Tuesday, July 1, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন, গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস

চতুর্থ স্তম্ভ: কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন, গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস

Follow Us :

আ ব্যয়ল মুঝে মার। এটাই ঠিকঠাক। বাংলায় আছে বটে কয়েকটা, কিন্তু তা সর্বসমক্ষে বলার মত নয়, বাঁশ কেন ঝাড়ে গোছের প্রবাদ বাক্য। এই আ ব্যয়ল মুঝে মার হিন্দি প্রবাদের বাংলা মানে হল, এসো ভাই ষাঁড় আমাকে গুঁতিয়ে দিয়ে যাও দেখি। শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস এবং তার সভাপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে এই চলতি প্রবাদই প্রযোজ্য। বহুদিন পরে কংগ্রেসের এক বিরাট রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে, ভারত জোড়ো পদযাত্রা। কোথাও একটা হলচল, কোথাও একটা সিলভার লাইন ইন দ স্কাই, বাম, উদার, মধ্যপন্থার মানুষজন সবে বলতে শুরু করেছেন – যাক, কংগ্রেস আবার নড়েচড়ে বসেছে। ভারতের রাজনীতি যেভাবে চরম দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক দল আর নেতাদের হাতে চলে যাচ্ছে, তার থেকে বের হওয়ার একটা আশা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো আ বৈল মুঝে মার। দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস, জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। স্বাধীনতার আগে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছেন বহ মানুষ, নানান ধর্মের, নানান পথের, দেশের এমনকি বিদেশের মানুষজনও। গান্ধিজী যবে থেকে পুরোদস্তুর কংগ্রেসের হাল ধরলেন, ১৯২২/২৩/২৪ নাগাদ, ওই সময় থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতি হওয়াটা নির্ভর করত গান্ধিজীর অনুমোদনের ওপর। হ্যাঁ, উনি নিজে একবারই ১৯২৪-এ বেলগাম অধিবেশনে সভাপতি হয়েছিলেন, তারপর থেকে উনি ছিলেন কিং মেকার, ওনার আশীর্বাদ মাথার ওপর না থাকলে কারোর পক্ষেই কংগ্রেস দল চালানো সম্ভব ছিল না। উনি দাঁড় করিয়েছিলেন পট্টভি সিতারামাইয়াকে। সিতারামাইয়া নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর কাছে হারার পর উনি বলেছিলেন, সিতারামাইয়ার হার আমার ব্যক্তিগত পরাজয়, যে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করেছিলেন তাতে ওয়ার্কিং কমিটির বাকিরা পদত্যাগের হুমকি দেন, শেষে সুভাষ চন্দ্র বসুই পিছিয়ে আসেন। তারপর থেকে আরও সরাসরিভাবে কংগ্রেস দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন গান্ধিজি। স্বাধীনতার ঠিক আগে থেকেই ওনার রাশ আলগা হতে থাকে, তারপর তো ওনাকে হত্যাই করা হল। স্বাধীন ভারতবর্ষে কংগ্রেসের হাল বরাবরই ছিল নেহেরু গান্ধী পরিবারের হাতে। নেহেরুর পরে বৃদ্ধ প্রবীণরা কংগ্রেসের চালিকা শক্তি হতে চেয়েছিলেন বটে কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী তা শক্ত হাতেই মোকাবিলা করেছিলেন, তারপর থেকে কংগ্রেস মোটামুটি গান্ধীপরিবারের হাতেই থেকেছে, ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা বলেছিলেন দেবকান্ত বড়ুয়া, তিনিও কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন, গান্ধী ফ্যামিলি লয়ালিস্ট ইউ এন ধেবর, কামরাজ, নিজলিংগাপ্পা, নীলম সঞ্জীব রেড্ডি, শঙ্করদয়াল শর্মা, নরসিমহা রাও, সীতারাম কেশরীরা সভাপতি হইয়েছেন বটে, কিন্তু আসল চাবিকাঠি ছিল গান্ধী পরিবারের হাতে, অন্তত যখন সভাপতি হয়েছেন, তখন ওনারা সব্বাই ছিলেন ইয়েস ম্যান। তারপর ১৯৯৮ থেকে দীর্ঘ ৩০ বছর কোনও ইয়েস ম্যানের ওপরেও নির্ভর করতে পারেননি, এই সময় ধরে সভাপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন, আছেন সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধী। কাজেই সুবিধে হয়েছে নরেন্দ্র মোদির, বিজেপি’র, আরএসএস-এর, তাঁরা আঙুল তুলেছেন বংশানুক্রমিক শাসনের দিকে, মানুষ দেখেছে সত্যিই চলছে এক লম্বা বংশানুক্রমিক শাসন। গত তিন