Saturday, June 21, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: রেজাল্টআউট। কী বলছে নির্বাচনের ফলাফল?

Fourth Pillar: রেজাল্টআউট। কী বলছে নির্বাচনের ফলাফল?

Follow Us :

তিনটে বড় নির্বাচন, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটি। তিনটেই ছিল বিজেপি’র হাতে। গুজরাটে বিজেপি জিতেছে, জিতেছে বললে কম বলা হবে, সুইপ করেছে। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস জিতেছে, হিমাচলে জয়-পরাজয় এরকমই হয়, ৬৮টা আসনে ৪০, খুব সাধারণ জয়, তবে ৩ জন নির্দলকে নিয়ে অপারেশন লোটাস যে কোনও সময়ে শুরু হতে পারে। বিজেপির সে ক্ষমতা আছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের আপাতত কি মহিমা, কংগ্রেসের ভুপিন্দর সিং হুডা, রাজীব শুক্লা আপাতত সিমলাতে, বিধায়কদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে জয়পুরে। সে সব আলোচনায় পরে আসছি। একটা লোকসভা আসনের উপনির্বাচন, মৈনপুরি, আগের রেকর্ড ভেঙে জিতেছেন বহুরানী, ডিম্পল যাদব। ৬টা বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন, এইখানেও দু’টো অঘটন, প্রথমটা বিহারে। কুরহানি আসন ছিল আরজেডি’র হাতে, দুর্নীতির অভিযোগে বিধায়ক অনিল কুমার সাহনির সদস্যতা খারিজ হয়, উপনির্বাচনে এই আসন মহাগঠবন্ধনের জেডিইউ’কে দেওয়া হয়, কিন্তু আরজেডি, জেডিইউ মিলেও এই আসন জিততে পারল না, এই আসন পেল বিজেপি। অন্যদিকে উত্তর প্রদেশে দু’টো বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন ছিল, তার মধ্যে রামপুরে গত নির্বাচনেও জিতেছিলেন আজম খান, ৫৯%-এর বেশি ভোট পেয়ে, এবার তিনি জেলে, উপনির্বাচনে ৫৬% ভোট পেয়ে বিজেপি’র আকাশ সাক্সেনা জিতলেন। উত্তর প্রদেশের অন্য আসনটিতে, খতৌলিতে জিতেছে আরএলডি, বিজেপি হেরেছে। এই আসনে গতবারে জিতেছিল বিক্রম সিং সাইনি, মুজফফরপুর দাঙ্গায় সক্রীয় ভূমিকা থাকার অভিযোগে তাঁর জেল হয়, উপনির্বাচনে আসন হারালো বিজেপি। এই খতৌলি একসময় ছিল কমিনিস্ট পার্টির মজবুত আসন, ১৯৬৭-তে কমরেড সর্দার সিং সিপিআই-এর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, জিতেছিলেন। না এবারে কেন, গত ৬/৭টা নির্বাচনে এখানে কমিউনিস্ট পার্টি প্রার্থীও দেয়নি। উড়িষ্যায় বিজেডি তার আসন ধরে রাখল। রাজস্থানে সর্দার শহর আসন কংগ্রেসের ছিল, কংগ্রেসের কাছেই রইল। ছত্তিসগড়ে ভানুপ্রতাপপুর ছিল কংগ্রেসের, কংগ্রেসের কাছেই রইল। বড় খেলায় বিজেপি ১ – বিরোধীরা ২। ১৫ বছর ধরে তাদের হাতে ছিল দিল্লির তিনটে মিউনিসিপ্যালিটি। তিনটেকে এক করে নিজেদের ইচ্ছে মতো সময়ে নির্বাচন করিয়ে, নির্বাচনের আগে মনীষ শিশোদিয়া সমেত সত্যেন্দ জৈনকে নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে, সত্যেন্দ্র জৈনকে জেলে রেখে, জেলে থাকা অবস্থায় সিসিটিভি ফুটেজ বাজারে ছড়িয়ে, মন্ত্রী, সান্ত্রীদের প্রচারে নামিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরেও ১৫ বছর পরে দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটি