skip to content
Wednesday, July 3, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: আমার স্বদেশ, এবার নিলামে

চতুর্থ স্তম্ভ: আমার স্বদেশ, এবার নিলামে

Follow Us :

বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলের মত সরকার তার সম্পত্তি বেচা শুরু করেছিল, আজ নয়, বহুকাল আগে থেকেই। নরসিমহা রাও পথ দেখিয়েছিলেন, সেই পথে আরও খানিকটা এগিয়েছিলেন মনমোহন সিং। আর মোদি-শাহ জমানা তো বেচে দে, বেচে দে শ্লোগান নিয়েই চলছিল এতদিন। এদিকে আর আড়াই বছর হাতে আছে, হাতে কিছু টাকা এলে, কিছু ভাত ছড়িয়ে ভোট কুড়োনর খেলা জমবে ভাল, সেটা মোদিজিও জানেন, নির্মলা সীতারমনও জানেন। এদিকে এটাও জানেন যে বাজার গরম, বিরোধীরা যে কোনও ইস্যুতে একজোট হয়ে যাচ্ছে, তাই বেচে দেবার কথাও বলা যাবে না, এমনিতেই সরকারি সম্পত্তি যে বেচা হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু আবার নতুন করে বেচতে গেলে রাস্তায় নেমে পড়বে বিরোধীরা। তাই এবার নতুন তত্ত্ব  এনে হাজির করা হল, নির্মলা সীতারমন জানালেন, না সরকারি সম্পত্তি বেচে নয়, যে সব বিরাট বিরাট সরকারি সম্পত্তি পড়ে আছে, তাদের বেশ কিছু আন্ডার ইউটিলাইজড, মানে যতটা ব্যবহার সম্ভব তার অনেকটাই করা হচ্ছে না, বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তি আছে যা আরও বেশি রোজগার দিতে পারে সেগুলো থেকে টাকা তোলা হবে। নতুন নাম মনিটাইজেশন। ডিমনিটাইজেশনের খেলা শেষ, ও নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই, এবার নতুন নাম মনিটাইজেশন।

ব্যাপারটা আরও একটু খোলসা করা যাক, ধরুন আপনার একটা পুরনো বাংলো আছে, বা দাদু বাবা কাকার রেখে যাওয়া বিরাট বাড়ি আছে, তার রক্ষণা বেক্ষণের টাকা আপনার নেই। তার জন্য সিকিউরিটি, তার ট্যাক্সের খরচ দেওয়ার টাকা আপনার নেই। তখন আপনার কাছে দুটো উপায় আছে, প্রথমটা হল সেই সম্পত্তি বেচে দেওয়া। মোদি সরকার সেটা ২০১৫-১৬ থেকেই করে চলেছে। বিমানবন্দর, খনি বেচা চলছিল বহু দিন ধরেই, অন্য উপায় হল, একজনকে ডেকে বলা যে ভাই আপনাকে ১০ বছরের জন্য এই প্রপার্টিটা দিচ্ছি, আপনি এখন আমাকে তার জন্য টাকা দিন। ১০ বছর পরে আমি আবার এই বাড়ির মালিকানা ফেরত নেবো, আপনি টাকাও পেলেন, আবার মালিকানাও আপনার হাতে রইল। আগে এটাকে লিজ দেওয়া বলা হত, সেসব কথা বড্ড পুরনো তাই নির্মলা সীতারমণ, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার, নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত ইত্যাদিরা বসে জানালেন, এবারে সরকারি সম্পত্তির মনিটাইজেশন হবে। ঘোষণা করলেন নতুন ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন, এনএমপি, জানিয়ে দিলেন ব্রাউন ফিল্ড অ্যাসেট, মানে যেখানে সরকারের টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেছে, কিন্তু সেখান থেকে টাকা আসছে না, সেই সম্পত্তিগুলো চার বছরের জন্য ইচ্ছুক বিজনেস গ্রুপ, বিজনেস হাউসের হাতে দেওয়া হবে। তারা এখনই টাকা দেবেন সরকারকে, চার বছর ধরে রোজগার করার পর আবার সেই সম্পত্তির মালিকানা ফিরে পাবে সরকার, এবং ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনির মত দেশের অর্থমন্ত্রী, নির্মলা সীতারমণ সাংবাদিকদের সামনে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার জোর দিয়ে বললেন, মাথায় রাখুন সরকারি সম্পত্তি বেচা হচ্ছে না।

