল, ক্যাপ্টেন সমেত গোটা টিম বোল্ড আউট। কিন্তু ভোট শতাংশ কি খুব খারাপ ছিল সেবারেও? না, সেই বিপর্যয়ের দিনেও বামেদের ভোট ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ, আসন ৬৭। কংগ্রেস তৃণমূলের মিলিত ভোট ছিল ৪৭ শতাংশ, আসন ২২৮ আর বিজেপি সেদিনেও কোনও শক্তিই নয়, পেয়েছিল মাত্র ৪.০৬ শতাংশ ভোট। কিন্তু এই ভোটের পরে কুঁকড়ে গেল বামেদের সংগঠন, হামলার মুখে দাঁড়িয়ে অসহায় সমর্থকেরা দেখল নেতৃত্ব দিশেহারা, পার্টি অফিস খুলছে না, গণশক্তি বোর্ডে লাগানো হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: বিচারকদের গলায় উল্টো সুর, পরিবর্তনের হাওয়া কি বিচার ব্যবস্থাও টের পেয়েছে?

সেই দিশেহারা কর্মী সমর্থক ভোটারেরা তৃণমূলের হামলা রুখতেই ২০১৪-তে বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পটচিত্রে বিজেপির পাশে দাঁড়াল। ২০১৪ লোকসভার হিসেবটা দেখুন। তৃণমূল ৩৯ শতাংশ ভোট আর ৩৪টা আসন পেল, বিজেপি ১০ শতাংশের বেশি ভোট বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ ভোট পেল আর দুটো আসন, কংগ্রেস ৯.৫৮ শতাংশ ভোট আর ৪টে আসন, সিপিআইএম ২৯.৭১ শতাংশ ভোট পেল আর দুটো আসন। রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিম জিতলেন মাত্র ১৬৩৪ ভোটে আর মুর্শিদাবাদে বদরুজ্জোদা খান জিতলেন ১৮৪৫৩ ভোটে। কিন্তু মানুষকে কি বললেন কোথায় তাঁদের ভুল হয়েছিল? কী ভুল হয়েছিল? না। তাঁরা তখনও ওই একই উন্নয়ন আর বিকাশের কথা বলছেন যার সারাংশ হল মানুষ বুঝতে পারেনি, মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে, মানুষ ভুল বুঝেছেন, আমরা সঠিক পথেই আছি। কিন্তু বহু আগেই কংগ্রেস বাম ঐক্যের যে কথা বলে দল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে সৈফুদ্দিন চৌধুরিকে, সেই কং-বাম ঐক্য নিয়ে এক বিভ্রান্তিকর তত্ত্বের অবতারণা শুরু হয়ে গেল, যার পেছনে নির্বাচনী পাটিগণিত ছাড়া কিচ্ছু ছিল না, এবং তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রচুর ঝামেলা ছিল। এরই মধ্যে বিজেপি বাড়ছে, কেন্দ্রে সরকার নরেন্দ্র মোদির, অতএব তৃণমূল বিরোধীরা বিজেপির দিকে যেতে শুরু করেছিল, এবার তা এক্সোডাসে বদলে গেল। ২০১৯-এর নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস আঁতাঁত হল না, কেবল কয়েকটা আসন ছেড়ে একটা গজকচ্ছপ গোপন সমঝোতা হল। তৃণমূল নিজের ভোট আরও বাড়াল কিন্তু ৪৩.৭ শতাংশ ভোট পেয়েও ১২টা আসন হারিয়ে ২২টা আসন পেল, বামেদের ভোট কমল ১৬.৭২ শতাংশ, পেল ৭.৫ শতাংশ ভোট, আসন শূন্য। কংগ্রেস ৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে কোনওরকমে মালদহ উত্তর আর বহরমপুর আসন দুটো ধরে রাখল। আর বিজেপি সেই বাম-কংগ্রেসের কমে যাওয়া ভোটের ২২ শতাংশ ভোট নিজেদের ঝোলাতে নিয়ে এল, ৪০.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮টা আসন জিতে নিল।