বিজেপি’র হাতছাড়া হল। দিল্লি দেশের রাজধানী, নাকের ডগায় বসে থাকা কেজরিওয়াল আবার ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন দিল্লি কা লাড্ডু। হিমাচল প্রদেশ, এখানের রেওয়াজ হল প্রত্যেকবারে সরকার বদলের। নরেন্দ্র মোদী ভাষণে বললেন রিওয়াজ নহি, রাজ হোগা। এটা আমার দ্বিতীয় ঘর, হোম স্টেট, মাথায় হিমাচলি টুপি, এই রাজ্য আবার বিজেপি’র দুধুভাতু সভাপতি জেপি নাড্ডার হোম স্টেট। কিন্তু শেষমেষ স্বাভাবিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কংগ্রেসের, বিজেপি গতবারের চেয়ে ১৮টা আসন কম পেয়েছে। আম আদমি পার্টি এখানেও ছিল, ১%-এর বেশি ভোটও পেয়েছে, আর একটু বেশি পেলেই কংগ্রেসের ঘটি-বাটি বিক্রি হত। বিজেপি ৪৩% ভোট পেয়েছে, কংগ্রেস ৪৪% ভোট, ৪০টা আসন। তাতে কি? কংগ্রেস পেয়েছে ৪০, ওয়ান থার্ড হল ১৪, ১৪টা ছাগলের দাম মাথা পিছু ৫০ কোটি করে দিলে কত হবে? ৭০০ কোটি টাকা। এ তো নস্যি। কাজেই আপাতত কংগ্রেসের সরকার হবে হয়তো, কতদিন থাকবে বলা মুশকিল। কারণ কংগ্রেসের একাধিক নেতার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সখ আছে, বীরভদ্র সিং পত্নী প্রতিভা সিং এই দৌড়ে আছেন, আছেন সুখবিন্দর সিং সুখু। ওই সুখু বাবাজি কখন কী করে বসবেন জানা নেই। বিকেল পর্যন্ত বিজেপি দ্বিতীয় সারির নেতারা বলে যাচ্ছেন, হিমাচল প্রদেশ আমাদের হাতেই থাকবে। আমরা এর আগে গোয়া, মণিপুর, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে অপারেশন লোটাস দেখেছি, ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছি, মানুষের ভোটে নয়, টাকায় তৈরি হচ্ছে সরকার। হিমাচলে তার পুনরাবৃতি হবে কিনা, তা তো আগামী দিনে জানাই যাবে। এসব নতুন কিছু নয়, কংগ্রেসি আমলেও ছিল, কিন্তু তা নিয়ে যথেষ্ট রাখঢাক গুড়গুড় ছিল, অন্তত মুখে বলতো গণতন্ত্রে মানুষ নির্বাচিত করবে সরকার, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। এখন এ বাংলার টাচ মি নট খোকাবাবু জোরের সঙ্গেই বলছেন, ডিসেম্বরে সরকার পড়ে যাবে, আরেক গোখরো সাপ রাজ্যে এসেই জানিয়েছেন ৩৫টা ছাগল নাকি তাঁর পকেটে। গণতন্ত্রের অপার মহিমা, এনাদের এই সংবিধান-বিরোধী কথা বলার দরুন জেলে থাকা উচিত, এনারা লাল বাতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি বিরোধী নেতারাও এই সুরেই কথা বলছেন, সম্ভবত তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্যই, ডিসেম্বরে আমরাও তৈরি। তাহলে মহাশয়েরা আমরা কেন ভোট দেব? ভোত দিয়ে হবেটা কী? যদি ভোটের পরে টাকার থলে দিয়েই সরকার তৈরি হয়, তাহলে ভোটের নৌটঙ্কি বন্ধ হোক। এসব কথা আরেকদিন। আজ নির্বাচনের কথা এবার নির্বাচনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলাটা ছিল গুজরাটে। গুজরাটে বিজেপি জিতবে, এটা কম-বেশি নিশ্চিত ছিল। প্রশ্ন তিনটে ছিল – এক, বিজেপির জয় কত বড় হবে? দুই, কে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে – কংগ্রেস, না আপ? তিন, আপ কত ভোট পাবে? আপ কাদের ভোট পাবে? সত্যি বলতে কি এই তিনটে প্রশ্নের উত্তর কারওর জানা ছিল না। না, নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহেরও ছিল না। ছিল না বলেই এমনকি ভোটের দিনেও রাজধানী আমেদাবাদে প্রধানমন্ত্রী মিছিল করলেন, মিডিয়া তা ফলাও করে দেখালো। নির্বাচন কমিশন তো শালগ্রাম শিলা, বসে বসে দেখলো। যদি আম আদমি পার্টি গুজরাটের লড়াইতে না থাকতো, তাহলে? তাহলেও ফলাফলটা খুব আলাদা কিছু হত না। আম আদমি পার্টির ভোট কাটার ফলে কংগ্রেসের গোটা ৪০ আসনে হার হয়েছে। তার মানে বিজেপি ১১৫/১২০ আসন তো পেতই। তাহলে? এই ফলের পেছনে আছে প্রত্যেক আসনের জাত-পাতের হিসেব, দল ভাঙানো, পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেল, ক্ষত্রিয় সমাজের অল্পেশ ঠাকোর, শেষ মুহূর্তে একজন প্যাটেলকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসানো, কোটি কোটি কোটি টাকা, সরকারি বেসরকারি প্রচারযন্ত্রের ভরপুর ব্যবহার এবং ট্রাম্প কার্ড প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদীর মুখ, গুজরাটি অস্মিতা। এই সবের ওপর ভর করে ৯৯ থেকে ১৫৬, মাধব সিং সোলাঙ্কির রেকর্ড ভেঙে এক নতুন উচ্চতায় গুজরাটে বিজেপি’র সরকার। মূল্যবৃদ্ধি, স্বাস্থ, শিক্ষা অবনতি, লাগামছাড়া দুর্নীতি, কোভিড অব্যবস্থা, পরীক্ষার পেপার লিক, বেরোজগারি, উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজার তলায় সব উবে গেল? আপনি একমত নন, তাহলে আসুন তিনটে আসন নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথমটা হল মোরবি। কিছুদিন আগেই সেখানে ব্রিজ ভেঙে ১৪৫ জন মারা গিয়েছেন। জানা গিয়েছে কী ভয়ঙ্কর দুর্নীতি আর অবহেলা এই ঘটনার পিছনে ছিল। তারপরেও একজনও প্রকৃত দোষী গ্রেপ্তার হয়নি। এই মোরবি বিধানসভার আসনে কী হয়েছে একটু দেখে নেওয়া যাক। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী অম্রুতিয়া কান্তিলাল শিবলাল ৫৯.২১% ভোট পেয়ে জিতেছেন, কংগ্রেস পেয়েছে ২৭.১২%, আপ পেয়েছে ৯.০৭% ভোট। মানে ১৪৫ জনের মৃত্যু, নরেন্দ্র মোদী হাজির হলেন, ভোটের চেহারা বদলে গেল। দ্বিতীয় আসন গোধরা। এখানের বিধায়ক একদা কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন, পরে বিজেপি’তে আসেন, সি কে রাউলজি। ইনি কিছুদিন আগেই বিলকিস বানোর গণধর্ষণে শাস্তি পাওয়া অপরাধীদের জেল খালাসির সিফারিস করেছিলেন, তাদেরকে সংস্কারি ব্রাহ্মণ বলেছিলেন, তারা জেল থেকে বের হওয়ার পরে তাদের ফুল মালা আর মিষ্টি দিয়ে স্বাগত অভ্যর্থনা  দিয়েছিলেন। এই সি কে রাউলজি পেয়েছেন ৫১.৬৫% ভোট, কংগ্রেস পেয়েছে ৩২.৭৬% ভোট। আম আদমী পার্টি পেয়েছে ৬.৩৫% ভোট। এবার চলুন গতবার নির্দল হিসেবে জেতার পরে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া দলিত নেতার আসনে, হ্যাঁ বদগাঁও আসনে লড়েছেন জিগনেশ মেওয়ানি, পিছিয়ে থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার ভোটে তিনি জিতেছেন, পেয়েছেন ৪৮% ভোট, বিজেপি ৪৫.