প্ল্যানটা কী? আগামি ২০২৫ এর মধ্যে সরকার গ্যাস পাইপলাইন, রেল, রোডওয়েজ, ওয়াটারওয়েজ, টেলি কমিউনিকেশন, জাহাজ বন্দর, এয়ারপোর্ট, মাইনিং, কোল মাইনস,  গুদামঘর, ওয়ারহাউস, সরকারি গেস্ট হাউস ইত্যাদি বিক্রি করে থুড়ি লিজ দিয়ে, ৬ লক্ষ কোটি টাকা রোজগার করবে। সেই টাকা দেশের গরীব মানুষজনের উন্নয়নের জন্য খরচ হবে। মানে স্কুল, হাসপাতাল, গ্রামীণ সড়ক ইত্যাদি, সেগুলো আবার কবে লিজ দেওয়া শুরু হবে, সে প্রশ্ন কেউ করেওনি, অর্থমন্ত্রী সে প্রসঙ্গ তোলেন নি। কিন্তু জানা গেলো এমন কি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামও এই তালিকায় আছে, মানে আপনি একধারে ২৫০০ কোটি টাকা খরচ করে, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম তৈরি করবেন, তারপর তার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না বলে তাকে বিক্রি করে দেবেন, কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।  সবচেয়ে বেশি টাকা আসবে রোডওয়েজ থেকে, ২৭%। রেল থেকে আসবে ২৫%, বিদ্যুৎ থেকে আসবে ১৫%, ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস পাইপলাইন থেকে আসবে ৮%, টেলিকমিউনিকেশন থেকে আসবে ৬%। শুনতে ভাল লাগছে, তাই না? আর ৬ লক্ষ কোটি মানে বিরাট টাকা, এটাও ঠিক।

তাহলে আপত্তির কারণটা কোথায়? প্রথম কথা হচ্ছে সরকার মোদিজির, যার একটা কথাও আজ পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রামজন্মভূমী পূজন হল দ্বিতীয় স্বাধীনতা, তাঁর কাছ থেকে কিছু আশা করাটাই অন্যায়। এখনও পর্যন্ত যত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সবকটা সিদ্ধান্ত দেশকে ডুবিয়েছে, এবং মাত্র ক’দিন আগে ফেব্রুয়ারি মাসে এই নরেন্দ্র মোদিই বলেছেন, গভর্নমেন্ট হ্যাজ নো বিজনেস টু ডু বিজনেস, সাফ কথা। সব বেচে দিয়ে উনি ঝাড়া হাত পা হতে চান। দ্বিতীয় সমস্যা হল, মনিটাইজেশন বলুন আর লিজই বলুন, শর্তগুলো কী? কোন ভিত্তিতে এই সম্পত্তিগুলো তুলে দেওয়া হবে? ধরুন, সত্যিই সরকারের, বিশেষ করে সরকারের পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন দফতরের হাতে অজস্র গোডাউন রয়েছে, যার অবস্থা সত্যিই খারাপ, সেগুলো লিজ দেওয়া হল, যে কোম্পানি সেগুলো নিলেন, তাঁরা বিনিয়োগ করে তার খোল নলচে বদলালেন। ৪ বছর পর তাঁরা সেগুলো ফেরত দিয়ে দেবেন? সম্ভব? তাহলে নিশ্চই এমন কিছু আছে যা এখন আমাদের বলা হচ্ছে না। আবার ধরুন, ন্যাশনাল হাইওয়েজ, তার খানিক অংশ একজন নিলেন, তিনি টোল ট্যাক্স কতটা বাড়াতে পারেন? রাস্তার ধারে কী কী তৈরি করতে পারেন? তাতে কতটা চাপ পড়বে গাড়ির মালিকদের ওপর? কিছুই জানা নেই। রেল যিনি নিলেন, তিনি ভাড়া কত নেবেন? সুবিধে না পেলে মানুষ কার কাছে যাবে? সেফটি, সিকিউরিটির ব্যাপার কে দেখবে? জানা নেই। আর বিরাট ব্যাপার হল, তাঁরা যে বিনিয়োগ করবেন, তার কতটা ব্যাঙ্ক লোন হবে? ধরুন ৫০০০ কোটি টাকার কোনও শিল্প বিনিয়োগে? আমাদের দেশের শিল্পপতিরা কমবেশি ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন, ৪০০০ কোটি টাকা ঋণ নেন, মানে বিনিয়োগের ৮০% হল ঋণ। এক্ষেত্রেও যদি সেটাই হয়, তাহলে যে ৬ লক্ষ কোটি টাকা, ২০২৫ এর মধ্যে সরকারের কাছে আসছে, তার মধ্যে ৪ লক্ষ ৮০ কোটি টাকা কিন্তু আমার আপনার টাকা, সরকারের টাকা, তাহলে দাঁড়াল কি? বিশাল বিশাল জাহাজ বন্দর, কোটি কোটি টাকার এয়ারপোর্ট, রোডওয়েজ, গোডাউন ইত্যাদি যা তৈরি হয়েছে সরকারেরই পয়সায়, মানে পাবলিকের পয়সায়, এখন সেগুলো ২০%, মাত্র ২০% বিনিয়োগ করে টাকা তুলবেন শিল্পপতিরা। তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী। কেন? না দেশের গরীব মানুষদের উন্নয়ন হবে, যে উন্নয়নের কথা আমরা শুনে আসছি সেই ১৯৪৭ থেকে, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকার উন্নয়নেরই কথা বলে এসছে।