বাংলার রাজনীতিতে প্যারাডাইম শিফট, তৃণমূল আর বিজেপি মুখোমুখি লড়ছে, একে অন্যের দল ভাঙাচ্ছে, তীব্র আক্রমণ করছে। তৃণমূলের দলের মধ্যে, সরকারের হাজার একটা দুর্নীতি বেরিয়ে আসছে, মোদি সরকারের এজেন্সিগুলো সেটাকে ব্যবহার করে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সেই দুর্নীতির চেহারাটাকে আরও বিরাট করে দেখানোর কাজে নেমেছে, তারা দুর্নীতির ইস্যুতেই সরকার ফেলতে চায়। অন্যদিকে বামেরা এবং এ রাজ্যে বামেদের সঙ্গী কংগ্রেস তৃণমূল-বিজেপির গোপন সমঝোতা, দিদি মোদি এক হ্যায় বলে এক চরম বিভ্রান্তিকর স্লোগান নিয়ে বিধানসভার নির্বাচনে নেমে পড়ল। তৃণমূল-বিজেপি বাইনারি আরও স্ট্রং হল, হয় বিজেপি নয় তৃণমূল, এই রাজনীতির মধ্যে পড়ে ২০২১-এ বিধানসভাতে বাম-কংগ্রেস শূন্য। এবং সেই প্রেক্ষিতে সাধারণ নির্বাচন এসেছে। বামেরা এক সাম্প্রদায়িক সরকার, এক জঙ্গি জাতীয়তাবাদী সরকার, সংবিধান-বিরোধী সরকারকে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি অনায়াসে তৃণমূলের দুর্নীতি আর জনবিরোধী সমস্ত কাজের বিরোধিতা করে মানুষের কাছে ভোট চাইতেই পারত, সেটা কতটা কাজ করত তা পরের কথা কিন্তু সেই আবেদনে কোনও বিভ্রান্তি থাকত না। কিন্তু তারা এক সেটিংয়ের তত্ত্ব নিয়ে মানুষের সামনে হাজির যা সাধারণ মানুষের বুঝে ওঠা অসাধ্য, ফলে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতায় ঘাটতি বেড়েই চলেছে। তার উপরে এক জাতীয় মঞ্চ, যেখানে তাঁরা এক মঞ্চে বসছেন তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে, এক মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন, মানুষ ঘেঁটে ঘ, সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি। এবং আবার এক বাইনারি তৈরি হচ্ছে তৃণমূল বিজেপির।

কংগ্রেস তার পকেট ভোট ধরে রেখে ১-২টো আসন পাবে, কিন্তু বামেরা? কোন আসনে সেফ? জিতবেনই এমন আসন কোনটা? বড়জোর রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদে লড়াই হবে, তারপর? কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়, বামেদের সেই হাইবারনেশনে চলে যাওয়া থেকে বের হয়ে আসায় তাঁরা এখন দৃশ্যমান, বাম কর্মীরা খানিক জোর পেয়েছেন, কিছু কর্মী সমর্থক ফিরেছেন, ফিরছেন। এবং মার্ক মাই ওয়ার্ড, এই বৃদ্ধিই এবারে নির্বাচনে এক বিরাট ভূমিকা নেবে। না, বামেদের জিতিয়ে দেবে না, কিন্তু তাদের ভোট বৃদ্ধি দু’ ভাবে কাজ করার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। প্রথমটা হল বামেরা সরকার বিরোধী ভোট বাড়াবে, তার মানে তাদের ভোট আবার ফিরে আসবে বিজেপির কাছ থেকে আর অন্যটা হল বামেরা বা বাম-কংগ্রেস জোট সংখ্যালঘু মুসলমান ভোটে থাবা বসাবে। আবার এই দুটোর দুটোই হতে পারে, এক এক আসনে এক এক রকম। যদি বামেদের ৭-৮-৯ শতাংশ ভোট ফিরে আসে, মানে গতবারের ৭.৫ শতাংশ বেড়ে ১৭ শতাংশ হয়ে যায়, তাহলে বিজেপি আবার ৩-৪-৫-এ চলে যাবে। এমনও হতে পারে যে বামেদের ভোট ফিরল কিন্তু ফিরল দক্ষিণবঙ্গে, তাহলে বিজেপি বড়জোর ১০-এ থেমে যাবে। আবার বামেরা যদি সংখালঘু ভোটে থাবা বসায়, তাহলে তৃণমূলের বেশ কয়েকটা আসন হাতছাড়া হবে, ফাঁকতালে জিতে যাবে বিজেপি। দেখতে হবে বামেদের ভোট কোন ঝোলা থেকে আসছে। তবে এখনও মতিগতি দেখে বলাই যায় যে বামেদের যে ভোট চলে গিয়েছিল বিজেপির দিকে তার ৭-৮ শতাংশ ফিরবে, বেশ কিছু আসনে, আর তা নিশ্চিতভাবে তৃণমূলকে কিছু আসনে জিতিয়ে দেবে। বামেরা জিতবেই? না, এমন আসন আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না। লড়বে? হ্যাঁ, রায়গঞ্জে, মুর্শিদাবাদে, দমদমে, যাদবপুরে, শ্রীরামপুরে বসিরহাটে বামেদের রাস্তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা লড়ছেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular