Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | খুলে গেল দরবার?  

Aajke | খুলে গেল দরবার?  

Follow Us :

ধান ভানলে কুঁড়ো দেব, মাছ কাটলে মুড়ো দেব, কালো গাইয়ের দুধ দেব, দুধ খাওয়ার বাটি দেব কেবল ভোট দিয়ে যা। যেখানে আদানির,ও একটা ভোট, হরিপদ কেরানিরও একটা ভোট, সেই পোড়ার গণতন্ত্রে ভোট বড় বালাই। ভোটের জন্য কত কী যে হয়। দু’ কেজি চাল দেওয়ার আগে অন্তত খান দশেক মিডিয়ার হাজিরা গুণে দেখে তবে চালের প্যাকেট তুলে দেয় একজন। তাঁর পাশে সেই কৃতিত্বের ভাগ নিতে আরও জনা দশেক হাসিমুখ আমরা দেখেছি। হোর্ডিংয়ে নেতাদের, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ঝোলে তো সেই কারণেই। তবু ভালো, ছবি ঝোলে তো ঝুলুক, যদি সত্যিই গরিব মানুষজন কিছু পায়, তাহলে ঝুলুক। কিন্তু স্বচক্ষে দেখেছি এক ঝড়ের দিনে নরেন্দ্র মোদিজির মুখ ফালা ফালা হয়ে উড়ছে। ওরে ঝড় নেমে আয়। 

তো আজ এসব কথা কেন? এ রাজ্যে পরিবর্তনের পরে বসত জনতা দরবার, মাঝেমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বসতেন, বাকি দিনগুলোতে এক আমলা নিতেন মানুষের লিখিত অভিযোগ। কতজন সেই প্রক্রিয়াতে লাভ পেয়েছেন জানা নেই, নিশ্চয়ই পেতেন, না হলে ভিড় হত কেন? কিন্তু সেই জনতা দরবার নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ওই যে ভোট বড় বালাই, আর এখন তো একটা ভোট নয়, পঞ্চায়েত ভোট, মিউনিসিপালিটি, কর্পোরেশন ভোট, লোকসভা ভোট, বিধানসভা ভোট, এরপরেও তো স্কুল কমিটি, সমবায় ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোট আছেই। সব মিলিয়ে জনতার প্রতিনিধির একফোঁটা জিরানোর সময় নেই। একটা যায় অন্যটা এসে হাজির হয়। তো আসছে পঞ্চায়েত, তারপরেই লোকসভা, কাজেই জনতা দরবার আবার চালু হতে চলেছে কালীঘাটে, মুখ্যমন্ত্রীর বাসার সামনেই। আপনি সটান চলে যেতেই পারেন আপনার অভিযোগ নিয়ে। আমলারা সেই অভিযোগ নেবেন আর মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং দেখবেন, আজ সেটাই বিষয়, জনতা দরবার।

