চন্দন ধর, হ্যাঁ এটাই হল ওই চিন্ময় মহারাজের আদত নাম। তো উনি সন্ন্যাসী হয়ে চিন্ময় মহারাজ নাম নিলেন, বেশ করলেন। উনি জেলে আছেন, বেশ ক’টা মামলা ওনার বিরুদ্ধে আছে। সভ্য সমাজের আইন বলে, যে কোনও মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার যোগ্য, আদালতে নিজের সমর্থনে কথা বলার, উকিল নিয়োগ করার অধিকার সবার থাকা উচিত। তা যদি চিন্ময় মহারাজ না পেয়ে থাকেন, তাহলে তা অন্যায়। কিন্তু সেই সুদূর চট্টগ্রামে এই চন্দন ধরের হাজতবাস আর জামিন না পাওয়া নিয়ে আমাদের দেশের, মানে ভারতের কিছু মানুষ কেঁদে আকুল, রেগে আগুন। এক সংখ্যালঘুকে বিনা বিচারে জেলে পোরা হয়েছে। নাকি তাঁর উকিল, যাঁর চট্টগ্রামে থাকার কথা তিনি বনগাঁয়ের শেয়াল রাজা তো নন কিন্তু এদেশে এসে একবার অমিত শাহ, একবার মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছেন, আর যেদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা সেদিন বুকে চিনচিনে ব্যথা নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলেন, আবার আহা উহু। সেখানেই তো গল্প শেষ নয়, রাজ্যের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ তো পারলে বাংলাদেশ দখল করেই ফেলেন, দিলীপ ঘোষ যিনি ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে খেতে শেখেননি, তিনি বাংলাদেশের মাল বয়কটের ডাক দিয়ে দিলেন।
তো এই চন্দন ধর, থুড়ি চিন্ময় মহারাজকে নিয়ে অন্তত একটা কথা তো আমাদের জানা দরকার। বাংলাদেশের অগাস্ট বিপ্লব বা অভ্যুত্থান যখন সলতে পাকানোও শুরু হয়নি, সেই ২ জুনে এই মহারাজকে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কেন? ইসকন ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসের তরফে চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁদের কাছে এই অভিযোগ আসে, তাঁরা এই অভিযোগের তদন্ত করেন এবং এক লিখিত বিবৃতি দিয়েই এই মহান সন্ন্যাসীকে ইসকন থেকে বের করে দেন। চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, সাধারণ সম্পাদক, ইসকন বাংলাদেশ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে স্পষ্ট নিদান, নিষেধাজ্ঞার ফলে চিন্ময় ইসকনের কোনও ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্বের পদে থাকতে পারবেন না। কোনও কীর্তনে নেতৃত্ব বা ক্লাস নিতে পারবেন না। প্রকাশ্যে শ্রীল প্রভুপাদের কোনও পূজা-অর্চনায় অংশ নিতে পারবেন না। ১৮ বছর বয়সের নীচে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। এই অভিযোগও মিথ্যে হতেই পারে, কিন্তু স্রেফ এই অভিযোগেই ভারতের সাধারণ আইন অনুযায়ী তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পোরার কথা, এবং যে ধারায় সেই মামলা রুজু হবে তাতে জামিনের কোনও সুযোগই নেই। কিন্তু আবারও বলছি এই অভিযোগ বানানো হতে পারে, মিথ্যে হতে পারে, সবই হতে পারে, কিন্তু তারও বিচার তো সেই আদালতেই হবে। এবং সেখানে তাঁর অধিকার থাকা উচিত নিজেকে ডিফেন্ড করার।