৫৫% ভোট, এই আসনে আম আদমি পার্টি পেয়েছে ৪৩২২টা ভোট, আসওয়াউদ্দিন ওয়েইসির আইএমআইএম পেয়েছে ২২৩৩ টা ভোট। আর কটা ভোট পেলেই বদগাঁওয়ের এই তরুণ লড়াকু নেতা হারতেন, অমিত শাহ, বিজেপি জানিয়ে দিয়েছিল এই আসনে কংগ্রেসের জেতা চলবে না। জিগনেশ জিতেছেন। অর্থাৎ ভোটারদের উদাসীনতা আছে, সত্যিকারের ইস্যু ভুলে জাত ধর্ম, গুজরাটি অস্মিতা, কোটি টাকার প্রচারের কাছে সব ভুলে যাওয়া আছে, আবার যে তরুণ ছেলেটি মুখোমুখি লড়েছে বিজেপির সঙ্গে, তার জয়ও আছে। তবে এবারের নির্বাচনে সবথেকে নজরকাড়া বিষয় হল কংগ্রেসের মাঠ থেকে উধাও হয়ে যাওয়া। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী গেহলট ছিলেন গুজরাট নির্বাচনের দায়িত্বে। নিজের রাজ্যে কাজিয়াতে ব্যস্ত রইলেন। নতুন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে গোয়াতে এক সভা করেছেন, রাহুল গান্ধী ব্যস্ত ছিলেন ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে, দু’দিনের জন্য এসেছিলেন। সবাই জানতো বিজেপি জিতবে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে অমিত শাহ এবং মন্ত্রিসভার প্রত্যেকে, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে উল্লেখযোগ্য নেতারা প্রচার চালিয়েছেন। কংগ্রেস নাকি চুপি চুপি প্রচার করছিল, এটাই নাকি ছিল তাদের স্ট্রাটেজি, একেই টেনিদা ক্যাপাকাইটি বলেছিল। সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচনের গুরুত্ব কমিউনিস্ট পার্টি বুঝে ফেললো, কংগ্রেসের মাথায় সেটা কবে ঢুকবে কে জানে? আর এই বিশাল দেশে কংগ্রেসের পুনরুথ্বান ছাড়া বিজেপিকে পরাস্ত করা এক অসম্ভব কাজ। তারজন্য কংগ্রেসকে মুছে যেতে হবে, তার জায়গায় রিজিওনাল দল, আপ এর মতো দল উঠে আসবে, কংগ্রেস কি আত্ম বিলয়ের, সেলফ ডেস্ট্রাকশনের পথ বেছে নিয়েছে?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
British Parliament | ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্বেচ্ছামৃ/ত্যুর আইন পাশ, উচ্ছাস বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | বিশ্বযু/দ্ধ আসন্ন?
52:17
Video thumbnail
গান ভালোবেসে গান | মৃ/ত্যুকে জয় করে গানের জগতে শিল্পী তন্ময়
03:47
Video thumbnail
গান ভালোবেসে গান | খড়াপুর IIT-র চাকরি ছেড়ে সংগীত জগতে প্রবেশ
03:18
Video thumbnail
গান ভালোবেসে গান | ছোট থেকে লালন ফকিরের গানই ছিল ধ্যানজ্ঞান, অভাবের তাড়নায় রাজমিস্ত্রি লালু
02:58
Video thumbnail
গান ভালোবেসে গান | কেমন আছেন একতারা কারিগড়রা...বিশ্ব সংগীত দিবসে একতারা কারিগড়দের খোঁজ কলকাতা টিভির
03:20
Video thumbnail
গান ভালোবেসে গান | পদ্মশ্রী রতন কাহারের কঠিন জীবনসংগ্রাম
04:13
Video thumbnail
BJP | নাড্ডার পর কে হতে পারে বিজেপি সভাপতি? RSS-মোদি-শাহ ল/ড়াই, ১৫ জনের তালিকা বাছতে হিমশিম বিজেপি
01:15:28
Video thumbnail
Trump | তেল আভিভে ত্রাহি রব, মধ্যপ্রাচ্যের যু/দ্ধে বন্ধু ইজরায়েলকে বাঁচাতে আজই ট্রাম্পের এন্ট্রি?
01:26:35
Video thumbnail
Donald Trump | কৃতিত্ব আদায়ে নোবেল আক্ষেপ, অভিমানি ট্রাম্প
01:19:41