জনতা দরবার দিয়ে পরিবর্তনের যাত্রা শুরু হয়েছে, তারপর দিদিকে বলো, দিদির সুরক্ষা কবচ, দুয়ারে সরকার, দুয়ারের রেশন, দুয়ারে ডাক্তার। কর্মসূচির পর কর্মসূচি। কেন? আই প্যাক বলেছে বলে? মানুষকে জানাতে হবে যে আমরা আছি আপনার সঙ্গে? তাই? আসল ব্যাপারটা হল প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি পেতে পেতে পেতে মানুষ ক্লান্ত। ভোটের আগে গাই বিয়োলে দুধ দেব ভোটের পরে গোমূত্র, এমনটাতেই মানুষ ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। হঠাৎই সংসদীয় রাজনীতিতে ‘ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারি’ এক কনসেপ্ট এসে হাজির। মানে সরকার বড় প্রকল্প করবে, বিরাট বিরাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করবে, বড় বড় শিল্প হবে। হয়েছে তো, কিন্তু গরিব মানুষ গরিব থেকে গেছে। তাই গরিবদের জন্যও প্রকল্প চালু হল, সরকারি প্রকল্প, সরকার টাকা ঢেলেই গেছে। রাজীব গান্ধী তো বলেই দিয়েছিলেন, দিল্লি থেকে ১ টাকা দিলে গ্রামের প্রান্তিক মানুষটার কাছে ২০ পয়সাও পৌঁছচ্ছে না, সদ্য রাজনীতিতে এসেছেন, সত্যিটা বলেই দিয়েছিলেন। এবার দক্ষিণে শুরু হল সোজাসুজি প্রেসার কুকার দেওয়া, গ্যাস ওভেন দেওয়া, এমারজেন্সি লাইট দেওয়া, জয়ললিতা এটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। তারপর ক্রমশ গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। ওসব প্রকল্প ইত্যাদি বহু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার আর সবথেকে গরিব মানুষদের কাছে সেসব পৌঁছাচ্ছেও না অতএব, সাইকেল, তারপরে সরাসরি টাকা, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, যুবশ্রী, দুনিয়ার প্রকল্প, যেখান থেকে মানুষের কাছে সোজা পৌঁছে দেওয়া যায় কিছু টাকা, কিছু সুবিধে। সরকার এটা দেবে, বিরোধীরা বলবে ভিক্ষের রাজনীতি। বাংলায় দিলু ঘোষ থেকে শুভেন্দু অধিকারী এটাই বলেন, আবার তাঁদের নেতা গর্ব করেই বলেন দেশের ৮০ কোটি মানুষকে উনি ফ্রি র‍্যাশন দিচ্ছেন। আর এই ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারি কি কেবল গরিব তস্য গরিব মানুষজন পেয়ে থাকেন? তাও নয়। শিল্পপতিরা পান কর ছাড়, সেসব বিরাট টাকার, বিভিন্ন শিল্পে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়। বিভিন্ন শিল্পতালুকে নানান সুবিধে দেওয়া হয়, ওগুলো হল বড়লোকেদের কোটি কোটিপতিদের ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারি বানানোর খেলা। গরিবদের টাকা দিলে, সাইকেল দিলে ভোট আসে, শিল্পপতিদের দিলে কী আসে? ২০১৯-২০তে শিল্পপতিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে দিয়েছেন ৯২০ কোটি টাকা। এসব দেওয়া নেওয়ার কথা অবশ্য কেউ বলে না, কেবল গরিবদের সরাসরি টাকা দিলেই গায়ে বড্ড লাগে অনেকেরই। যাই হোক সেই দেওয়ার পেছনে কী থাকে? এইসব জনসংযোগ, আম দরবার, জনতা দরবার, দিদির সুরক্ষা কবচ, দিদিকে বলো এসব কি কেবল ওই ভোটের দিকেই তাকিয়ে করা হয়? কী বলছেন আম জনতা?

গণতন্ত্র বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য পিপল। পাঁচ বছর পরে আবার নির্বাচিত হতে গেলে আজ আর কেবল বুকনিবাজি দিয়ে চলবে না। খালি প্রতিশ্রুতির দিন শেষ, এবার হাতে হাতে দিতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে শিল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি, সহজ ঋণ দেওয়া হয়েছে, উচ্চ মধ্যবিত্তদের করছাড়ের জন্য ব্যবস্থা হয়েছে। আজ একটা সাইকেল দিলে, ৩০০০ টাকা দিলে অনেকের গায়ে ফোসকা পড়ছে পড়ুক, গরিব মানুষ কিন্তু এবার থেকে এক হাতে নেবে এক হাতে দেবে। কাজেই প্রথম কথা হ্যাঁ সরাসরি টাকা, সুবিধে দিতে হবে, আর সেই সব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও রাখতে হবে, প্রতিদিন। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বুঝেছে, বুঝেছে তৃণমূলও, তাই খুলছে জনতা দরবার, এমনি এমনি নয়, ভোট আসছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular