Wednesday, July 2, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, নির্বাচন

চতুর্থ স্তম্ভ : রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, নির্বাচন

Follow Us :

একটা সময়ে রাষ্ট্র বলে কিছুই ছিল না, ছিল সমাজ। তারপর গোষ্ঠী গড়ে উঠল, গোষ্ঠিপতি জমি দখল করে জমিদার হল, সে তখন খাজনা নেয়, সালিশী করে, বিচার করে। এরপর আরও বড় জমিদার থেকে, রাজা, বাদশাহ, সুলতান, নবাব। কিন্তু এসবই হয়েছে তরবারি, লাঠি, বন্দুক কামান, অস্ত্রের জোরে। সারা পৃথিবীতে ব্যতিক্রম আমাদের ভারত, সবজায়গায় নয় কিন্তু আমাদের দেশে ষোড়শ মহাজনপদে, যিশুর জন্মের ৬০০ বছর আগে, এলাকার মানুষ বসে ঠিক করতেন, কে হবেন রাজা, কে চালাবে শাসন। সে বিরাট সভায় আসতেন নগরের শিক্ষিত, পন্ডিত মানুষজন, শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ীরা, সেনাবাহিনীর প্রমুখেরা, তারপর সে সব জনপদের নেতা নির্বাচিত হত। তাদের রাজাই বলা হত, কিন্তু সেই রাজার এক মন্ত্রী পরিষদ থাকত, তাদের কথা রাজাকে শুনতে হত, তাদের ভূমিকা ছিল স্বাধীন। না পৃথিবীতে এর আর কোনও নজির পাওয়া যায়নি।

তাই যখন, বালখিল্য আরএসএস-এর প্রচারকেরা গণতন্ত্রকে পাশ্চাত্যের ধারণা বলেন, তখন তাদের ইতিহাস জ্ঞান বোঝা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে, কাশী, কোশল, অঙ্গ, মগধ, বৃজি, মল্ল, চেদী, বৎস, সুরসেন, কুরু, পাঞ্চাল, কম্বোজ, অশ্বক, অবন্তি আর গান্ধার ছিল এই মহাজনপদ, যেখানে রাজা নির্বাচিত হতেন। তা কি যথেষ্ট ছিল? মানে তা কি সঠিক অর্থে গণতান্ত্রিক ছিল, না ছিল না। সবার ভোট দেবার অধিকার ছিল না, নির্বাচনে ৩/৪/৫ জন প্রার্থী দাঁড়াবেন, সে ব্যবস্থাও ছিল না। কিন্তু তা এক শুরুয়াত ছিল, যার পরিণতি আজকের এই আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর থেকে কোনও ভাল রাষ্ট্র কাঠামো আমরা দেখিনি, আলোচনায় আছে, শ্রমিক রাষ্ট্রের কল্পনা আছে, আরও বড় গণতন্ত্রেরই সে কল্পনা, কিন্তু তার প্রয়োগ আমরা দেখিনি, যা দেখেছি, তা আর যাই হোক গণতন্ত্র নয়, আর আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোর মূল ধারণাই গণতন্ত্রের ওপর গড়ে ওঠে।

কেন এসব কথা বলছি? কারণ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার এক প্রক্রিয়া লাগাতার জারি আছে, গণতন্ত্রকে আরও কার্যকরী, আরও স্বচ্ছ, আরও ব্যাপক করার এক প্রক্রিয়া জারি আছে, সেই খ্রিষ্টিয় ছয় শতক থেকেই। গণতন্ত্রে সর্বজনীন ভোটাধিকার সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ, নির্বাচনের স্বচ্ছতা আনার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যয়ের নিয়ম কানুন, নোটাতে ভোট, রাইট টু রিকল ইত্যাদি বহু ব্যবস্থাই, আসলে এই গণতন্ত্রকে আরও বিস্তৃত করারই চেষ্টা। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা মানে শুধু নির্বাচন নয়। না, তার আরও অনেক ব্যবস্থা, রীতি, নীতি আছে, নির্বাচন তার এক অঙ্গ মাত্র। সংসদ আছে, সংসদের আলাদা আলাদা কক্ষ আছে, তাদের আলাদা বা যৌথ অধিবেশন আছে, মন্ত্রিসভা আছে, বিভিন্ন কমিটি আছে, বিরোধী দলের স্বিকৃতি আছে, অনেকেরই জানা নেই যে আমাদের দেশের বিরোধী দলনেতা, একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়ে থাকে। এরপর অঙ্গরাজ্য আছে, তাদের সরকার আছে। এই ব্যবস্থার মধ্যেই বিচার ব্যবস্থা আছে, পুলিশ, জেল, মিলিটারি আছে, পেনাল কোড আছে। এই সব মিলে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এবং সংবাদ মাধ্যম, যাকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়, তাও এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর কোনও একটা বিষয় যদি অবহেলিত হয়, পালিত না হয়, কাজ না করতে পারে, তাহলে সে গণতন্ত্র অপূর্ণ, সে গণতন্ত্র গণতন্ত্রই নয়। একজন রাজা সিংহাসনে বসে রাজত্ব করে যেতেই পারে, তাঁর বিচার বোধ ভালো হতেই পারে, খুব ভালো হতেও পারে। আমরা ইতিহাসে অশোকের কথা শুনেছি, রাজা হর্ষবর্ধনের কথাও শুনেছি, সম্রাট আকবরের কথাও পড়েছি, তাঁদের জমানায় মানুষ সুখী ছিল, হয়ত ছিল। কিন্তু সে রাজত্বকে আর যাই বলা যাক গণতান্ত্রিক বলা যায় না, ওটা আসলে রাজতন্ত্র, আধুনিক সমাজে এক অচল ধারণা।