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সেই মামলা চলবে, তা নিয়ে কথা বার্তা, তাঁর গ্রেফতারি অন্যায্য, তার প্রতিবাদ এসবও করাই যায়। কিন্তু কারা করবে? সেই ভারতের শাসকদল যে দেশের ২০২২-এর কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিসিয়েটিভ-এর হিসেব অনুযায়ী ৩ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষ বন্দি আছে বিনা বিচারে, সেই দেশ? সেই দেশের শাসকদলের নেতারা? ভারতের প্রতি চারজন বন্দির তিনজনের মামলার শুনানিই শুরু হয়নি, তিনজন বসে থাকেন শুনানি কবে শুরু হবে সেই দেশের মানুষজন কোন মুখে অন্যদেশের বেআইনি গ্রেফতার নিয়ে কথা বলে? ২০২০ ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি দাঙ্গা হয়েছিল, ৫৩ জন মারা গিয়েছিলেন, এই মৃতের দুই তৃতীয়াংশই ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন। তো সেই দাঙ্গার মামলা চলছে, গ্রেফতারির তালিকাতে আছেন গুলফিসা ফাতিমা, মিরন হায়দার, শরজিল ইমাম, আথার খান, খালিদ সাইফি, এবং উমর খালিদ। উমর খালিদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, আজ ৩ জানুয়ারি ২০২৫, চার বছর কেটে গেছে। আশ্চর্য লাগছে না? কমবেশি ৩৫-৩৮ জন মুসলমান সমেত ৫৩ জন মানুষের মৃত্যু জন্য দায়ী এঁরা। এঁদের মধ্যে উমর খালিদ জেএনইউর ছাত্র, ডক্টরেট করেছেন, বাকিরাও ছাত্রছাত্রী। এবং আজ চার বছর হয়ে গেল, শুনানিই শুরু হল না, এই আদালত থেকে ওই আদালত, এই বেঞ্চ থেকে ওই বেঞ্চ, এই তারিখ থেকে ওই তারিখ। চিন্ময় মহারাজের জামিন খারিজ হয়েছে ক’বার? উমর খালিদের মামলা নিম্ন আদালতেই পিছিয়েছে ১৪ বার। তাকিয়ে দেখুন মেন স্ট্রিম মিডিয়ার দিকে, একটা কথাও তারা বলছে না, আদানি-আম্বানির পয়সায় পালতু গোদি মিডিয়ার দল চিন্ময় মহারাজের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আকুল, আমাদের রাজ্যের এক ময়ূখের মুখ দিয়ে আগুন ঝরছে কিন্তু আমাদের দেশের নাগরিক, আজ চার বছর হয়ে গেল জেলে পচে মরছে, জামিনও নেই, শুনানিও শুরু হচ্ছে না, কিন্তু একটা কথাও বলছেন না। প্রভুভক্ত এই রাষ্ট্রীয় ডালকুত্তার দলের চোখে ঠুলি বাঁধা আছে, তাঁরা দেখতেই পাচ্ছেন না, একজন মেধাবী ছাত্র, গবেষণা করে পড়াশুনো করে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মতো আগে এমএ তারপরে বিএ পাশ করেননি, সেই ছাত্র জেলে পচছে।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | দিল্লির নির্বাচনের প্রচার জমে উঠেছে, কারা আসছে ক্ষমতায়?
এই ২০২০-র আগে ২০১৮-তে ভীমা কোরেগাঁও মামলাতে অধ্যাপক থেকে সাংবাদিক থেকে আইনজীবী থেকে সমাজকর্মীদের জেলে পোরা হয়েছিল, গৌতম নওলাখা, সোমা সেন, সুধা ভরদ্বাজ, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সুধীর ধাওলে, অরুণ ফেরেইরা, কবি ভারাভারা রাওকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, গ্রেফতার করা হয়েছিল জেসুইট ফাদার স্ট্যান স্বামীকে। একজনের বিরুদ্ধেও একটা প্রমাণ এনে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্র, জেলে পোরা হয়েছিল জি এন সাইবাবাকে, যিনি ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী, হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারতেন না, তিনি নাকি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্ত করছিলেন, যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনের নিরাপত্তার খরচ ১.৬৩ কোটি টাকা, হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন ১.৬৩ কোটি টাকা। এক ইংরিজির অধ্যাপক, হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারতেন না, তাঁকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে জেলে পোরা হয়েছিল, জামিন পেলেন বহু পরে, জেল থেকে বেরিয়েই মারা গেলেন, এক জুডিশিয়ারি কিলিং। আমাদের বিজেপির নেতারা, শুভেন্দু অধিকারী বা দিলু ঘোষ বা ওই রাষ্ট্রীয় ডালকুত্তার দল, গোদি মিডিয়ার সাংবাদিকেরা একটা কথাও বলেননি। আসুন এই ভীমা কোরেগাঁও মামলার আর এক আসামি জেসুইট ফাদার স্ট্যান স্বামীকে নিয়ে দুটো কথা বলা যাক। আসুন, কেন স্ট্যান স্বামী হয়ে উঠেছিলেন রাষ্ট্রের কাছে বিপজ্জনক, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বেঙ্গালুরুতে, ইনস্টিটিউট অফ স্যোশাল সায়েন্স-এ পড়াশুনো করেছেন, আধ্যাত্মবাদ নিয়েও আগ্রহ ছিল, শেষমেশ বেছে নিলেন ক্যাথলিক জেসুইট-এর মিশনারির কাজ, চলে এলেন বিহারে। তখনও ঝাড়খণ্ড তৈরিই হয়নি, কিন্তু আদিবাসী মানুষজন তাঁদের রাজ্যের দাবি তুলছেন, তাঁদের অধিকারের কথা বলছেন। তিনি এলেন সিংভূমের এক প্রান্তে, প্রথম কাজ হল ভাষা শেখা, কিছু ছাত্রদের নিয়ে চলে যেতেন স্থানীয় হাটে। দেখতেন, কেমনভাবে আদিবাসীদের ঠকানো হয়, দেখতেন উন্নয়নের নাম করে কেমনভাবে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়, ক্রমশ জড়িয়ে গেলেন সেই কাজে, আর ফেরা হল না। এরপর ঝাড়খণ্ড তৈরি হল, নতুন উদীপনার রেশ কমে আসতেই অন্য আর পাঁচজনের মতোই স্ট্যানও বুঝেছিলেন, আদিবাসীদের রাজ্য হলেই হবে না, তাদের অধিকারের লড়াইটা লড়তে হবে। এর মধ্যে যদুগোড়ার ইউরেনিয়াম ওয়েস্ট, ইউরেনিয়াম বর্জ্য ফেলা হবে চাইবাসাতে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন তৈরি হল, ঝাড়খণ্ড অর্গানাইজেশন এগেনস্ট ইউরেনিয়াম রেডিয়েশন, ছোট করে বলা হত জোয়ার আন্দোলন, তার সামনের সারিতে দেখা গেল তাঁকে। এরপর তিনি চলে এলেন রাঁচিতে, বাগাইচা জেসুইট চার্চের ক্যাম্পাসে তৈরি করলেন আদিবাসী ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং সেন্টার, কেবল আন্দোলন নয়, সঙ্গে চলল নির্মাণের কাজ। বাছাই করা আদিবাসী যুবক যুবতীদের নিয়ে শুরু হল ক্লাস, যেখানে আদিবাসীদের জল জঙ্গল জমির অধিকারের আইনি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হত, লেখালেখি হত, বই ছাপানো হত। আর ওইখান থেকেই ছুটে গেছেন ছোটনাগপুর, সাঁওতাল পরগণার বিভিন্ন অঞ্চলে, যেখানেই আদিবাসীদের জমিকাড়ার কথা হয়েছে, যেখানেই তাদের উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই পাওয়া গেছে স্ট্যান স্বামীকে।
আসল সমস্যাটা এইখানে, দেশের ফড়ে পুঁজিপতিদের নজর পড়েছে দেশের আকরিক, খনিজ ভান্ডারের ওপর, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার বক্সাইট, ডলোমাইট, ইউরেনিয়াম সমেত দামি খনিজ ভান্ডারের উপর বসে আছে কতগুলো অর্ধনগ্ন অশিক্ষিত মানুষ, তাদের কয়েকজনকে নেতা করে দেওয়া হয়েছে, এবার তাদেরকে দিয়ে সই করাতে হবে, ওই পাহাড়, নদী, জঙ্গলের দখল নিতে হবে, কোটি কোটি টাকার ডিল, ফড়ে শিল্পপতিরা একলাই পাবে নাকি? বখরা পাবে মন্ত্রী নেতা, আমলা, দামলারা। নতুন যন্ত্রপাতি কেনা হবে, ইঞ্জিনিয়ার বাবুর চাকরি হবে, কম্পিউটার বাবুর চাকরি হবে, ম্যানেজার বাবুর চাকরি হবে, আর কিছু কুলি কামিনের কাজ পাবে আদিবাসীরা, তাদের মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করবে বাবুরা, ছকটা তো জানা। চলছিলও ভালো। কিন্তু কিছু মানুষ, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো শুরু করল। উচ্ছেদ, বেদখল, জল জঙ্গল জমি কেড়ে নেওয়া আর তার সঙ্গে কোটি কোটি টাকা মুনাফা আর নিরক্ষর, অর্ধনগ্ন আদিবাসীদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়লেন কিছু মানুষ, হ্যাঁ রাঁচিতে স্ট্যান স্বামী, ছত্তিশগড়ে সুধা ভরদ্বাজ, সোমা সেন, নাগপুর, পুনেতে সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, রোমা উইলসন। তাঁদের হয়ে ছাত্রছাত্রীরা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিভিন্ন শহরের, দেশের বেশ কিছু মানবাধিকার কর্মীরা, কলেজের অধ্যাপক, লেখক, কবি একসঙ্গে ব্যারিকেড তৈরি করলেন, আটকে যেতে থাকল বিভিন্ন প্রকল্প, দেশের বর্তমান আইনেই সেসব লুঠতরাজ অনেকটা আটকে গেল।
আজ নয়, এ কাজ বহুদিন ধরেই চলছিল, সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের চিল চিৎকার, উন্নয়ন বিরোধী কাজ, এরা উন্নয়ন করতে দেবে না। কাদের উন্নয়ন? উচ্ছেদ হবে কেবল আদিবাসীরা, তাদের ঘর ভেঙে বাঁধ হবে, তাদের পাহাড় কেটে খাদান হবে, তাদের নদীর জল হয়ে উঠবে রক্তবর্ণ, ব্যবহারের অযোগ্য, কিসের উন্নয়ন? অন্যদিক থেকেও আওয়াজ আসতে শুরু করল, স্ট্যান স্বামী বই লিখলেন, ‘হোয়ার অ্যান্ট ড্রোভস আউট এলিফ্যান্টস, স্টোরি অফ পিপলস রেজিস্ট্যান্স টু ডিসপ্লেসমেন্ট ইন ঝাড়খণ্ড’, তথ্য দিলেন, কীভাবে দেশের আদিবাসীদের নির্মমভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, উন্নয়নকে শিখণ্ডী করে। ২০০১ থেকে ২০১০-এর মধ্যে, কেবল ঝাড়খণ্ডে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হল ১.