প্রথমে পর পর দু বছর। তার পর আবার এক বছর। মোট তিন বছর ইস্ট বেঙ্গলে খেলেছেন জামশিদ নাসিরি। তিন বছরে ডার্বিতে তাঁর গোল আছে তিনটে। আশির দার্জিলিং গোল কাপ এবং রোভার্স কাপে। আর পঁচাশির ফেড কাপ ফাইনালে। এর বাইরে খেলেছেন আরও ডার্বি। কিন্তু সুপার সাব হিসেবে নেমে মাত্র ৩৫ মিনিট খেলে হ্যাটট্রিক করে টিমকে জেতানোর কোনও রেকর্ড নেই তাঁর। ছোট ছেলে কিয়ানের এই কীর্তিতে খুবই আনন্দিত জামশিদ। পাশাপাশি সতর্কও। বলছিলেন, “খুবই ভাল ব্যাপার। আমরা খুবই আনন্দিত। তবে এখানেই থেমে থাকার কোনও ব্যাপার নেই। কিয়ানের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রথম একাদশে নিজের জায়গা পাকা করা। আর তারপর ভারতীয় দলের জার্সি পরা। বাইচুংয়ের পর ছিল সুনীল ছেত্রী। ওরও তো বয়স হয়েছে। জানি না আর কত দিন খেলবে। কিয়ানের বয়স কম। ওর সামনে অনন্ত ভবিষ্যৎ। ওকে ভারতের জার্সি পরে খেলতে দেখতে চাই।”
শনিবারের ম্যাচের পর থেকে ফোনের বন্যায় ভেসে গেছেন জামশিদ। সঙ্গে টেক্সট ম্যাসেজ তো আছেই। কিয়ানের মা শিলংয়ের মেয়ে সুসানের ফোনেও অভিনন্দনের বন্যা। ওদিকে গোয়ার এটিকে মোহনবাগান হোটেলে কিয়ান খুবই শান্ত। ম্যাচ জিতে এসে ডিনার করে শুয়ে পড়েছিলেন। রবিবার প্র্যাক্টিস ছিল না। তবে প্রচুর ফোন ধরতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন এসেছে একুশ বছরের ছেলেটার ফোনে। তবে এতে মাথা ঘুরে যায়নি ডার্বির ইতিহাসে তৃতীয় হ্যাটট্রিককারীর। গোয়া থেকে ফোনে কিয়ান বলছিলেন, ” আমি যখন মাঠে নামি তখন আমাদের টিম এক গোলে হারছিল। আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল গোলটা শোধ করার। তার পর যখন ডেভিড উইলিয়ামস পেনাল্টি পেল তখন ভেবেছিলাম আমরা এগিয়ে যাব। সেটা হয়নি। কিন্তু আমি সব সময়েই পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি। মাথায় ছিল, যদি সুযোগ পাই তাহলে যেন গোল করতে পারি। হ্যাটট্রিক করার কথা মাথায় ছিল না। মাথায় ছিল ম্যাচটা জেতা। শেষ পর্যন্ত সেটা হওয়াতে আমি খুশি।”
টিম এক গোলে পিছিয়ে আছে। সেই সময় একেবারে আনকোরা একজনকে মাঠে নামানোর সাহস দেখিয়েছেন কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তবে সবুজ মেরুন টিমে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আইডিয়াটা এসেছিল সহকারী কোচ বাস্তব রায়ের মাথায়। বাস্তবই বলেন জুয়ানকে। এবং সেটা মেনে নিয়ে সুপার সাব হিসেবে ৬১ মিনিটে কিয়ানের নামা এবং তিন মিনিটের মধ্যে গোল শোধ করা। জুয়ান বলেছেন, “কিয়ান যে হ্যাটট্রিক করবে তা আমি ভাবিনি। তবে ওকে বলেছিলাম নয় নম্বর জার্সির মতো খেলতে। ও সারাক্ষণই বক্সের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে। এবং গোলগুলো এসেছে সে জন্যই।”
মোহনবাগানের পরের ম্যাচ ৩ ফেব্রূয়ারি মুম্বই সিটি এফ সি-র সঙ্গে। সেই ম্যাচে কি শুরু থেকেই খেলতে পারেন কিয়ান? জুয়ান এবার সাবধানী। বলেন, “এখনও সে সব নিয়ে ভাবিনি।” কিয়ানের হ্যাটট্রিক বিদেশি ভরা আই এস এল-এ ভারতীয়দের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। বাইচুং ভুটিয়া এবং এডে চিড্ডি যখন ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তখন তাদের বয়স অনেক বেশি ছিল। কিন্তু মাত্র একুশ বছরের কিয়ান যা কীর্তি স্থাপন করলেন তা অনন্য। খুব তাড়াতাড়ি ডার্বির বাগানে ফুল হয়ে ফুটেছেন কিয়ান। এখন দেখার এই ফুলের গন্ধে ভারতীয় ফুটবল কত তাড়াতাড়ি আমোদিত হয়। কিয়ান অবশ্য এখনই সে সব নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর আপাতত লক্ষ্য মোহনবাগানের প্রথম একাদশে জায়গা পাকা করা। তবে এরই মধ্যে জানিয়ে দিলেন সেদিনের তিন গোলের মধ্যে দ্বিতীয়টিই সেরা।