সেই উন্নয়ন কোথায় দাঁড়িয়ে? স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৪৭ এ, সারা দেশ জুড়ে এক সমীক্ষার পর চিহ্নিত করা হয়েছিল দেশের সবথেকে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোকে, ছত্তিসগড়ের বাস্তার, থেকে মধ্যপ্রদেশের ৬টি জেলা, ওড়িশার কোরাপুট ইত্যাদি ৬টি জেলা, এই বাংলার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ জেলা, ঝাড়খন্ডের বিশাল অংশ, বিহারের ৭টি জেলা, উত্তর পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা, উত্তর প্রদেশের ৮টি জেলা, রাজস্থানের ৫টি জেলা ইত্যাদি। বহু পরে ২০১৬ তে আবার এইরকমই এক সমীক্ষার পরে জানা গেলো, জেলা বিভাজনের ফলে সংখ্যা বেড়ে ১১৫টি এমন জেলা আছে, যেখানে দারিদ্র, বেকারত্ব, সরকারি সুবিধে না থাকা, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মান খুব খারাপ, দেখা গেল ওই একই এলাকায় এই ১১৫ টি জেলা ছড়িয়ে আছে। যা ১৯৫১ র সমীক্ষাতে ছিল। এসব ছেড়েই দিন, অতিমারী আমাদের চোখ খুলে দিল, প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানালেন ৮৫ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চাল, গম, ছোলা দেওয়া হচ্ছে, কেন? কারণ তাঁরা তাঁদের রোজগারে এগুলো কিনতে পারছেন না, মানে দেশের ১৩৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৮৫ কোটি এখনও এতটাই গরীব যে তারা চাল, ডাল, গম কিনতে পারছেন না। শিক্ষা স্বাস্থ্যের কথা না বলাই ভাল, ১৪ কোটি শিশু এই অতিমারিতে পাচ্ছে না মিড ডে মিল। ৭৭% ছাত্র পড়াশুনো করতে পারল না গত পৌনে দু বছর ধরে। কারণ তাদের ইন্টারনেট নেই, সেই সুবিধে পেল কেবল ২৩% ছাত্র। প্রতি বছর ২ কোটি ৪০ লক্ষ ছাত্র স্কুলে ভর্তি হয়, তারা গত দেড় বছর ধরে কী করল কে জানে? এই যে ১১৫ টা জেলার কথা বলছি, সেই রাজ্যগুলোতে ২৩৭ জন সাংসদ নির্বাচিত হন, মজার কথা হল এই ২৩৭ জনের মধ্যে ২২২ জন অন্তত কোটিপতি। অন্তত, মানে তার মধ্যে কোটি কোটি পতিও আছে, এই ১১৫ টা জেলার মধ্যে যে শিল্প আছে, ইস্পাত কারখানা থেকে মাইনিং কোম্পানি আছে, মাত্র গত ১০ বছরে তাদের নেট মুনাফা, ৬০ লক্ষ কোটি টাকারও কিছুটা বেশি।

তার মানে? সাংসদরা কোটিপতি হবে, বিধায়করা টাকা কামাবে, কর্পোরেট সেক্টর ফুলে ফেঁপে উঠবে, এতেও শান্তি নেই তাদের আরও আরও চাই, এবং সেই চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন ছক, ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন। দেশটা কে উচ্ছন্নে নিয়ে যাবার জন্য নতুন প্রকল্প নিয়ে হাজির আমাদের অর্থমন্ত্রী, নেতৃত্বে নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kalyan Banerjee | মোদিকে কী বললেন তৃণমূলের কল্যাণ? রেগে লাল বিজেপি সাংসদরা
00:00
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | পিটিয়ে মারা থেকে চোপড়া, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই
00:00
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | ইডি, আদালত, কৌস্তুভ রায়, কেজরিওয়াল আর হেমন্ত সোরেন, মামলা কিন্তু এক
00:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | মোদিকে চিঠি রাহুলের, কী চাইছেন দেখুন
00:00
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (02 July, 2024)
14:55
Video thumbnail
Fourth Pillar | ইডি, আদালত, কৌস্তুভ রায়, কেজরিওয়াল আর হেমন্ত সোরেন, মামলা কিন্তু এক (পর্ব-২)
12:02
Video thumbnail
Aajke | এ এক আজব রাজ্যপাল, নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত
10:54
Video thumbnail
Kalyan Banerjee | মোদিকে কী বললেন তৃণমূলের কল্যাণ? রেগে লাল বিজেপি সাংসদরা
07:33:25
Video thumbnail
Kalyan Banerjee | ওম বিড়লাকে কী বললেন কল্যাণ? তারপর সংসদে কী হল দেখুন
08:23:26
Video thumbnail
Akhilesh Yadav | সংসদে হেরো সরকার, আর কী বললেন অখিলেশ? উত্তাল সংসদ
08:13:19