৪ লক্ষ হেক্টর জমি, যে জমি সেই অঞ্চলের মানুষের শৈশব, তাদের যৌবন, তাদের জীবন, সংস্কৃতি। অথচ সেই আদিবাসীরাই সবথেকে গরিব, হাজার একটা বিদ্যুৎ প্রকল্প হলেও তাদের ঘরে জ্বলে না আলো, তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য হাসপাতাল নেই, তাদের জীবন জুড়ে আজও চোলাই, হাঁড়িয়া আর মহুয়া, ইদুরের মাংস। ২০০৫ থেকে, সেই আদিবাসীদের আটকানোর জন্য সালওয়া জুর্ম, মাওবাদের বিরুদ্ধে সামরিক লড়াই অপারেশন গ্রিন হান্ট, মাথায় চিদাম্বরম, এ রাজ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, দেশের নেতা মনমোহন সিংহ। তিনি সাফ বললেন, খনিজ সম্পদ বহুল অঞ্চলগুলোতে যদি এইসব চলতে থাকে, তাহলে বিদেশি পুঁজি আসবে না। মানে বিদেশি পুঁজি চাই, মরে মরুক আদিবাসীরা।
সেই কংগ্রেস আমলেও দমন করা হয়েছে এই উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনকে, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আমলে এল গুণগত পরিবর্তন, একধার থেকে তাদের গ্রেফতার করা শুরু হল, যাঁরা এই আদিবাসীদের হয়ে কথা বলছেন, অবিশ্বাস্য অভিযোগ আনা শুরু হল, স্ট্যান স্বামী কোনও দিন পুনেতে যানইনি, তাঁকে, পুনের ইয়ালগার পরিষদের সভা আর পরবর্তী হিংসার অপরাধে গ্রেফতার করা হল। শুধু তাঁকে নয়, গ্রেফতার করা হল, সুধা ভরদ্বাজ, সোমা সেন, কবি ভারাভারা রাও, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, রোমা উইলসন, সাংবাদিক গৌতম নওলাখা এবং শেষে, ৮ মাস আগে স্ট্যান স্বামীকে। আদিবাসীদের হয়ে কথা বলা চলবে না, তাদের জল জঙ্গল জমিন হবে অবাধ লুঠতরাজের ক্ষেত্র। অজুহাত, তাঁরা আর্বান নকশাল, তাঁরা মাওবাদী, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার চক্রান্তে জড়িত, বিনা বিচারে তাঁরা আটক আজ বছর আড়াই কেটে গেল, জেলেই মারা গেলেন স্ট্যান স্বামী, ৮৪ বছরের পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত এক জেসুইট পাদরি, অপরাধ? আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলা।
কতটা নির্মম হলে এক পার্কিনসন্স ডিজিজে আক্রান্তকে, জল খাওয়ার জন্য, স্রেফ জল খাওয়ার জন্য একটা সিপার, একটা স্ট্র দেওয়া যায় না, আদালতের সায় পেতে কেটে যায়, ২০টা দিন।
হ্যাঁ এই রাষ্ট্র খুন করেছে জি এন সাইবাবাকে, খুন করেছে স্ট্যান স্বামীকে, জেলে পুরে রেখেছে উমর খালিদ, শরজিল ইমাম, গুলফিসা ফাতিমা, খালিদ সাইফিকে। খালিদ সাইফির দুটো ছেলে একটা মেয়ে, তাদের জীবনের চারটে বছর, যখন তারা বড় হচ্ছে সেই সময়ের চারটে বছর তারা তাদের বাবাকে দেখতেই পেল না। আমরা জানি, নিশ্চিত জানি, এরা প্রত্যেকেই জেল থেকে ছাড়া পাবেন, আজ না হয় ২-৩ বছর পরে, কিন্তু তাদের জীবনের ৫-৬-৭ বছর কেটে গেল ওই জেলেই। সেই দেশের এক ছ্যাঁচড়া নেতা অন্যদেশের সংখ্যালঘু অধিকারের কথা বলে কোন মুখে? কোন সাহসে? ওই চন্দন ধরের বিচার হোক, বাংলাদেশের আইন মেনেই বিচার হোক, কিন্তু তার আগে আমাদের দাবি উমর খালিদ সমেত এই প্রত্যেককে মুক্তি দিন, এনাদের মুক্তির কথা না বলে যারা অন্যদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য চোখের জল বার করছেন, তাঁরা কুমির, তাঁরা সরীসৃপ, সাপের কান্নায় ভুলবেন না।