চার বছর হল, বিজেপির এই আক্রমণের অস্ত্রটা ভোঁতা করার জন্যই রাহুল গান্ধী সরে দাঁড়িয়েছেন, হাজার অনুরোধ উপরোধেও তিনি ওই পদে দাঁড়াতে রাজি নন। রাজনীতির এক নতুন, এক অন্য চর্চায় নেমেছেন তিনি। আদর্শের রাজনীতি, গান্ধীবাদি আদর্শের রাজনীতি, তিনি কংগ্রেসের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন, অ্যাট লিস্ট ওনার কথাবার্তা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু সভাপতি নির্বাচন নিয়ে? সেই একই তামাশা চলছে। সোনিয়া গান্ধী হবেন না, রাহুল গান্ধী হতে চান না। এখানেই মিটে গেলে তো হত, কিন্তু আসলে আবার একজন ইয়েস ম্যান খোঁজা চলছে, আবার একজন গান্ধী ফ্যামিলি লয়ালিস্ট, জি হুজুর, ইন ফ্যাক্ট সেক্রেটারি টু রাহুল গান্ধী খোঁজা হচ্ছে, সেখানেই বিপত্তি। ভাবুন একবার, জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি, যে পদে বসেছেন গান্ধী, নেহেরু, সুভাষ, প্যাটেল, আজাদ, সেই পদের চেয়ে রাজস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদ অনেক বেশি দরকারি আর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অশোক গেহলট। মানে ঠিক আছে, ভাই বলছেন যখন, ওই জি হুজুর সভাপতি হতে রাজি, কিন্তু তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে রাজী নই। ভাবা যায়, জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদকে কোথায় নামিয়ে নিয়ে এসেছেন এই জি হুজুরেরা। সভাপতি পদে নির্বাচন হবে, একটা গণতান্ত্রিক দলে হয়েই থাকে, যাঁর ইচ্ছে নিয়ম মেনে প্রার্থী হবেন, যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনিই সভাপতি হবেন, সিম্পল। কিন্তু সেটা কতটা ঘোরালো হয়েছে দেখা যাক। প্রথমে কংগ্রেসের মধ্যে জি টোয়েন্টি থ্রি বলে এক গ্রুপ হয়েছে, এঁদের প্রায় প্রত্যেকেই ঘোর গান্ধী ফ্যামিলি লয়ালিস্ট ছিলেন, ছিলেন বলেই ব্যাকডোর দিয়ে এঁদেরকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছে, এনারা নিজের জোরে লোকসভা, বিধানসভা বাদই দিন, কর্পোরেশন ইলেকশনে কাউন্সিলারও নির্বাচিত হতে পারবেন না, কিন্তু বছরের পর বছর রাজ্যসভার সদস্য হয়ে থেকেছেন, ১০ নম্বর জনপথের আজ্ঞাবাহী হয়েই, তারপর অচানক একদিন রাজপাট গেছে, রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস হেরেছে, রাজ্যসভায় পাঠানোর ক্ষমতাও কমেছে, এই প্রবীণের দল হঠাৎ গণতান্ত্রিক হয়েছেন, কংগ্রেসের মধ্যে গণতন্ত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর। গুলাম অবি আজাদের মত কিছু লোকজন তো বেরিয়েই গিয়েছেন, কপিল সিব্বলকে রাজ্যসভার আসন দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব, তিনি কংগ্রেসই ছেড়ে দিয়েছেন। তো যাই হোক এঁদের মধ্যে একটু আলাদা, বলিয়ে কইয়ে, ১০ নম্বর জনপথেই বসে থাকেন না, শশী থারুর নাকি সভাপতি হবার জন্য নমিনেশন দাখিল করবেন। রাহুল, সোনিয়া যদি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার কথা না ভাবতেন, তাহলে হোক না থারুর বা অন্য যে কেউ বলে, বসে থাকতেন। না, তেমন নয়। ওনারা খুঁজে বার করলেন অশোক গেহলটকে, রাজীব গান্ধীর সময়ে এই তরুণ অশোক গেহলট, দিগ্বিজয় সিং ইত্যাদিকে তুলে আনা হয়েছিল রাজ্য নেতৃত্বে, তাঁরা গান্ধী পরিবার অনুগত। আবার অশোক গেহলটকে সভাপতি করে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রিত্বে শচীন পাইলটকে বসালে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যেত। রাজস্থান দুই শিবির বিভক্ত, পাইলট আর গেহলট শিবির, যদিও গেহলটের পক্ষে পাল্লা ভারি। পাঠানো হল খাড়গে আর অজয় মাকেনকে, সব ঘেঁটে দিয়ে এলেন ওনারা, জোর করে কংগ্রেস লেজিসলেটিভ পার্টির বৈঠকে ওনারা পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করানোর চেষ্টা করেছেন, বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে, রীতিমত বিদ্রোহ, ঠিক পাঞ্জাবে যা হয়েছিল, সেটাই হতে যাচ্ছিল, আপাতত সামাল দেওয়া গিয়েছে, কিন্তু বিদ্রোহের বীজ রয়ে গেল, বিদ্রোহের ধুনোতে