নয়াদিল্লি: অবসরের পর পুনর্বাসন। এই সারিতে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ (Former CJI Ranjan Gogoi) এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের (Justice Ashok Bhushan) পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন বিচারপতি আবদুল নাজির (Justice Abdul Nazeer)। যাঁকে সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল (Governor of Andhra Pradesh) নিয়োগ করেছে সরকার। এঁরা হলেন সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার (Ram Janmabhoomi-Babri Masjid case) ‘ঐতিহাসিক’ সেই রায়ের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের তিন সদস্য। আরও একজন ছিলেন, যিনি তৎকালীন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বর্তমানে দেশের প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: BBC – IT Raids: দিল্লি ও মুম্বইতে বিবিসির অফিসে সমীক্ষা চালানোর নামে আয়কর হানা
ওই মামলার রায়ে রামমন্দির ট্রাস্টের হাতে অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি তুলে দেওয়া হয়েছিল। যে রায়কে হাতিয়ার করে একের পর এক ভোটযুদ্ধে বিরোধীদের মুণ্ডচ্ছেদ করে চলেছে বিজেপি। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, যে প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভার (Rajya Sabha) মনোনীত সদস্য (Nominated Member) করা হয়েছিল, সংসদের উচ্চকক্ষে তিনি ঠিক কী ভূমিকা পালন করেছেন, একজন সদস্য হিসেবে তিনি কতবার সরকারের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? মায় তিনি আদৌ সংসদে কতদিন হাজির হয়েছেন! মার্কশিটের প্রথম দুটো বিষয়ে প্রাক্তন বিচারপতি গগৈ পেয়েছেন শূন্য। এবং উপস্থিতিতে পেয়েছেন মাত্র ২৯ শতাংশ নম্বর। জনতার প্রশ্ন তাহলে, সরকারের এরকম ‘চোখের মণি’ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আলঙ্কারিক পদে ভূষিত করে দেশের মানুষের লাভ কী? আপনার কাছে আছে এর উত্তর!
২০১৯ সালের নভেম্বরে অযোধ্যা মামলার রায় বেরয়। সেই মাসেই অবসর নেন প্রধান বিচারপতি গগৈ। কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে, অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ মাসে রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য করা হয়। যার মানে তিনি প্রায় তিন বছরের কাছাকাছি উচ্চকক্ষের এমপি। বিচারপতি অশোক ভূষণ অবসর নেন ২০২১ সালের জুলাইয়ে। তাঁকে ল অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারপার্সনের আসন দেয় সরকার। একইভাবে অবসরের ৪০ দিন পর অন্ধ্র রাজভবনের বাসিন্দা হলেন বিচারপতি নাজির।
দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আজীবন আইন নিয়ে চর্চা করেছেন। যাঁর অকাট্য যুক্তি, দেশের আইনের ইতিহাস এবং আইনজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা বিতর্কের অতীত। কিন্তু, রাজ্যসভার আসনে কেবলমাত্র একজন অলঙ্কার হিসেবেই থেকে গেলেন। অন্য সাংসদদের যেখানে গড়পরতা হাজিরা হল ৭৯ শতাংশ। সেখানে গগৈয়ের উপস্থিতি মাত্র ২৯ শতাংশ।
রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হওয়ার পর প্রাক্তন বিচারপতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমার কাজ হবে বিচারবিভাগের দৃষ্টিভঙ্গি আইনসভায় তুলে ধরা। বিচারবিভাগীয় ও আইনসভার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দেশ গঠন করার কাজে হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ২০২১-এর সাক্ষাৎকারে গগৈ একইভাবে ওই কথাই বলেন এবং জানান উত্তর-পূর্বের সমস্যা তুলে ধরবেন সভায়।
কিন্তু, এই তিন বছরে রাজ্যসভার ৮টি অধিবেশনে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি একটিবারের জন্যও মুখ খোলেননি। কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। শুধু তাই নয়, উত্তাল সংসদে কোনও বিতর্কেও অংশ নেননি। কোনও বেসরকারি বিল আনা তো দূরঅস্ত, যে কদিন এসেছেন চুপ করেই বসেছিলেন তিনি। সংবাদ মাধ্যম ‘দি প্রিন্ট’ এই সংবাদ দিয়ে লিখেছে, প্রতিক্রিয়ার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে ফোন করলেও কোনও সাড়া মেলেনি।