Monday, June 30, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | প্রতিবাদহীন এক বোবা সময়ের গর্ভে এক নতুন সকাল
Fourth Pillar

Fourth Pillar | প্রতিবাদহীন এক বোবা সময়ের গর্ভে এক নতুন সকাল

অর্থনীতি আর নীচে নেমেই চলেছে আর মুড অফ দ্য নেশন মোদিজির পক্ষে উঠছে তো উঠছেই

Follow Us :

এক্কেবারে ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই শুরু করি? ঠিক ব্যক্তিগতও নয়, আমার এই গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নয় নয় করেও সাড়ে তিনশো মানুষের বেঁচে থাকা, তাঁদের সংসার, তাঁদের সন্তান সন্ততিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য। কেন বলছি একথা? দিব্য ফিটফাট জামাকাপড় পরে, মুখে পাউডারও লাগিয়ে বসছি এখানে, রোজ, তাহলে এই বাঁচা-মরার গল্প কেন? হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই বাঁচা-মরার গল্প। আমাদের চ্যানেল মালিক এবং সম্পাদক আজ ২৯২ দিন হল জেলে। বহুবার বলেছি আবার বলি। এক ফোর টোয়েন্টি মানুষের সঞ্চিত অর্থ মেরে দেওয়ার অভিযোগে শাস্তি পাওয়া, জেল খাটছে এমন আসামির হঠাৎ এক অভিযোগের ভিত্তিতেই আমাদের চ্যানেল মালিক সম্পাদককে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ সব্বার জানা। এ রাজ্যের শুভেন্দু, সুকান্তের সঙ্গে একটা ছোট্ট বোঝাপড়া করে ফেললেই তিনি মুক্তি পেতেন, চাইলে বাইরে এসে নানান সুযোগ সুবিধে নিয়ে চ্যানেল চালাতেন, বিজ্ঞাপন আসত, আমাদের এই সাড়ে তিনশো জনের পরিবারের উপর যাবতীয় সংকট মুছে দিয়ে এক আচ্ছে দিনের ভোমরা উড়ে বেড়াত। সমস্যা হল উনি সেটা করেননি, উনি জানিয়ে দিয়েছেন দেশের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে শিরদাঁড়া বিক্রি করা হবে না। তিনি বলেছেন, আমরাও সেটা মেনেছি, প্রতিদিন, পেন ধরার আগে, মেক আপ নেওয়ার আগে, এই ক্যামেরার সামনে আসার সময়ে মাথায় থাকে নো পাসারন। পার পাবে না, শিরদাঁড়া টিকাউ, বিকাউ নয়। কাজেই সেটাই আমাদের ব্যক্তিগত কাহিনি, যা নিয়ে আমাদের লড়তে হচ্ছে, চ্যানেল মালিক না থাকায় ব্যবসা কমছে, ইডি আর সিবিআই-এর ভয়ে বিজ্ঞাপন আসছে না। কিন্তু ওই যে বললাম, প্রতিদিন আমরা আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আর সেটাই বৃহস্পতিবার আদালতে এসে আমাদের সম্পাদক বললেন। বললেন এক বোবা প্রতিবাদহীন সময়ে জেলে বন্দি এক অভিযুক্ত সুবিচার, জাস্টিস ছাড়া আর কীই বা চাইবে? আমিও জাস্টিস চাই, আমার জন্য, আমার চ্যানেলের জন্য। সাংবাদিকতার এই বিশাল বাড়বাড়ন্তের সময়েও সত্যিই এ এক বোবা সময়, প্রতিবাদহীন সময়।

মহুয়া মৈত্র একটা কথা বলেছিলেন, দু’ পয়সার সাংবাদিক, দল তার দায় নেয়নি, সর্বোচ্চ নেত্রীর সায় ছিল না, কাজেই তিনি আমি তো বলতে চাইনি, আমি ওরকমভাবে বলিনি টাইপের টুইট করে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, মিটেও গেছে। মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশও আসবে, মিটিয়ে নিতেও হবে। কিছু মিডিয়া বয়কটের হুমকি দিয়েছিল, সে বয়কটের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের নয়, তাহলে সাংবাদিকদের অনেককেই বয়কট করতে হয়, হিসেব নিকেশ, কথাবার্তা আলোচনার পর মালিক বা ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। সাংবাদিকরা বলছেন মাত্র। মহুয়া মৈত্রকে বয়কট করতে হলে প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি, কং, বাম, অন্য রাজনৈতিক দলের বহু নেতাকেই বয়কট করা উচিত, করা হয়নি কারণ তা মালিক বা ম্যানেজমেন্টের কাছে approval পায়নি। সেখান থেকে সায় না পেলে সাংবাদিক যিনি একটি নেহাতই কাগুজে বাঘ, তাঁর পক্ষে কিছুই করা, বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আজকের আবহে তিনি যা বলেছিলেন তা পরীক্ষীত সত্য, এর বিরুদ্ধে গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করলেও তা সত্যই থেকে যাবে।

সংবাদমাধ্যম, খবরের কাগজ, টিভি এবং ইন্টারনেটের বড় সংবাদসংস্থা চালাতে পয়সা লাগে, চালানো হয় মুনাফার জন্য। সমাজ সেবার জন্য প্রণয় রায়ও কোম্পানি তৈরি করেননি, শেয়ার কেনাবেচাও হয় অনেক সংবাদমাধ্যম কোম্পানির। সংবাদপত্র কেবল সাংবাদিক দিয়েই চলে না, থাকে অন্য কর্মচারীরা, বিশেষ করে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং-এর লোকজন। যাঁদের বিজ্ঞাপন আনতে হয়। তার বেশিরভাগটাই আসে কর্পোরেট সংস্থা আর সরকারের কাছ থেকে। রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার। এই বিজ্ঞাপন এমনি এমনি আসে না, আপনার সার্কুলেশন আছে বা নেই তার উপরেও খুব একটা নির্ভরশীলও নয়। ছোট্ট ইনফরমেশন, মোদি সরকার প্রতি মাসে ১০০ কোটির কিছু বেশি টাকা খরচ করেছে গত বছরে, কেবল প্রচারের জন্য। এবং বহু সংবাদমাধ্যমের মালিকের অন্য ব্যবসাও আছে, রিলায়েন্সের হাতে দেশের বৃহত্তম সংবাদমাধ্যমের নেটওয়ার্ক, তা আরও বাড়ছে, কিসের জন্য? মানুষের কাছে সত্যি কথা তুলে ধরার জন্য? হরির নাম খাবলা খাবলা।

আরও পড়ুন: এবারের নির্বাচনে গোবলয় থেকে পঞ্জাব হরিয়ানাতে হার-জিত ঠিক করবে কৃষকেরা