আরএসএস বিজেপির স্বপ্ন এক রাম রাজ্যের। সেখানে, মানে সেই রামরাজ্যে যত সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ঝরে ঝরে পড়ুক না কেন, তা গণতন্ত্র নয়। আর সেই কারণেই  আমরা রামরাজ্যের সুখ চাই, রাম রাজ্য চাই না। মোদিজী, আর বিজেপির ভক্তরা সেই রামরাজ্যই চান, আর সেখানেই সমস্যা। দেশের মানুষকে ধর্মের আধারে, এক মেরুকরণের মধ্য দিয়ে তাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, ব্যস। গরিষ্ঠতা পেয়েছেন, ব্যস। আর কিচ্ছু জানেন না। সংসদ, অধিবেশন, বিতর্ক, মন্ত্রীসভা এসব এ তাদের বিশ্বাসই নেই। তা না হলে ভাবুন, এক মন্ত্রিসভা কৃষি বিলের অনুমোদন দিল, বা বলা ভালো এক অর্ডিনান্স আনার অনুমোদন দিল, তা কোনও আলোচনা ছাড়াই সংসদে পাশ করানো হল, কেন হল? কেন আলোচনা হল না? সংসদের দুই কক্ষেই তখন বিজেপির সংগখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, ভোটাভুটি হলে ওনারাই জিততেন। তাহলে অর্ডিনান্স কেন? ধ্বনি ভোট কেন? কারণ, বিজেপি এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে বিশ্বাসই করে না।

আবার দেখুন এই বিল ফেরত নেওয়া হবে, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় গেলেন না আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, সে তো কারোর সঙ্গেই তিনি কোনও আলোচনাই করেন না, দেশের একজনও সাংবাদিক, অর্ণব বা গোদি মিডিয়ার দালাল নয়, এমন একজনও সাংবাদিকের মুখোমুখি হননি, তিনি আর কী করে কৃষকদের মুখোমুখি হবেন, আর এই লজ্জাজনক পিছু হটা, তিনি যে মেনে নিতে পারেননি, তা তো স্পষ্ট। তাঁর কথা মত কিছু কৃষককে তিনি এই বিল যে কত ভালো তা বোঝাতে পারেননি, তারা রাস্তায় বসে আছে, সেই কিছু কৃষকদের জন্যই নাকি তিনি এই বিল ফেরত নিচ্ছেন। সে যাক, কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটা কী?

পদ্ধতি হল, প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডাকবেন, এই বিল ফেরত নেবার অনুমোদন নেবেন, তারপর তার ঘোষণা হবে, দিন ঠিক হবে, ফেরত আনার জন্য যে নতুন বিল তার খসড়া, বিরোধীদের কাছে যাবে। আলোচনা, বিতর্ক হবে, তারপর তা ফেরত নেওয়া হবে। দেশ তো কারোও বাবার একার নয়, দেশ জমিদারিও নয়, প্রধানমন্ত্রী নবাব, বাদশা বা সম্রাটও নন, তিনি পদ্ধতি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু দেখুন, চার দিন আগে ঘোষণা হল তিনটে কৃষি বিল ফেরত নেওয়া হবে, আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে মোদিজী সেই বিল ফেরত নিলেন। এটা গণতন্ত্র?

মোদি শাহ, আরএসএস–বিজেপি গণতন্ত্র বলতে বোঝেন নির্বাচন, ব্যস। আর কিছুই নয়। সামনে নির্বাচন, কৃষক আন্দোলনকে থামাতে হবে, তাদেরকে রাস্তা থেকে না সরালে হার অনিবার্য, তাই কৃষি বিল তড়িঘড়ি ফেরত নিলেন। আমাদের কাছে যা খবর তাতে বিদ্যুৎ বিল এরও সংশোধনী বিল তাঁরা আনছেন, সেটাও ওই নির্বাচনের দিকে চেয়ে, তাদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলছে কৃষকদের আন্দোলন, তাঁদের নির্বাচন ফলাফলে ভয়ঙ্কর বাজে প্রভাব ফেলতে চলেছে, অতএব তাঁরা এক পা পিছু হঠছেন, এই পিছু হটা সাময়িক, সেটাও পরিষ্কার। এই অধিবেশনে তাঁরা এম এস পিরও কথা বলবেন, তাঁরা কিছু সুপারিশ করে তা রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইবেন, এটাই আপাতত অঙ্ক।