হাওয়াটা দিলে কে? অশোক গেহলট, যিনি নাকি জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হবেন, দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস। বিজেপি বসে আছে, কবেই ভেঙে দিত, কিনে নিত, পাইলট বা গেহলট যে কাউকে কিনে নিতেন, আরেকটা রাজ্য চলে যেত বিজেপির কাছে, বলা যায় কংগ্রেসের শেষ দূর্গ। আর এরপরে এককভাবে কংগ্রেসের কাছে পড়ে থাকবে ছোট্ট রাজ্য ছত্তিশগড়, অবশ্য সেখানেও ভূপেশ বাঘেলের সঙ্গে লড়াই চলছে সুরগুজার মহারাজ টি এস সিংদেও এর সঙ্গে। রাজস্থানে বিজেপি কিছু করতে পারলো না, কারণ রাজস্থানে বিজেপির মধ্যেই বিস্তর লড়াই আছে, ওখানে বসুন্ধরা রাজে আছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং মোদি-শাহ বিরোধী লবির নেতা, কাজেই বিজেপি এখনই ঝাঁপালো না, কিন্তু ঝাঁপাবে না, সেটা হলফ করে বলা যায় না। বিদ্রোহ সামাল দিয়ে তিন পেয়াদাকে, তিনজন বাগী এবং গেহলট অনুগত এমএলএ’কে, ঝি কে মেরে বৌকে শাসনের পুরনো কায়দা। এদিকে দিগগিরাজা দিগ্বিজয় সিং ও নাকি নমিনেশন তুলেছেন, তিনিও সভাপতি হতে চান, ওনার পুরনো রেকর্ড খুব খারাপ, বিরোধী মহিলা নেত্রীকে টুনচ মাল বলেছেন, সাংবাদিক পিটিয়েছেন, দুর্নীতির দায় আছে, ওনার চেয়ে ঢের ভাল প্রার্থী শশী থারুর, কিন্তু দিগগি রাজা ১০ নম্বর জনপথ ঘনিষ্ঠ, এটাই তাঁর ইউএসপি। এদিকে সোনিয়ার কাছে চলে গিয়েছেন অশোক গেহলট, রাজস্থানের কুর্সির একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, হয় অশোক গেহলটকে হারাতে হবে, নাহলে চলে যাবেন শচীন পাইলট। মানে কি দাঁড়ালো? সারা দেশের মিডিয়ার যখন কংগ্রেসের, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে কথা বলা উচিত, সত্যিই তো ভিড় উপচে পড়ছে, সত্যিইতো অনেকদিন পরে কংগ্রেসের কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের একটু হলেও আগ্রহ জাগতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়ে তাহলে ছিটকে গেলেন গেহলট, মুখ্যমন্ত্রী হবেন কী শচীন পাইলট? শশী থারুরকে সমর্থন করছেন না রাহুল গান্ধী, দিগ্বিজয় সিং হবেন নতুন সভাপতি ইত্যাদি বেকার বিষয় উঠে আসছে আর তাই নিয়েই ব্যস্ত ন্যাশন্যাল মিডিয়া। বিজেপির ১০০% ইচ্ছেপূরণ, সেই বংশানুক্রমিক শাসনের কথা উঠে আসছে, সেই গান্ধী ফ্যামিলি অনুগতদের কথা উঠে আসছে, পাইলট-গেহলট কাজিয়ার কথা উঠে আসছে। আ ব্যয়ল মুঝে মার, আয় ষাঁড় গুঁতো মার আমায় – এ প্রবাদ কংগ্রেসের জন্য এক্কেবারে খাপে খাপ, পঞ্চুর বাপ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Muzaffarnagar | হিন্দুত্ববাদী ব/র্ব/রতা, রেস্তোরাঁয় ঢুকে জানতে চাওয়া হচ্ছে কর্মীদের ধর্মীয় পরিচয়
01:38:10
Video thumbnail
TMC | CPIM | খড়গপুরে বামপন্থী নেতাকে মা/র তৃণমূল নেত্রীর, ধু/ন্ধুমা/র কাণ্ডে বিরাট অভিযোগ
01:18:10
Video thumbnail
Kasba Incident | মনোজিতকে নিয়ে বি/স্ফো/রক এই প্রাক্তনী, দেখুন চাঞ্চল্যকর এই ভিডিও
01:36:31
Video thumbnail
India-Pakistan | ভারত-পাক সংঘ/র্ষে বিরাট মন্তব্য ভারতের নৌসেনা অফিসার ক্যাপ্টেন শিবকুমারের
01:17:05
Video thumbnail
Kasba Incident | বিগ ব্রেকিং, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ল' কলেজের ক্যাম্পাস
37:20
Video thumbnail
India-America | ভারতের ওপর শুল্ক হু/মকি, কত শতাংশ? দেখুন বড় খবর
57:56
Video thumbnail
India-America | ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত, শুল্কে কত ছাড় পাবে ভারত? দেখুন বড় খবর
01:45:15
Video thumbnail
Kasba Incident | সাংবাদিক বৈঠকে সাউথ ক্যালকাটা ল' কলেজের পড়ুয়ারা, দেখুন সরাসরি
01:10:41
Video thumbnail
Weather Update | প্রবল দুর্যোগ, ভারী বৃষ্টির সতর্কতা কোন কোন জেলায়? কবে মুক্তি?
03:46:35
Video thumbnail
Kolkata Metro | অফিস টাইমে ফের মেট্রো বিভ্রা/ট, প্রবল বৃষ্টিতে লাইনে জল, ব্যাহত আংশিক পরিষেবা
03:28:35

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39