সংবাদমাধ্যমের সর্বকনিষ্ঠ যন্ত্রটি হল সাংবাদিক, এক বৃহৎ সংবাদপত্রের কিছুদিন আগেকার সার্কুলার বলছে, আগে বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপন না থাকলে খবর বা ফিচার বা অন্য কিছু। প্রায়োরিটি ক্লিয়ার। গণশক্তির পাতায় মোদি সরকারের বিজ্ঞাপন তো এমনি এমনি থাকে না। কাগজের পলিসি থাকে, থাকে বলেই এই কাগজ এই দলের, ওই কাগজ ওই দলের বা এই কাগজের পলিসি বন্ধ নিয়ে একটা কথাও না লেখার, ওই কাগজের পলিসি অমুক নেতার খবর না ছাপার। থাকে এমন নির্দেশ, সাংবাদিকরা জানেন, আম আদমিও জেনে ফেলেছেন। কাজেই দেশের চতুর্থ স্তম্ভ এখন মোটামুটি ম্যানেজড। চলুন প্রশাসনের দিকে তাকানো যাক। দেশের আইপিএস, আইএএস অফিসারদের খুব কম হলেও একটা অংশ অন্তত শিরদাঁড়া সোজা করে কাজ করতেন। টি এন সেশনের মতো নির্বাচন কমিশনার তো ছিল। বহু অবাধ্য আইপিএস অফিসারের গল্প আমরা জানি। আর আজ, পিএমও থেকে দেশের প্রত্যেকটা দফতর চালানো হয়, কেউ জানে না কার ফোন ট্যাপ করা হয়েছে, প্রতিবাদ তো ছেড়েই দিন সামান্য মতানৈক্যও দেখাতে পারবেন না কোথাও। আইন সভাতে ব্রুট মেজরিটি, প্রশাসন কাঠপুতুলের ভূমিকায়, চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়া খোল করতাল নিয়ে রাজ মহিমার ব্যাখ্যানেই ব্যস্ত। এবং বিচার ব্যবস্থা? সেখানে ক্ষীণ কিছু আশা এখনও বেঁচে। যদিও সেখানের দখলদারি নেওয়া শুরু হয়ে গেছে, তবুও কোথাও যেন একটু ভরসা আছে। আর সেই ভরসার কথাই বলেছেন আমাদের সম্পাদক, বোবা প্রতিবাদহীন এক সময়ে এক মানুষ সুবিচার কার কাছেই বা চাইবে?

এক নতুন কায়দায় প্রচার শুরু হয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে দেশের মানুষ নিজেরাই অবাক হয়ে দেখছেন সংবাদমাধ্যম মুড অফ দ্য নেশন এনে হাজির করছে, মানে দেশের মানুষ চায়টা কী? সেটা মিডিয়া জানাচ্ছে। কেউ জানে না, কার সঙ্গে কথা বলে এই মুড জানা গেল কিন্তু তা আসছে।  ২০১৯, মোদিজি দ্বিতীয়বার জিতে আসলেন, বিজেপি কত শতাংশ ভোট পেয়েছিল? ৩৭ শতাংশ, হ্যাঁ মাত্র ৩৭ শতাংশ। আমাদের দেশের নির্বাচনী পদ্ধতির কাঁথায় আগুন দিয়ে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে, প্রচারের সবটুকু আলো শুষে নেওয়ার পরেও ভোট ওই ৩৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ মোদিজি ক্ষমতায় আসছেন,  জিডিপি ৮ শতাংশ, ২০১৬ – ৮.২৬ শতাংশ, ২০১৭ – ৭.০৪ শতাংশ, ২০১৮ – ৬.১২ শতাংশ, ২০১৯ – ৫.০২ শতাংশ, ২০২০র জিডিপি ৪ শতাংশ ২১-এ ৫.৬ শতাংশ ২২ এ ৫.১ শতাংশ ২৩-এ ৪.৯ শতাংশ কিন্তু এ নাকি এবার উপরে যাবে, হু হু করে উঠবে। দুষ্টু অর্থনীতিবিদরা বলছেন ৪ শতাংশ। জিনিসপত্র অগ্নিমূল্য, পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ছে, টাকার দাম তলানিতে, ডিমনিটাইজেশন আর জিএসটির মারে মিডল, স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রি, এমএসএমই সেক্টরে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, কিন্তু টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মুড অফ দ্য নেশন, দেশের মেজাজ ফুরফুরে। এমনকী শেখর গুপ্তার মতো প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকও প্রশ্ন তুলছেন না, বলছেন না যে এটা কী করে সত্যি হতে পারে? হিন্দি হার্ট ল্যান্ড, বাংলা, ওড়িশা, থেকে লাখে লাখে পরিযায়ী শ্রমিকের নিদারুণ কষ্ট, কৃষকদের আত্মহত্যা, বেকারত্বের জ্বালার সামনে মুড অফ দ্য নেশনে বলা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে ১০০ জনের মধ্যে ৭৭ জনেরই মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দারুণ ভালো কাজ করেছেন।

অর্থনীতি আর নীচে নেমেই চলেছে আর মুড অফ দ্য নেশন মোদিজির পক্ষে উঠছে তো উঠছেই। এসব শুনে, মাফ করবেন, আমার এক ফাজিল বন্ধু বলল মুড অফ দ্য নেশন কি রাঁচির পাগলা গারদের? নাকি মুড অফ দ্য নেশনে জাপানি তেল মাখানো হয়েছে?