কিন্তু সে সব অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে, দেশের বিরোধী দলগুলো নয়, তাবড় তাবড় নেতারা নয়, যাঁরা বিভিন্ন যোগ বিয়োগ আর অঙ্ক নিয়ে ব্যস্ত, তাঁরা নয়, হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে দেশের অন্নদাতারা, অনেক হয়েছে, এবার আর কোনও জুমলাবাজি নয়, দেশের ৬০শতাংশ এর বেশি মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল, ছোট্টবেলা থেকে পড়ে আসছি, ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ, অথচ সেই কৃষকদের ৭০ শতাংশ এর দুবেলা অন্ন জোটে না, তারা আর তাদের জীবনযাত্রা এখনও যে তিমিরে সেই তিমিরেই, কতই রঙ্গ দেখবো দুনিয়ায়।

এদিকে বিজেপির নির্বাচন অভিযান, যা সারা বছরই চলে, তা আরও জোরদার হচ্ছে, তারা জানে ইউ পি দিয়েই সংসদের প্রবেশপথ, ইউপি তারা হারতে চায় না, আগামীকালও আমাদের প্রধানমন্ত্রী পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বিরাট বিমান বন্দর, দুনিয়ার চতুর্থ বড় বিমান বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য যাবেন, যে বিমানবন্দরের জন্য জমি নেওয়া হল সেই কৃষকদের, যাদের বেশিরভাগ এখনও ক্ষতিপূরণ পায় নি, এবং আরও বড় তামাশা হল, যে বিমানবন্দর, তৈরি হবার কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবে আম্বানি বা আদানিদের হাতে, সেই বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেই কোটি টাকা খরচ হয়ে যাবে, দেশের প্রধানমন্ত্রী ঝুড়িঝুড়ি মিথ্যে কথা বলবেন, বলবেন নেহেরুর জন্যই নাকি দেশের বিকাশ হয় নি, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেবেন, তাঁকে, তার দলকে নির্বাচন জিততেই হবে, তাঁদের কাছে নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র, এসব কথা বলছি যখন তখন মাত্র কিছু মাস আগের এক তথ্য মনে পড়ে গ্যালো।

২০২১, বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে, প্রায় রীতিবহির্ভুতভাবে রাষ্ট্রপতি আসছেন সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে, কেন রীতিবহির্ভুত বলছি? কারণ রাষ্ট্রপতি সাধারণত প্রথম নির্বাচিত সংসদের অধিবেশনে আসেন, নাহলে বছরের শুরুতে প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে আসেন, এবার প্রথম অধিবেশনের শেষ দিনে এলেন, যে অধিবেশন সামনে বাংলার নির্বাচন, প্রচার ইত্যাদি আছে বলে কদিন আগেই শেষ হচ্ছে। তো রাষ্ট্রপতি ভাষণের শেষে তাঁকে ধন্যবাদ দেবার জন্য, বিজেপি দুজন সাংসদকে বাছলেন, একজন ভুবনেশ্বর কলিতা, আসামের সাংসদ। অন্যজন আমাদের লকেট চট্টোপাধ্যায়, কেন? কারণ তারপরেই আসাম আর বাংলার নির্বাচন। বিজেপির গণতন্ত্রে পাখির চোখ, নির্বাচন, তাদের চোখে দেশের মানুষ নেই, অভুক্ত অন্নদাতারা নেই, লক্ষ লক্ষ বেকার নেই, মুল্যবৃদ্ধি নেই। আছে কেবল নির্বাচন, ইভিএম, প্রচার, আর তাদের নির্বাচনী চিহ্ন পদ্মফুল।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | Narendra Modi | মোদি-ট্রাম্প সম্পর্ক অতি মধুর, জানালেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র
02:45:10
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্প-মাস্ক লড়াই চরমে, সেনেটে বিল পাশ করাতে কালঘাম ছুটছে ট্রাম্পের, কী হতে চলেছে?
01:42:16
Video thumbnail
Indian Railways | পরিষেবা তথৈবচ, ভাড়া বাড়ছে দূরপাল্লার ট্রেনে, কী বলছে তৃণমূল? কী দাবি বিজেপির?
02:00:36
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ল' কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য, দেখুন ভিডিও
01:26:20
Video thumbnail
Kasba Incidetn | মনোজিত সহ দুই পড়ুয়া সাসপেন্ড, গভর্নিং বডি মিটিংয়ে কড়া পদক্ষেপ, দেখুন বড় আপডেট
58:30
Video thumbnail
Madan Mitra | কসবা কাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্যে শোকজের জবাব মদন মিত্রের, কী বললেন? দেখুন ভিডিও
02:22:01
Video thumbnail
Weather Update | শুরু হবে প্রবল দু/র্যোগ, সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি, সতর্কতা জারি উপকূলে, দেখুন বড় আপডেট
02:59:35
Video thumbnail
Iran-Israel | আবারও শুরু হবে ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
01:45:10
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের চোখ রাঙানিতে পিছল কানাডা
54:15
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে এবার নয়া মোড়! তদন্তকারীদের হাতে বড় তথ্য প্রমাণ, দেখুন EXCLUSIVE খবর
01:13:35

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39