আসলে মুড অফ দ্য নেশনের নাম করে দেশের মানুষের সামনে হতাশার এক কালো দেওয়ালকে তুলে ধরতে চায় মোদি মিডিয়া, জানাতে চায় এর কোনও বিকল্প নেই, মোদিকে ফুয়েরার বানাতে চায়, সেই নেতা যিনি ভুল করতে পারেন না, যিনি ভুল করতে জানেন না, সেই নেতা যাঁর নির্দেশে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া চলে, সেই নেতা যিনি হ্যাঁ বললে হ্যাঁ বলতে হয়, না বললে না। পরিণাম সব্বার জানা, গোটা পৃথিবী এত ধ্বংস এত মৃত্যু কখনও দেখেনি, আরএসএস-বিজেপি মোদিজিকে ফুয়েরার বানাতে চায়।

ঠিক তাই মোদিজি থেকেই শুরু হতে হবে দেশের ইতিহাস, যেহেতু আরএসএস বা বিজেপির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা বিশ্বাসঘাতকের, মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার, ইংরেজদের সমর্থন করার, ইংরেজদের খবর দেওয়ার তাই আজ তারা জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে ভোলাতে চায়, তাদের কাছে ১৫ আগস্ট নয় তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ৫ আগস্ট, যে ইতিহাসকে তারা জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের উল্টোদিকে বসাতে চায়, রামমন্দিরের জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের কথা স্মরণ করতে বলেছেন, কঙ্গনা রানাওয়াত এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদি। এটাই সেই বোবা প্রতিবাদহীন সময়, কিন্তু মজা হল মুড অফ দ্য নেশন কখন যে পাল্টে যায়, বুঝতেই পারবেন না, বা বলা যাক আসল মুড অফ দ্য নেশন ঠিক বেরিয়ে আসবে তাকে রামলালা দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না। আর মানুষের মেজাজ? দেখে নিন ছবিটা, মুসোলিনি আর তাঁর প্রেয়সী ঝুলছে, মেরে ক্ষান্ত হয়নি ইটালির জনগণ, তাকে উল্টো করে ঝুলিয়েছে। এবং সবাই জানে তার মাত্র দু’ তিন বছর আগে মুসোলিনিকে দেখলে মানুষ হাত তুলে সেলাম জানাত, জানাতে বাধ্য হত, সেলামটাকেই মুড অফ দ্য নেশন ভেবে নিলে চাপ আছে স্যর। মানুষ এই বোবা প্রতিবাদহীন সময়কে পার করবেই, এই বাঁজা সময়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নতুন সকাল আসবেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | BJP | বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পৌঁছতেই ধু/ন্ধুমা/র কাণ্ড ল' কলেজে
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে সুপ্রিমে CBI তদন্তের আর্জি
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | তদন্তে উঠে এল মনোজিতের অপরাধের তালিকা, জানলে শিউরে উঠবেন
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ইনহেলার কেনার বিল কলকাতা টিভির হাতে, দেখুন EXCLUSIVE ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Dharmatal Bus Stand | ধর্মতলা থেকে এবার উঠে যেতে চলেছে শতাব্দী প্রাচীন বাসস্ট্যান্ড
04:59
Video thumbnail
America | বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও গোপনীয় বো/ম্বা/র বিমানের পাইলট নির্বাচন
05:56
Video thumbnail
Kasba Incident | সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম, দেখুন সরাসরি
09:06
Video thumbnail
Manoj Pant | চাকরিতে মেয়াদ বাড়ল মনোজ পন্থের, দেখুন ভিডিও
05:38
Video thumbnail
Adani | মার্কিন আদালতে আদানিদের বিরুদ্ধে মামলা
04:40

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39